“মানুষের টাকা চুরি করার আরেকটা ফন্দি বাইর করছে। ওই টাকা চুরি করে ওরা নির্বাচন করতে চায়। মানুষ এবার তাদেরকে দেবে না”, বলেন বিএনপি নেতা।
Published : 18 Aug 2023, 06:50 PM
সবার জন্য পেনশনের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তাকে ‘সরকারের নির্বাচনী তহবিল তৈরির ফন্দি’ বলে সমালোচনা করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ে শুক্রবার রাজধানীর দয়াগঞ্জে বিএনপির মিছিলপূর্ব সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন।
বিএনপি নেতা বলেন, “আওয়ামী লীগ লুট করে শেষ করে দিয়েছে বাংলাদেশকে, ফোকলা বানিয়ে দিয়েছে,… কিচ্ছু নাই। আবার নতুন আরেকখান কায়দা বাইর করছে.. দেখছেন। কী বলে…, পেনশন দেবে, পেনশন স্কিম।
“মানুষের টাকা চুরি করার আরেকটা ফন্দি বাইর করছে। ওই টাকা চুরি করে ওরা নির্বাচন করতে চায়। মানুষ এবার তাদেরকে দেবে না।”
বেশ কয়েক বছরের পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির পর আগের দিনই দেশে চালু হয় সর্বজনীন পেনশন। এই স্কিমে ৬০ বছর পর্যন্ত মানুষ টাকা জমা করবে এবং এরপর থেকে আজীবন মাসে মাসে অর্থ পাবে।
১৮ বছর থেকে শুরু করে ৫০ বছর বয়সে এসেও টাকা জমানো শুরু করা যাবে। তবে যত বেশি বছর টাকা জমা হবে, সুবিধা হবে তত বেশি।
মোট চারটি স্কিম ঘোষণা করা হয়েছে, যার মধ্যে প্রবাসীদের জন্য আছে প্রবাস, বেসরকারি চাকরিজীবীদের জন্য প্রগতি, অনানুষ্ঠানিক খাতের কর্মীদের জন্য আনা হয়েছে সুরক্ষা আর নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য আছে সমতা।
সমতা স্কিমে মাসে জমানো যাবে এক হাজার টাকা করে। এর মধ্যে ৫০০ টাকা দেবে সরকার।
সুরক্ষা স্কিমে এক হাজার, দুই হাজার, তিন হাজার ও পাঁচ হাজার টাকা করে টাকা জমানো যাবে।
প্রগতিতে জমানো যাবে দুই, তিন অথবা পাঁচ হাজার টাকা করে। প্রবাসে পাঁচ হাজার, সাড়ে সাত হাজার এবং ১০ হাজার টাকার স্কিম আছে।
১৮ বছর বয়স থেকে কেউ মাসে দুই হাজার টাকা করে ৪২ বছর জমা করলে পেনশন পাবেন প্রায় ৬৯ হাজার টাকা। তবে টাকা জমানোর বছর কমলে পেনশনও কম আসবে।
বিএনপির মিছিলে মির্জা ফখরুল এই পেনশন স্কিম ছাড়াও কথা বলেন তাদের দাবি সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকার ব্যবস্থা নিয়ে।
গত ১২ জুলাই ‘এক দফা’র আন্দোলন ঘোষণার পর এটি বিএনপির তৃতীয় কর্মসূচি। এরপর গত ২৮ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশ ও ২৯ জুলাই ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে তারা। এরপর ১১ অগাস্ট ঢাকায় হয় মিছিল।
ঢাকায় দলটির দুই সাংগঠনিক শাখা ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণের উদ্যোগে বের হয় দুটি মিছিল।
ঢাকা উত্তর বিএনপি আয়োজিত মিছিলটি গুলশান-২ এর ডিসিসি মার্কেটের কাছ থেকে। গুলশান-১ হয়ে মহাখালীর ওয়ারলেস, তিতুমীর কলেজ সড়ক দিয়ে মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে শেষ হয়।
দক্ষিণের মিছিলটি পুরান ঢাকার দয়াগঞ্জ থেকে শুরু হয়ে সায়েদাবাদ ব্রিজ, ধলপুর, গোলাপবাগ, মুগদা বিশ্বরোড, খিলগাঁও রেলক্রসিং, শাহজাহানপুর, ফকিরেরপুল মোড় হয়ে নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়।
বিএনপির সঙ্গে যেসব দল যুগপৎ কর্মসূচি পালন করছে, তারাও আলাদা মিছিল বের করে, যেগুলো হয় মূলত জাতীয় প্রেসক্লাব ও পল্টন এলাকায়। রামপুরা এলাকাতেও ছিল একটি মিছিল।
রাজধানীর পাশাপাশি সব বিভাগীয় শহরেও প্রথমবারের মতো ‘এক দফা’ আন্দোলনের মিছিল বের করা হয়।
‘ভালোয় ভালোয় শান্তিপূর্ণভাবে বিদায় হন’
তত্ত্বাবধায়কের দাবি মেনে নিতে এই পরামর্শ দিয়ে ফখরুল বলেন, “এই দাবি ১৮ কোটি মানুষের দাবি যে ভালোয় ভালোয় শান্তিপূর্ণভাবে বিদায় হন। অন্যথায় এদেশের মানুষ জানে স্বৈরাচারি ফ্যাসিবাদী ডিক্টেটরকে কীভাবে সরাতে হয়।
“৫২ সালে সরিয়েছে, ৬৯ সালে সরিয়েছে, ৭১ সালে সরিয়েছে পাকিস্তান হানাদার বাহিনীকে, ৯০ সালে সরিয়েছে স্বৈরাচারকে, এবার আপনার পালা।
“তাই এখনো বলছি, অবিলম্বে পদত্যাগ করুন, জনগণের দাবি মেনে নিন। অন্যথায় জনগণ উত্তাল আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তরঙ্গের পর তরঙ্গ তুলে আপনাকে সুনামির মতো নিশ্চিহ্ন করে দেবে।”
‘ভারত-বঙ্গোসাগর বলে কাজ হবে না’
যুক্তরাষ্ট্রকে জড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৬ অগাস্ট যে বক্তব্য রেখেছেন, সেটি নিয়েও কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।
শেখ হাসিনা বলেছিলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যেসব কথা বলছে, সেগুলো তাদের মূল উদ্দেশ্য নয়। তারা চায় বঙ্গোপসাগরের নিয়ন্ত্রণ, যাতে করে আশেপাশের দেশগুলোকে তারা কব্জা করতে পারে।
ফখরুল বলেন, “এখন নিয়ে এসেছেন কী? ভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগর। আরে ভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগর বললে তো লাভ হবে না। কোনো দিকে পথ নাই। উত্তরে উত্তঙ্গ পর্বতমালা আর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। কোন দিকে যাবে তুমি? কোনো দিকে পালাবার পথ নাই।”
‘ভয়ে’ প্রধানমন্ত্রীর ‘মুখ শুকিয়ে গেছে’ বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি নেতা। তিনি বলেন, “টেলিভিশনে দেখবেন এখন আগের মতো হাসি নাই। আর চকচকে কাপড় এখন কম পরে। ঠিক নাই, আবার যাদের যাদের বিদেশে বাড়িঘর তৈরি করছিল, ওদেরকে কেমন করে বাঁচাবে তার চেষ্টা করে।”
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি দেওয়ার কথা উল্লেখ করে বিএনপি নেতা বলেন, “এখন সেখানে বলেছে যে, যারা অবৈধ অর্থ উপার্জন করেছে, যারা যারা সুষ্ঠু নির্বাচনে ভোট দিতে বাধা দেবে, তাদের বিরুদ্ধে ভিসানীতি প্রয়োগ করা হবে।
“এই যে আমাদের পুলিশ ভাইয়েরা কথায় কথায় রাতের অন্ধকারে আমাদের ছেলেদেরকে গ্রেপ্তার করেন, আপনাদের ৯ জন বড় বড় অফিসার তারা এখন আর আমেরিকা যেতে পারে না। তারা যে সহায়-সম্পদ তৈরি করেছিল বিদেশে, সেগুলোর কী হবে তার জন্য রাতে ঘুম হয় না।”
ফখরুল বলেন, “অবস্থা এখন আরো খারাপ। আমেরিকান মানুষেরা, বিভিন্ন সংস্থা, মানবাধিকার সংস্থা, তারা এখন তাদের সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে বলতে শুরু করেছে যে, ‘বাংলাদেশের ওপরে একটা শুনানি হোক।’
“একটা লং ড্রাইভ কমিশন আছে। সেখানে বলেছে যে, ‘বাংলাদেশে এখন বিরোধী দলগুলোর উপরে অত্যাচার হচ্ছে, নির্যাতন হচ্ছে, গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, হত্যা করা হচ্ছে এবং সুষ্ঠু নির্বাচন এই অবৈধ সরকার বাধা প্রদান করছে। তাই এদেরকে আবার নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হোক। এত সোজা না।”
‘পানি পড়ায় কাজ হবে না’
ঢাকা উত্তরের মিছিল পূর্ব সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “শুনলাম পাশের দেশের কিছু কর্মকর্তা নেপালে গেছে পানি পড়া আনতে। এই পানি পড়া দিয়ে কাজ হবে না। এই সরকারকে সরে যেতে হবে।
“আমাদের গ্রেপ্তার করে, মামলা দিয়ে, হয়রানি করে আন্দোলন থেকে দূরে রাখা যাবে না। আমাদের আর ভয় নাই, দেশের মানুষ গুম-হত্যাকে ভয় পায় না।”
উত্তরের কর্মসূচিতে কমিটির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান, নজরুল ইসলাম খান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা আবুল খায়ের ভুঁইয়া, কামরুল ইসলাম, আতাউর রহমান ঢালী, মজিবুর রহমান সারোয়ার, রাশিদুজ্জামান মিল্লাত, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, নাজিম উদ্দিন আলম, এবিএম মোশাররফ হোসেন, তাবিথ আউয়াল, আামিনুল হক উপস্থিত ছিলেন।
দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্ব ও ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের সঞ্চালনায় সেখানকার সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীও বক্তব্য রাখেন।
মিছিলে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, জয়নুল আবেদীন, মনিরুল হক চৌধুরী, জয়নাল আবেদীন, আসাদুজ্জামান রিপন, ফজলুল হক মিলন, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন, শিরিন সুলতানা, নাসির উদ্দিন অসীম, আব্দুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, রাকিবুল ইসলাম বকুল, যুব দলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা ছিলেন।
আরও পড়ুন-
সর্বজনীন পেনশনে নিবন্ধন যেভাবে
৪ ধরনের পেনশন স্কিম, যেভাবে যুক্ত হওয়া যাবে