‘ন্যাড়া বার বার বেলতলা যায় না’, ভোট নিয়ে ফখরুল

আওয়ামী লীগ ‘পরিকল্পিতভাবে’ দেশে সন্ত্রাস সৃষ্টি করছে বলে বিএনপি মহাসচিবের অভিযোগ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 May 2023, 12:19 PM
Updated : 22 May 2023, 12:19 PM

দলীয় সরকারের অধীনে ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিলে আর সেপথে না যাওয়ার কারণ হিসেবে ‘ন্যাড়ার বেলতলায়’ যাওয়ার প্রবাদের কথা তুলে ধরলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেছেন, “ন্যাড়া বার বার বেল তলা যায় না। সুতরাং এবার বাংলাদেশের মানুষ এই ধরনের কোনো পাতানো নির্বাচন, দিনের ভোট রাতে করার নির্বাচন … এ রকম নির্বাচনে বাংলাদেশের মানুষ পা দেবে না।”

সোমবার ঢাকায় বিএনপি সমর্থক প্রকৌশলীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (অ্যাব) এর উদ্যোগে ‘দেশের জ্বালানি খাতে অমানিশা: লুটপাট আর অরাজকতার চালচিত্র’ শীর্ষক এই গোলটেবিল আলোচনায় বক্তব্য রাখছিলেন বিএনপি মহাসচিব।

ফখরুল বলেন, “গোটা বাংলাদেশকে লুট করে শেষ করে দিয়েছে। আরও পাঁচ বছর লুট করতে চায় এবং তারা ভোট চাইতে শুরু করে দিয়েছে।

“আর বলছে, নির্বাচন তো… নির্বাচনে আসেন। হাত-পা বাঁধা, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নাই, মুখ বন্ধ। ইতিমধ্যে যে খেলা শুরু করে দিয়েছে, নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করছে, অত্যাচার-নির্যাতন করছে, উৎপীড়ন করছে, মামলা-মোকাদ্দমাকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে।”

তিনি বলেন, ‘‘আমরা মারামারি করতে চাই না, আমরা সংঘাতও চাই না। আমাদের দাবি মেনে নাও। নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে নাও, সুন্দরভাবে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হবে।”

তত্ত্বাধায়ক সরকার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না বলে ক্ষমতাসীনদের আবার হুঁশিয়ার করেন বিএনপি নেতা।

২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর উচ্চ আদালতের একটি রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হয়। এরপর দলীয় সরকারের অধীনে ভোটের ব্যবস্থা ফিরিয়ে এনে সংবিধান সংশোধন করে আওয়ামী লীগ সরকার।

এর প্রতিবাদে ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করে আন্দোলনে যায় বিএনপি। তবে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে দলীয় সরকারের অধীনেই ভোটে যায়। সেই নির্বাচনে ‘আগের রাতে ভোট’ হয়ে যাওয়ার অভিযোগ এনে আবার পুরনো দাবিতে ফিরে গেছে বিরোধী দলটি।

‘আগুন নিয়ে আওয়ামী লীগের বক্তব্য পরিকল্পিত’

মির্জা ফখরুল বলেন, “গত কিছু দিন ধরে সরকারের মন্ত্রী-নেতারা বার বার করে একটা কথা বলছেন, ‘অগ্নি সন্ত্রাস হবে’, ‘আবার আগুন নিয়ে খেলবে বিএনপি’। এটা কিন্তু অত্যন্ত পরিকল্পিত একটি বক্তব্য।

“তারা (ক্ষমতাসীনরা) এটা করবে। সে জন্যই তারা কথাগুলো বলতে শুরু করেছে। কিছুটা সফলও হয়ে যাচ্ছে। আমি পত্রিকায় দেখছি যে, বিভিন্ন দূতাবাস থেকে সতর্ক করা হচ্ছে তাদের নাগরিকদেরকে যে, নির্বাচন ঘনিয়ে আসছে, এখন হতে সংঘাত হতে পারে। সুতরাং তোমরা একটু সাবধানে থাকবে।

“সংঘাত সৃষ্টি করছে আওয়ামী লীগ, সংঘাতের ভয় দেখাচ্ছে আওয়ামী লীগ, হুমকি দিচ্ছে আওয়ামী লীগ এবং তারা সন্ত্রাস করছে।”

বিএনপি নেতা বলেন, “খুলনাতে যা করেছে, রাজবাড়ীতে যা করেছে, নেত্রকোনায় যা করেছে, পটুয়াখালীতে যা করেছে, এর কারণটা হচ্ছে একটাই। তারা দেখে যে, এই প্রতিবাদকে বন্ধ করতে হলে সন্ত্রাসই একমাত্র পথ। এই সন্ত্রাস সৃষ্টি করে জনগনের যে দাবি সেই দাবিকে তারা দাবিয়ে দিতে চায়।”

‘উনি স্বমূর্তি ধারণ করেছেন’

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কিছুদিন ‘একটু ভদ্রলোকের মত’ কথা বললেও এখন ‘স্বমূর্তি’ ধারণ করেছেন বলেও মন্তব্য করেন ফখরুল।

তিনি বলেন, “এখন আবার বলতে শুরু করেছেন- প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে, প্রতিরোধ করা হবে। আমি আমার দাবির কথা বলব, রাস্তায় বলব, মিটিং-সভা করে বলব যে, আমি গণতন্ত্র চাই। আমাদের প্রতিরোধ করা হবে।

“প্রত্যেকদিন শান্তি সমাবেশ করছিলেন তারা। এর সমালোচনা হওয়াতে এখন বলছেন প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। প্রতিরোধ গড়ে তোলার তো চেষ্টা করছেন।”

‘গত কয়েকবছর ধরে তো এই পুলিশ দিয়ে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছেন’- এই মন্তব্য করে তিনি বলেন, “রাতের বেলা তুলে নিয়ে গেছে নেতাদেরকে, বাড়ি বাড়ি হামলা করেছে, অত্যাচার করেছে, নির্যাতন করেছে।

“সবশেষ ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট দিয়ে সাংবাদিকদের মুখও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ঝানু-ঝানু, বাঘা-বাধা সব সম্পাদকের নামেও মিথ্যা মামলা দিয়েছ… তারা কিন্তু ভীত সন্ত্রস্ত।”

অ্যাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম রিজুর সভাপতিত্বে ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব কে এস আসাদুজ্জামান চুন্নুর সঞ্চালনায় আলোচনায় মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন সংগঠনের মহাসচিব প্রকৌশলী হাছিন আহমেদ।

এতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের এ জেড এম জাহিদ হোসেন, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের ফরহাদ হালিম ডোনার, ইউনিভারসিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাদা দলের লুৎফর রহমান, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের সেলিম ভুঁইয়া, সাংবাদিক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, কৃষিবিদ অ্যাসোসিয়েশনের শামীমুর রহমান শামীম, অ্যাবের আশরাফউদ্দিন বকুল, একেএম জহিরুল ইসলাম, মোস্তফা-ই জামান সেলিম, এসএম আবদুর রাজ্জাক, মাহবুব আলম, শামীম রাব্বী সঞ্জয়ও এ সময় বক্তব্য রাখেন।