“আমরা তো জনগণের অসুবিধা করে কিছু করছি না। যারা এগুলো করছে তাদের ওপর তো আজকেই ভিসা নীতি প্রয়োগ করা উচিত ছিল,” বলেন কাদের।
Published : 31 Jul 2023, 02:47 PM
ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি দিয়ে ‘সহিংসতা’ করায় বিএনপির ওপর মার্কিন ভিসা নীতি ‘প্রয়োগ করা উচিত’ বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
সচিবালয়ে সোমবার সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে তিনি বলেছেন, “পথ অবরোধ করবে, ঢাকার প্রবেশ পথ, এটা কোন রাজনীতি? এটা কোন গণতন্ত্র? এটা কেন? নির্বাচনকে সামনে রেখে এ কর্মসূচি যারা নেয়, ভিসা নীতি তো তাদের ওপর কার্যকর হওয়া উচিত। এটা স্পষ্ট নির্বাচনকে বাধা দেওয়া।”
বাংলাদেশে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার মধ্যে বিদেশি তৎপরতার বাড়ার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি আলোচিত রাজনৈতিক অঙ্গনে।
গত দুটি নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলা ওয়াশিংটন সম্প্রতি বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে; যেখানে বলা হয়, সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনে অন্তরায় হবে যারা, তারা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাবে না।
এর পর থেকে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দুই পক্ষই বলে আসছে, তাদের প্রতিপক্ষের কর্মকাণ্ডের কারণেই ওই ভিসানীতি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
সরকার হঠানোর এক দফা আন্দোলনের অংশ হিসেবে শূক্রবার ঢাকার নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করে বিএনপি। এর পাল্টায় বায়তুল মোকাররমে শান্তি সমাবেশ করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
পরদিন বিএনপি ঢাকার প্রবেশমুখগুলোতে অবস্থান কর্মসূচি দেলে তার পাল্টায় আওয়ামী লীগও সেসব স্থানে অবস্থানের ঘোষণা দেয়। তাতে উত্তেজনা আরো বাড়ে।
পুলিশ ও আওয়ামী লীগ সমর্থকরা শনিবার বিএনপিকে স্থানগুলোতে দাঁড়াতেই দেয়নি। ধোলাইখাল ও মাতুয়াইলে তাদের সঙ্গে বিএনপিকর্মীদের সংঘর্ষ বাঁধে। এসময় তিনটি বাসে আগুন দেওয়া হয়।
ওই কর্মসূচিতে সহিংসতার জন্য বিএনপিকে দায়ী করে আওয়ামী লীগ বলছে, আবারও ‘আগুন-সন্ত্রাসে’ ফিরে গেছে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়া দলটি।
বিএনপির কর্মসূচির সমালোচনা করে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমরা সমাবেশ করলাম দক্ষিণ গেইটে, তারা করলো নয়া পল্টনে। ঠিক পরের দিন ঢাকার প্রবেশ পথে অবস্থান, এটা কোন কর্মসূচি? আমরা তো এ ধরনের কোনো কর্মসূচি কখনো নিইনি।”
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “তাদের উদ্দেশ্য হল তারা একটা লাশ ফেলবে। তারেক জিয়া লন্ডন থেকে ভিডিওতে বলেছে একটা লাশ ফেললে ১০টা লাশ ফেলতে হবে। কি অ্যাটিচিউড! কি ভয়াল তাদের অ্যাটিচিউড!
“পুলিশের ওপর হামলা, পুলিশ তো বাধা দেবেই। ঢাকা-চট্টগ্রামের প্রবেশ পথের রাস্তা বন্ধ করে দেবে, পুলিশ চুপ করে থাকবে? আমি পুলিশের দোষ দেব না, পুলিশের এটা দায়িত্ব মানুষের জানমাল রক্ষা করা।”
বিএনপি নেতারা দলের কর্মীদের ‘অতিরিক্ত জামা-কাপড় নিয়ে’ ঢাকা আসতে বলেছিলেন দাবি করে কাদের বলেন, “বেচারারা জামা-কাপড় নিয়ে থাকতে তো পারল না, ফিরে গেল। টাকাও শেষ, দুই হাজার টাকা করে দিয়েছিল।
“আমরা তো জনগণের অসুবিধা করে কিছু করছি না। যারা এগুলো করছে তাদের ওপর তো আজকেই ভিসা নীতি প্রয়োগ করা উচিত ছিল। তারা ভিসা নীতির কথা বলে! আর কি বাকি থাকতে পারে? হাইওয়েগুলো বন্ধ করে দিল, প্রবেশপথে নেতাকর্মীরা বসে যাবে।”
‘দু্ই দলের চাওয়াই এক’
বিএনপির মূল দাবির সঙ্গে কেউ নেই মন্তব্য করে কাদের বলেন, “তাদের দাবি আমাদের দাবি এক, ইলেকশন, শান্তিপূর্ণ ইলেকশন। এ শান্তিপূর্ণ ইলেকশন আমরা বাধাভুক্ত করব কোন স্বার্থে? আমাদের তো ক্ষতি, লাভ নেই।
“ইলেকশন শান্তিপূর্ণ না হলে, আমাদের কারণে না হলে আমরা দায়ী হবো, আর অন্য কারণে না হলে সেজন্য তারা (বিএনপি) দায়ী।”
বিএনপির সঙ্গে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি নিয়ে এক প্রশ্নে কাদের বলেন, “আমরা কোনো উত্তেজনায় যাব না। আমরা নির্বাচন চাই। উত্তেজিত হলে তো আমাদের চলবে না, আমরা সরকারি দল।
“তারা যে কোনো মূল্যে, যে কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ক্ষমতা থেকে শেখ হাসিনাকে হটাতে চায়, এটা তাদের টার্গেট। আমরা নির্বাচন চাই। নির্বাচনে জনগণ চাইলে থাকব আবারো, জনগণ না চাইলে আমরা বিদায় নেব।”
কাদেরের ভাষ্য, “সরকার সরকারের পথেই আছে। সরকারের উদ্দেশ্য শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় রাখা। নির্বাচনের আগেও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ, নির্বাচনেও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং নির্বাচনের পরেও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ।”
‘নির্বাচন পর্যন্ত ছাড়াছাড়ি নেই’
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত কর্মসূচি নিয়ে আওয়ামী লীগ মাঠে থাকবে বলে জানান ওবায়দুল কাদের।
বিএনপির কর্মসূচির দিন পাল্টা কর্মসূচি দেওয়া নিয়ে এক প্রশ্নে কাদের বলেন, “আজকে (সোমবার) তো আমাদের কোনো কর্মসূচি নেই। নির্বাচন পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত আছে। তবে কর্মচির ধরনটা পাল্টাবে। কাল থেকে শোকের মাস। শোকের মাসের কর্মসূচির ধরণ ভিন্ন হবে, কর্মসূচিকে ঢেলে সাজাচ্ছি। কর্মসূচি আমরা ছেড়ে দিইনি। এটা তো একবার ঘোষণা হয়ে গেছে। নির্বাচন পর্যন্ত ছাড়াছাড়ি নেই, আমরা আছি মাঠে, সতর্ক অবস্থানে আছি। আজকেই সতর্ক অবস্থানে আছি।
“আমরা রাস্তায় যাওয়া মানেই সংঘাত। এটা পুলিশের কাজ, পুলিশ করবে। রাস্তা বন্ধ করলে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।”
গত শনিবার গাবতলীতে সরকার দলের নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থানে ছিল জানিয়ে কাদের বলেন, “তারা মারামারিতে অংশ নেয়নি। লাঠিসোঁটা হাতে যাদের ছবি দেখা গেছে, তারা বিএনপির, আমাদের না। অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে যারা এসেছে তারা বিএনপির।”
বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ কোনো সংঘাত করেনি মন্তব্য করে দলটির সাধারণ সম্পাদক বলেন, “এক কিলোমিটারের মধ্যে দুই দলের সমাবেশ হয়েছে, কখনো কি আক্রান্ত হয়েছে? আমরা সংঘাত চাই না। যারা নির্বাচন চায় তারা সংঘাত চাইতে পারে না।”
বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে কিছু পশ্চিমা দেশের কূটনীতির সাম্প্রতিক বিবৃতিরও সমালোচনা করেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, “পৃথিবীর যে কোনো দেশে বিদেশিদের কার্যক্রমের একটা সীমানা আছে। ভিয়েনা কনভেনশন আছে। সেই কনভেনশন অনুযায়ী যদি চলে তাহলে তো আমাদের কিছু বলার নেই। আমরা কি তাদের সাথে গিয়ে মারামারি করব? আমরা তাদের স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি, আপনাদের এ কাজটা ভিয়েনা কনভেনশনের বিরুদ্ধে। এ কথা বলার তো আমাদের রাইট আছে।”