দ্বাদশ জাতীয় সংসদের অধিবেশন শুরুর দুদিন আগে নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করে এই নাটকীয়তার জন্ম দিলেন রওশন।
Published : 28 Jan 2024, 01:06 PM
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও মহাসচিব মজিবুল হক চন্নুকে ‘অব্যাহতি’ দিয়ে নিজেই দলের হাল ধরার ঘোষণা দিয়েছেন দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক বেগম রওশন এরশাদ।
রোববার গুলশানে নিজের বাসায় দলের ‘ক্ষুব্ধ ও বঞ্চিত’ নেতা-কর্মীদের নিয়ে মতবিনিময় সভা করে এই ঘোষণা দেন জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা এইচ এম এরশাদের স্ত্রী।
উপস্থিত নেতাকর্মীদের তিনি বলেন, “পার্টির ভালোর জন্য, পার্টির ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনার জন্য আমি নিজে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিলাম এবং পরবর্তী কাউন্সিল না হওয়া পর্যন্ত মামুনুর রশীদকে মহাসচিবের দায়িত্ব প্রদান করলাম। তিনি সার্বিকভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।”
পার্টির অন্যান্য পদে যারা আছেন, তাদের বহাল রেখে পার্টির যেসব নেতাকে জি এম কাদেরের সিদ্ধান্তে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে কিংবা বহিষ্কার করা হয়েছে এবং যাদের পার্টির কমিটির বাহিরে রাখা হয়েছিল, তাদের আগের পদে ‘পুনর্বহালের’ ঘোষণা দিয়ে রওশন বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে পার্টির জাতীয় সম্মেলন আহ্বান করবেন তিনি।
উপস্থিত নেতৃবৃন্দ এ সময় তুমুল করতালি দিয়ে এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানায়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদের অধিবেশন শুরুর দুদিন আগে নিজেকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করে এই নাটকীয়তার জন্ম দিলেন রওশন।
৭ জানুয়ারির ওই নির্বাচনের আগে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে জাতীয় পার্টিতে নতুন করে বিভক্তি দেখা দেয়। দেবর জিএম কাদেরের সঙ্গে মতবিরোধে গত সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা রওশন নিজে এবার নির্বাচনে অংশ নেননি। তার অনুসারীদের কাউকেই মনোনয়ন দেয়নি জাতীয় পার্টি।
নির্বাচনের পর পার্টি থেকে প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ কয়েকজনকে অব্যাহতি দেয়া হয়, যারা রওশনপন্থি হিসেবে পরিচিত। এরপর গত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর বিরুদ্ধে ‘স্বেচ্ছাচারিতার’ অভিযোগ এনে ৬৭১ জন নেতাকর্মী পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
এই প্রেক্ষাপটে ‘পরবর্তী করণীয় ঠিক করতে’ রোববার রওশন এরশাদের মতবিনিময় সভা ডাকা হয়। আর সেই মতবিসিময় হয় সাংবাদিকদের উপস্থিতিতেই।
সভায় রওশন এরশাদ বলেন, “আমাদের প্রাণপ্রিয় সংগঠন জাতীয় পার্টিতে এখন একটি ক্রান্তিকাল বিরাজ করছে। দ্বাদশ নির্বাচনের পূর্বে পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিবের বক্তব্য ও বিবৃতি এবং দ্বাদশ নির্বাচন পরবর্তী সময়ে তাদের ভূমিকা পার্টিকে মারাত্বক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
“জাতীয় নিবার্চনে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৮৭টি আসনে প্রার্থী মনোনয়ন প্রদান করে ২৬টি আসনে সমঝোতা করা এবং আসন সমঝোতার পরেও জনসম্মুখে অস্বীকার করে দেশবাসী এবং পার্টির মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে পার্টিকে মারত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে।"
রওশন বলেন, “২৬টি আসনে সমঝোতার পর বাকি আসনের প্রার্থীদের রাজনৈতিকভাবে জনগণের বিরূপ সমলোচনার মুখোমুখি হতে হয়েছে। চেয়ারম্যান ও মহাসচিব তাদের কোনো খোঁজ খবর না নেওয়ার ফলে ভোটের মাঠে পার্টি চরমভাবে ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে। প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে সরে আসতে বাধ্য হয়েছেন।
“নির্বাচনে ভরাডুবি হওয়ায় পার্টির নেতা-কর্মীরা তার প্রতিবাদ করার অধিকার রাখেন। এই প্রতিবাদী নেতা কর্মীদের সাথে কোনোরূপ আলোচনা কিংবা সান্ত্বনা না করে ক্রমগত বহিষ্কার ও অব্যহতির মাধ্যমে পার্টির অস্তিত্ব নষ্ট করা হয়েছে।"
পার্টি চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিরোধের প্রসঙ্গ ধরে প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন বলেন, “পার্টির অবস্থা সার্বিকভাবে বিবেচনা করে আমি গত ২২ জানুয়ারী পার্টির চেয়াম্যান ও মহাসচিবকে দলে ঐক্য ফিরিয়ে এনে সকল বহিষ্কার ও অব্যাহতির আদেশ বাতিল করে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় পার্টি গঠনের আহ্বান জানিয়েছিলাম। কিন্তু দূঃখের বিষয়, তারা তা আমলে নেননি।
“এই ধারাবাহিকতায় গত ২৫ জানুয়ারি জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে পল্লীবন্ধুর ৬৬৮ জন নেতা-কর্মী পার্টি থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করায় দলে বিরাট সংকট সৃষ্টি হয়েছে।"
রওশনের কাছ থেকে মহাসচিবের দায়িত্ব পাওয়া কাজী মামুনুর রশিদ মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের বলেন, “পরবর্তী কাউন্সিল হওয়া পর্যন্ত আমি মহাসচিব হিসেবে থাকব। আমি চেষ্টা করব সংগঠনের গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে। ফেব্রুয়ারিতে অথবা মার্চের প্রথম সপ্তাহে কাউন্সিল হবে।
মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাইফুল ইসলাম সেন্টু, যাকে সম্প্রতি অব্যহতি দেওয়া হয়েছিল। এরশাদের ছেলে রাহগীর আল মাহি সাদ এরশাদও উপস্থিত ছিলেন মত বিনিময়ে।
এছাড়া পার্টির অ্যাবহতিপ্রাপ্ত প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভরায়, অব্যাহতিপ্রাপ্ত ভাইস চেয়ারম্যান জাঙ্গীর আলম পাঠান, ইয়াহিয়া চৌধুরী, সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম সারোয়ার মিলন, অধ্যাপক দেলায়ার হোসেন খান, রফিুকুল হক হাফিজকে দেখা গেছে নেতাকর্মীদের মধ্যে।
রওশনের ঘোষণার বিষয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জে এম কাদেরের বক্তব্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানতে পারেনি।
তবে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, রওশনের দেওয়া অব্যাহতির আদেশ তারা আমলে নিচ্ছেন না।
“এবারই প্রথম নয়, এটা তৃতীয়বার। এর আগেও দুইবার তিনি এইরকম বাদ দিয়ে নিজেই চেয়ারম্যান ঘোষণা করেছেন। পরবর্তীতে প্রত্যাহার করেছেন উনার ঘোষণা দেওয়া ঠিক না।
“কাজেই উনার এই ঘোষণা আমি মহাসচিব হিসেবে নলেজে নিচ্ছি না। এটার কোনো ভিত্তি নাই। এটা অগঠনতান্ত্রিক, এ ধরনের কোনো ক্ষমতা উনার নাই। এই বিষয়টা আইনের ভাষায় যেটা বলে আমরা এটা আমলে নিচ্ছি না।”