দলটির নির্বাচনী প্রতীক হবে সোনালি আঁশ।
Published : 09 Feb 2023, 04:37 PM
আগামী বছর নির্বাচনে নতুন দল নিয়ে অংশগ্রহণের পথ খুলল বিএনপির এক সময়ের নেতা নাজমুল হুদার।
তার দলের নাম হচ্ছে ‘তৃণমূল বিএনপি’; আর দলটির নির্বাচনী প্রতীক হবে ‘সোনালি আঁশ’।
সর্বোচ্চ আদালতের আদেশে তৃণমূল বিএনপিকে নিবন্ধন দেওয়া হচ্ছে বলে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর।
তিনি বলেন, “অ্যাপিলেট ডিভিশন থেকে তাদের (তৃণমূল বিএনপি) বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার জন্য।
“যেহেতু সর্বোচ্চ আদালত থেকে রেজিস্ট্রেশন দেওয়ার জন্য আমাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেহেতু আমরা দিতে বাধ্য। এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।”
ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বিএনপি গঠনের সময়ই দলটিতে যুক্ত হন। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান দলের নীতি-নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটিতে নিয়েছিলেন হুদাকে।
খালেদা জিয়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে রেখেছিলেন হুদাকে। ১৯৯১ সালে ও ২০০১ সালে খালেদা জিয়ার সরকারে মন্ত্রী ছিলেন। তবে মাঝে একবার দল থেকে বহিষ্কৃত হয়ে পুনরায় ফিরেছিলেন তিনি।
তবে ২০১২ সালে বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক চুকেবুকে বিএনএফ নামে নতুন দল গঠন করেন হুদা। পরে সেই দল থেকে তাকেই বহিষ্কার করে ২০১৪ সালে এমপি হন দলটির প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান সমন্বয়ক আবুল কালাম আজাদ।
এরপর বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (বিএনএ) এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টি (বিএমপি) নামে নামে দুটি নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জোটে ভেড়ার চেষ্টা করেন হুদা। তাতে সফল না হওয়ার পর গঠন করেন ‘তৃণমূল বিএনপি’ নামে নতুন দল।
হুদার তৃণমূল বিএনপিকে নিবন্ধন দিতে হাই কোর্টের রায়
২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ইসির নিবন্ধন পেতে আবেদন করে তৃণমূল বিএনপি। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিবন্ধনের আবেদন না করা, সরকার নির্ধারিত ফির চালান জমা না দেওয়া এবং নিবন্ধন দেওয়ার মতো তথ্য না থাকার কারণ দেখিয়ে তাদের আবেদন প্রত্যাখ্যান করে ইসি।
নিবন্ধন না মেলায় আদালতে যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। সেখানে পক্ষে আদেশ পেয়ে এখন নিবন্ধন পেতে যাচ্ছে তার দলটি।
তৃণমূল বিএনপিকে দ্রুতই নিবন্ধন দেওয়া হবে জানিয়ে নির্বাচন কমিশনার আলমগীর বলেন, “দেরি করার তো সুযোগ নেই। আদালত নির্দেশনা দেওয়ার পর তো আর মাঠে খতিয়ে দেখার সুযোগ নেই। কেননা আদালতের নির্দেশ আমরা পালন করতে বাধ্য।”
আদালতই দলটির নির্বাচনী প্রতীক ‘সোনালি আঁশ’ ঠিক করে দিয়েছে বলে জানান তিনি।
নিবন্ধিত দল হিসেবে গেজেট প্রকাশের পরই তা ইসির তালিকাভুক্ত হবে।
গণসংহতি ও ইনসানিয়াত বিপ্লব নামে দুটি দলও নিবন্ধন পেতে আদালতে গেছে। তাদের বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ রয়েছে কি না, তা দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান আলমগীর।
নতুন দলের আবেদন যাচাই চলছে
আগামী বছর অনুষ্ঠেয় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে প্রায় একশটি দল নিবন্ধনের আবেদন করেছে। এগুলো যাচাই বাছাই প্রক্রিয়া চলছে।
নতুন দল নিবন্ধনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আলমগীর জানান, ৯৩টি নতুন দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিল। পাঁচটি দল নির্ধারিত প্রক্রিয়ায় আবেদন না করায় তাদের আবেদন বাতিল করা হয়েছে। দুটি দল আবেদন তুলে নিয়েছে।
তিনি বলেন, “প্রাথমিক যাচাইয়ে আবেদনপত্রে যে তথ্য দেওয়া হয়েছে বলে অনেক দল উল্লেখ করেছে, তা জমা দেয়নি। আমরা সেগুলো দেওয়ার জন্য বলেছি। তারা দিয়েছে।
“আগামী রোববার যাচাই কমিটি ফের সেগুলো নিয়ে বিকাল ৩টায় বসবে। এরপর মাঠ পর্যায়ে দলগুলো কার্যালয়, কমিটি আছে কি না, এসব খতিয়ে দেখা হবে।”
বর্তমানে ইসিতে নিবন্ধিত দল ৩৯টি। আইন অনুযায়ী, সংসদ নির্বাচনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোই দলীয় প্রতীকে অংশ নিতে পারে। নইলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ অবশ্য রয়েছে।
বিদ্যমান সীমানা পুনর্নির্ধারণ
বিদ্যমান সীমানাতেই আগামী সংসদ নির্বাচন করার প্রস্তাবের বিষয়ে ব্যাখ্যাও এদিন সাংবাদিকদের দেন আলমগীর।
তিনি বলেন, গত পাঁচ বছর স্থানীয় নেতৃবৃন্দ ও জনগণ বর্তমান সীমানা ধরেই কাজ করেছেন।
“কাজেই ভাবলাম যেটা আছে, সেটা থাকুক। সেটার ওপর আবেদন আহ্বান করলে তখন দেখা যাবে। তাদের যদি আপত্তি না থাকে, তাহলে তো আমাদের কিছু করার নেই। এজন্য আমরা কোথাও হাত দিচ্ছি না। যেটা এখন আছে সেটাই খসড়া হিসেবে প্রকাশ করব।”
আলমগীর বলেন, “এজন্য আমরা কোনো চাপে নেই। আমরা কোনো উত্তেজনা সৃষ্টি করতে চাই না।
“নীতিমালার পাশাপাশি কারও দাবি-আপত্তি থাকলে দুটোই আমলে নেওয়া হবে। এরপর শুনানিতে যেটা যৌক্তিক হবে সেটাই সিদ্ধান্ত হবে।”