‘গোপন সংলাপ’ নয়, প্রয়োজনে ফখরুলকে ফোন করব: কাদের

“আমরা যা করি প্রকাশ্যে করি, গণতন্ত্রে ব্যাক ডোরে (গোপনে) আলোচনার কোনো প্রয়োজন নেই।”

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 March 2023, 10:40 AM
Updated : 6 March 2023, 10:40 AM

আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে সংলাপের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিলেও ‘প্রয়োজনে’ কথা বলার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

তিনি বলেছেন, সে ক্ষেত্রে তিনিও যেমন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ফোন করতে পারেন, তেমনি বিএনপি নেতাও তাকে কল করতে পারেন।

তবে যাই হোক না কেন, সব ‘প্রকাশ্যে’ হবে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘গোপনে’ কিছু তারা করেন না।

সোমবার দুপুরে সচিবালয়ের সভাকক্ষে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলেন ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা।

নির্বাচনের আগে বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় বসার কোনো সম্ভাবনা আছে কি না বা ‘গোপনে’ কোনো আলোচনা হচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নে কাদের বলেন, “আমরা যা করি প্রকাশ্যে করি, গণতন্ত্রে ব্যাক ডোরে (গোপনে) আলোচনার কোনো প্রয়োজন নেই। দরকার হলে আমিই ফখরুল সাহেবকে ফোন করব, না হয় উনি দেবেন।”

তার কোনো সম্ভাবনা আছে কি না এমন প্রশ্নে কাদের বলেন, “আমি দেখছি না।”

আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিপরীত অবস্থানের মধ্যে দুই পক্ষকে সংলাপে বসে বিরোধ মেটানোর আহ্বান জানাচ্ছেন অনেকেই।

এর মধ্যে গত শনিবার বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামন থেকে ‘পদযাত্রা’ কর্মসূচি শুরুর আগে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা মাহমুদুর রহমান মান্না।

তিনি বলেন, “তথাকথিত সংলাপের কথা-বার্তা বাজারে ছাড়ছেন। কার সাথে সংলাপ? যিনি আমাদের ডেকে নিয়ে সংলাপে (২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে) বললেন, তার স্বর্গীয় পিতার উদ্ধৃতি দিয়ে বললেন, তার কসম খেয়ে বললেন- ‘আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা, আমি মিথ্যা কথা বলতে পারি না। আমি বলছি আপনারা নির্বাচনে আসেন। আমরা এই নির্বাচন সম্পূর্ণ গ্রহণযোগ্য, সম্পূর্ণ প্রভাবমুক্ত করব’।

“সেই নির্বাচনের ফলাফল আপনারা (জনগণ) দেখেছেন। অতএব যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি (প্রধানমন্ত্রী) না যাচ্ছেন, তার এই সমস্ত কোনো কথাই বিশ্বাস করছি না। যদি সংলাপ করতে চান আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেন। তারপরে আমাদের কথা আছে।”

‘কালো মেঘ কেটে যাবে’

ওবায়দুল কাদের মনে করেন, নির্বাচন নিয়ে বিরোধের কারণে রাজনীতিকে যে শঙ্কা দেখা যাচ্ছে, সেটি কেটে যাবে। তবে বিএনপির দাবি অনুযায়ী নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ‘ফিরবে না’ বলেও জানিয়ে দিয়েছেন তিনি।

আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, “নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কালো মেঘ আসে, সেটা আমাদের দেশে নতুন নয়। কী হবে সেটা পূর্বানুমাণ করে তো বলা যাবে না। তবে আমি আশাবাদী মানুষ, মেঘ কেটে যাবে।”

“আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে নির্বাচন হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এমন কিছু ঘটেনি যে সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে এবং এমন কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি যে, সংবিধানের বাইরে যেতে হবে।

“সংবিধানের বাইরে কোনো ছাড় দেব না। অন্যান্য দেশে যেভাবে নির্বাচন হয় সেভাবেই হবে। সংবিধান পরিবর্তন করে কারও সঙ্গে আপস করতে হবে এম বিপদে পড়িনি। এই সংবিধান কাটাকাটির কোনো সুযোগ নেই।"

‘আন্দোলনের হুমকি নয়, অর্থনৈতিক সংকটই চ্যালেঞ্জ’

বিএনপির আন্দোলন এবং অর্থনৈতিক সংকট- কোনটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন- এমন প্রশ্নে কাদের বলেন, বিএনপির আন্দোলনের হুমকি তারা ‘পাত্তা দিচ্ছেন না’। অর্থনৈতিক সংকট সামাল দেওয়াকেই দিচ্ছেন গুরুত্ব।

তিনি বলেন, “বিএনপির আন্দোলন বাস্তবে যত গর্জে তত বর্ষে না। তর্জন গর্জনই সার। পদযাত্রা, নিরব পদযাত্রা থেকে এখন তারা নিঃশব্দ মানববন্ধনে।

“আন্দোলনের যতটুকু গতি আশা করেছিল, সেটা নেই। আন্দোলনে নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ কিছুটা থাকলেও জণগণের অংশগ্রহণ নেই। এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছি না। আর আন্দোলন করলে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করব, সহিংসতা করলে জনগণের জানমাল রক্ষায় যা করার প্রয়োজন তাই করব।”

কাদের বলেন, “রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ অচিরেই থেমে যাবে এমন নয়। যার ফলে সারা দুনিয়াতে সংকট আছে, বাংলাদেশেও সংকট আছে।

“আমাদের বেশি দামে আমদানি করতে হয়। প্রধানমন্ত্রী সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই সংকট সামাল দেওয়াই বড় চ্যালেঞ্জ। আর সরকারের সে চেষ্টার উপর জনগণের আস্থা আছে। তারা (বিরোধী রাজনৈতিক দল) উসকে দেওয়ার চেষ্টা করে সাড়া পায়নি।"