জিয়াকে জড়িয়ে ৩ সেনা কর্মকর্তা হত্যা মামলা রাজনৈতিক ‘ষড়যন্ত্র’: ফখরুল

বিএনপি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সরকারের পতন ঘটিয়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেবে বলেও আশা তার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 May 2023, 11:59 AM
Updated : 14 May 2023, 11:59 AM

পঁচাত্তরের নভেম্বরে তিন মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তা ‘হত্যা’র ঘটনায় জিয়াউর রহমানকে জড়িয়ে মামলা দায়েরের ঘটনা সরকারের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের আন্দোলন থেকে দেশের মানুষের মনোযোগ অন্যদিকে সরাতে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে’ একটি মিথ্যাকে চার যুগ পর তুলে আনা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

রোববার ঢাকার গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।

তিনি বলেন, “সেই উদ্দেশ্যটা একটাই যে, জনগণ যখন গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাবার জন্য আন্দোলন শুরু করেছে, যখন মানুষ রাস্তায় বেরুনো শুরু করেছে, যখন জাতীয়-আন্তর্জাতিকভাবে প্রবল চাপ সৃষ্টি হয়েছে সরকারের উপরে যে, একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেওয়ার জন্য।

‘‘সেই সময়ে এই ধরনের একটি…৪৮ বছর আগের বিষয় নিয়ে সম্পূর্ণ মিথ্যা কতগুলো বিষয়কে তুলে ধরে জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে ওদের (সরকার) সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। এটা তারই অংশ বিশেষ।”

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর খন্দকার মোশতাক আহমেদ ক্ষমতায় বসলেও চলছিল অস্থিরতা। এর মধ্যেই ৩ নভেম্বর সেনা কর্মকর্তা খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে অভ্যুত্থান হয়, গৃহবন্দি করা হয় সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানকে।

৭ নভেম্বর পাল্টা অভ্যুত্থান হয় জাসদ নেতা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু তাহেরের নেতৃত্বে। তখন মুক্ত হন জিয়া; নিহত হন মুক্তিযুদ্ধের দুই সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ বীর উত্তম ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল এ টি এম হায়দার বীর উত্তম এবং সাব সেক্টর কমান্ডার কর্নেল নাজমুল হুদা বীর বিক্রম।

ওই ঘটনার ৪৮ বছর পর গত ১০ মে ঢাকার শেরে বাংলা নগর থানায় মামলা দায়ের করেছেন কর্নেল নাজমুল হুদার মেয়ে সংসদ সদস্য নাহিদ ইজাহার খান। মামলার এজাহারে তিনি বলেছেন, সেই সময়ের সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমান ও জাসদ নেতা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবু তাহেরের নির্দেশে ২০-২৫ জন সেনা কর্মকর্তা ও সৈনিকের একটি দল নাজমুল হুদাসহ তিন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে।

Also Read: খালেদ মোশাররফসহ তিন মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তা হত্যায় ৪৮ বছর পর মামলা

Also Read: কারা কেন সেই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল, সত্য বেরিয়ে আসুক: কর্নেল নাজমুল হুদার মেয়ে

ওই ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে শুধু ১০ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সাবেক মেজর আব্দুল জলিল জীবিত আছেন জানিয়ে তাকেই মামলার এজাহারে আসামি করা হয়েছে।

এ মামলা দায়ের করায় সরকার ও সংসদ সদস্য নাজিদ ইজাহারের সমালোচনা করে ফখরুলের অভিযোগ, ‘‘অত্যন্ত রূঢ় সত্যি হচ্ছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকারের সুবিধাভোগী নিশিরাতের নির্বাচনের বিনাভোটের গঠিত সংসদের একজন সদস্য নাহিদ ইজহার খান সম্ভবত তার নিজের মায়ের লেখা বইটাও পড়ে দেখেননি। যেখানে তার মা নীলুফার হুদা তার লেখা ‘কর্ণেল হুদা ও আমার যুদ্ধ’ গ্রন্থে স্পষ্টভাবেই লিখে গেছেন যে, কর্ণেল হুদাকে হত্যার সময় কী পরিস্থিতি ছিল। সেখানে উপস্থিত মানুষের জবানবন্দিই প্রমাণ দেয় সেদিন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কর্নেল নওয়াজিশকে নির্দেশ দিয়েছিলেন খালেদা মোশাররফ, কর্নেল নাজমুল হুদা এবং মেজর এটিএম হায়দারকে রক্ষা করার।”

এটিকে ‘ইতিহাসের নির্মম’ পরিহাস আখ্যা দিয়ে ফখরুল বলেন, “নিজের পিতার হত্যার হুকুমের আসামি করেছেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে যিনি তার পিতাকে বাঁচানোর জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন।”

এ মামলার পেছনে সরকারের সুদূরপ্রসারী ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ দেখছেন অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘‘বস্তুত নাহিদ ইজহার খান শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে তার পিতার হুকুমদাতা হিসেবে মামলা দায়ের করেছেন। বর্তমান ফ্যাসিস্ট আওয়ামী গোষ্ঠীর একজন ক্রীড়াণক হিসেবে মাত্র।”

‘ষড়যন্ত্র আরও হবে’

সরকারের তরফ থেকে আগামীতেও এ ধরনের ষড়যন্ত্র চলমান থাকবে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, “বিশেষ করে সরকার পতনের সময়কাল যত এগিয়ে আসবে শহীদ জিয়াউর রহমান, বেগম খালেদা জিয়া ও দেশনায়েক তারেক রহমানসহ বিএনপির বিরুদ্ধে এই ধরনের ষড়যন্ত্রের মাত্রা আরও বাড়বে।”

বিএনপি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সরকারের পতন ঘটিয়ে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে দেবে বলেও আশা তার।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সহযোগিতার বিষয়টি ‘দলীয়করণ’ না করতে সরকারের প্রতি দাবি জানান।

একই সঙ্গে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত  জনগণের পাশে থাকতে বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান রেখেছেন মির্জা ফখরুল।