“আমাদের এক দফা এক দাবি সরকারের পদত্যাগ, দফা এক শেখ হাসিনার পদত্যাগ।”
Published : 07 Nov 2022, 07:05 PM
‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার’ আন্দোলনে আরও ত্যাগ স্বীকারের প্রস্তুতি নিতে দলীয় নেতা-কর্মীদের বললেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সোমবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমরা ইতিমধ্যে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি, আমাদের অনেকেই গ্রেপ্তার হচ্ছেন, জেলে যাচ্ছেন, নিহত হচ্ছেন। আমাদেরকে আরও ত্যাগ স্বীকার করতে হবে।”
‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ উপলক্ষে সোমবার বিকালে ঢাকার নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির উন্মুক্ত আলোচনা সভায় একথা বলেন ফখরুল।
তিনি বলেন, “আমাদের এক দফা এক দাবি সরকারের পদত্যাগ, দফা এক শেখ হাসিনার পদত্যাগ। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে এবং নতুন একটা নির্বাচন কমিশন গঠন করে তার মাধ্যমে একটা নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। সেই নির্বাচনে জনগনের একটা সরকার গঠন হবে।
“গণতন্ত্রকে পেতে হলে, স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে হলে, আমাদের অধিকারগুলো ফিরে পেতে হলে এই ত্যাগ স্বীকার করেই এর মধ্য দিয়ে আমাদেরকে সামনের দিকে আমাদের পতাকাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে হবে। ৭ নভেম্বরের পতাকা, আমাদের স্বাধীনতার পতাকাকে রক্ষা করতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।”
৭ নভেম্বরের তাৎপর্যপূর্ণ তুলে ধরে ফখরুল বলেন, “এই দিনটিতে দ্বিতীয়বার আমরা আমাদের স্বাধীনতাকে সুসংহত করেছিলাম। ৭ নভেম্বর সিপাহী-জনতার অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে বন্দিদশা থেকে বের করে নিয়ে এসে তারা এক নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করা হয়েছিল এবং সেই সঙ্গে এক নতুন অধ্যায় সৃষ্টি হয়েছিল; সেটা ছিলো সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণের, একটি সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ তৈরি করবার।
“আমাদের নেতা জিয়াউর রহমান সেই কাজটি মাত্র চার বছরের মধ্যে তিনি সমস্ত বিভক্ত বাংলাদেশকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন, তিনি বদ্ধ অর্থনীতি থেকে মুক্ত অর্থনীতি নিয়ে এসেছিলেন। তিনি একদলীয় শাসনব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র নিয়ে এসেছিলেন এবং দেশে তিনি বাকস্বাধীনতা, কথা বলার স্বাধীনতা, সংগঠনের স্বাধীনতা, মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি এই অল্প সময়ের মধ্যে সমগ্রজাতিকে নতুন স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। সেই স্বপ্নটা হচ্ছে একটা জাতি হিসেবে তৈরি হওয়ার স্বপ্ন।”
১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান সপরিবারের নিহত হওয়ার পর অস্থির পরিস্থিতিতে ৭ নভেম্বর বাংলাদেশের ইতিহাসে বাঁক বদলের দিন হিসেবেই স্থান নিয়ে আছে।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর খন্দকার মোশতাক আহমেদের সরকারে সেনাপ্রধানের দায়িত্বে আসেন জিয়াউর রহমান। ৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীতে অভ্যুত্থান হয়, তাতে জিয়া হন গৃহবন্দি। ৭ নভেম্বর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সঙ্গে যুক্ত কর্নেল আবু তাহেরের নেতৃত্বে পাল্টা অভ্যুত্থানে আটকাবস্থা থেকে মুক্ত হন জিয়া। এর মধ্য দিয়ে তিনি ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন।
৭ নভেম্বরকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিতে পালন করে। বিএনপি দিনটিকে ‘জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস’ হিসেবে পালন করলেও আওয়ামী লীগ ‘মুক্তিযোদ্ধা সৈনিক হত্যা দিবস’ এবং জাসদ ‘সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান দিবস’ হিসেবে পালন করে।
দিবসটি উপলক্ষে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কার্যালয়ের সামনে অস্থায়ী মঞ্চ নির্মাণ করা হয়। সড়কে বিছানো মাদুরে বসে নেতা-কর্মীরা আলোচকদের বক্তব্য শুনে। নেতা-কর্মীদের অনেকের হাতে ছিল জাতীয় পতাকা।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “৭ নভেম্বরের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন, অর্থনৈতিক মুক্তি দিয়েছেন, দেশকে বিদেশে আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানের স্থানে নিয়েছেন।
“এই দেশকে আধুনিক ও উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য তিনি বিপ্লব সাধন করেছেন। তার পথ ধরে আজকে যে অর্থনৈতিক মুক্তি দিয়েছেন, আমাদের জাতি সত্তার পরিচয় দিয়েছেন সেই পথ ধরে বাংলাদেশ চলছে।”
তিনি বলেন, “কিন্তু আজকে বর্তমানে আবার সেই বর্তমানে যারা অলিখিত বাকশাল চালাচ্ছে, বাংলাদেশে ঠিক একই অবস্থার সৃষ্টি করেছে। তাই জনগণ আজকে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে এবং এই দিন আজকে গুরুত্বপূর্ণ।
“আসুন ৭ নভেম্বরের সেই স্পিরিটকে সামনে নিয়ে আমরা আজকে যারা অলিখিত বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছে, তাদেরকে হটিয়ে এদেশে গণতন্ত্র পুনরূদ্ধার করি।”
বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি ও সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলিমের সঞ্চালনায় সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম।