৭ নভেম্বর বিএনপি জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে পালন করে। এদিন অবরোধ থাকবে না বলে আগেই গুঞ্জন ছিল।
Published : 06 Nov 2023, 04:07 PM
নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা, বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ও নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে আবার অবরোধের ডাক দিয়েছে বিএনপি।
আগামী বুধবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে মঙ্গলবার ভোরে চলমান কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর ২৪ ঘণ্টা বিরতি রেখেছে দলটি।
আগের সপ্তাহে তিন দিন এবং চলতি সপ্তাহের প্রথম দুই কর্মদিবসে অবরোধের দ্বিতীয় দিন সোমবার বিকালে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
৭ নভেম্বরকে বিএনপি ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে পালন করে। এদিন অবরোধ থাকবে না বলে আগেই গুঞ্জন ছিল। শেষ পর্যন্ত এই দিনে কর্মসূচি রাখেনি বিএনপি।
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর নভেম্বরের ঘটনাবহুল এই দিনটিতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে আসেন।
সেই থেকে বিএনপি এই দিনটিতে বরাবর নানা আয়োজন রাখে। তারা ক্ষমতায় থাকলে ৭ নভেম্বর সরকারি ছুটির দিন হিসেবেও পালিত হয়।
তবে এবার আন্দোলন এবং প্রতিদিন গ্রেপ্তারের মধ্যে ৭ নভেম্বরের সব কর্মসূচি স্থগিত থাকবে বলে জানান রিজভী।
গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় নয়া পল্টনে জমায়েতের অদূরে কাকরাইল ও বিজয়নগরে পুলিশের সঙ্গে নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের পর সমাবেশ শেষ না করে পরদিন হরতালের ডাক দেয় বিএনপি।
হরতালের দিন সকালে গুলশানের বাসা থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আটক করে পুলিশ। গ্রেপ্তার হন আরও অনেক নেতা-কর্মী।
এর প্রতিবাদে ৩১ অক্টোবর থেকে টানা তিন দিন রাজপথ, রেল পথ ও নৌপথ অবরোধের ডাক দেন রিজভী। সঙ্গে তাদের পুরনো দাবিও তুলে ধরা হয়।
শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটিতে বিরতির পর রোববার ভোর থেকে আবার একই কর্মসূচিতে ফেরে তারা।
বিএনপির পাশাপাশি যুগপৎ আন্দোলনে থাকা অন্যান্য দল এবং দলটির এক যুগের শরিক জামায়াতে ইসলামীও একই কর্মসূচির ঘোষণা দেয়।
চলমান কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে খিলগাঁওয়ের তালতলা পল্লীমা সংসদের কাছে জনা ত্রিশেক নেতাকর্মী নিয়ে মিছিলে নামেন রিজভী। তার আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি বক্তব্যও দেন।
রিজভী বলেন, “সারাদেশে নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। এত নিপীড়ন-নির্যাতনের পরেও বিএনপির অবরোধ কর্মসূচিতে তাদের উপস্থিতি দেখে সরকার দিশেহারা হয়ে পড়েছে, সরকারের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, নেতারা আবোল তাবোল কথা বলছেন।”
মিছিল শেষে আবার অজ্ঞাত স্থানে গিয়ে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে কর্মসূচির ডাক দেন রিজভী।
এই অবরোধ চলার মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান ও বিমান বাহিনীর সাবেক প্রধান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব মজিবুর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, বিলকিস জাহান শিরিনসহ বহু নেতা।
তাদের সবাইকে গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের দিন প্রধান বিচারপতির বাসভবন, রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
অবরোধের প্রতিটি দিনও ঘটেছে নানা সহিংস ঘটনা। প্রতিদিনই আগুন দেওয়া হচ্ছে।
তবে রিজভীর ভাষ্য, “এই কর্মসূচি হবে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি।”
চলমান কর্মসূচি ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ চালিয়ে যাওয়ায় বিএনপি, সমমনা জোট ও দলের নেতাকর্মীদেরকে তারেক রহমান অভিনন্দন জানিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
এদিন বিএনপির আগে একই কর্মসূচি ঘোষণা করে তাদের সঙ্গে আন্দোলনে থাকা এলডিপি।
সন্ধ্যায় জামায়াতে ইসলামীর তরফেও বুধবার থেকে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।