জনতার ‘সুনামিতে সরকার ভেসে যাবে’, আশা ফখরুলের

ফখরুলের ভাষায়, সরকার এখন তাদের কর্মসূচিতে ‘ঝামেলা করছে না’, তবে সেটা ‘দেখানোর জন্য’।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 August 2022, 11:21 AM
Updated : 12 August 2022, 11:21 AM

দীর্ঘদিন পর ঢাকায় বড় পরিসরে জনসভা করে উজ্জীবিত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দলের কর্মসূচিতে এখন তিনি ‘জনতার সুনামি’ দেখতে পাচ্ছেন।

নয়া পল্টনে ওই জনসভার পরদিন শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আরেক কর্মসূচিতে তিনি বলেন, “আজকে জনগণ জেগে উঠেছে, পতন তাদের অনিবার্য।

“মানুষ এই রাজপথ দখল করলে জনতার যে ঢল নামবে, সমুদ্রের যে ঢেউ উঠবে; সেই ঢেউয়ে যে সুনামি সৃষ্টি হবে, সেই সুনামিতে এই ভয়াবহ দানবীয় ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার ভেসে চলে যাবে।”

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিদ্যুতের বিপর্যয়, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গুলি এবং বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ প্রেস ক্লাবের সামনে এই সমাবেশ আয়োজ করে।

পেশাজীবীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমরা আমাদের পেশাজীবী ভাইদের অনুরোধ করব, আপনারা আপনাদের জায়গা থেকে সমস্ত মানুষকে সংগঠিত করেন।

“আমরা সবাই সংযুক্ত হয়ে দেশের জন্য, বিএনপির জন্য নয়, এটা তারেক রহমান সাহেবের জন্য নয়, অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ সাহেবের জন্য নয়, রুহুল আমিন গাজী ভাইয়ের জন্য নয়, আমার জন্য নয়; এই দেশকে বাঁচানোর জন্য আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”

বর্তমানে জাতি ‘বিপন্ন’ হয়ে পড়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমার দেশের গণতান্ত্রিক যে আত্মা, সেই আত্মাকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে; সেই আত্মাকে বাঁচানোর জন্য আজকে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন, আন্দোলন, আন্দোলনে নামতে হবে।

“আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমাদেরকে রাজপথ দখল করে এদের সরাতে হবে।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা খুব স্পষ্ট করে বলেছি, আমাদের দাবিগুলো খুব সামান্য। সেই দাবি হচ্ছে- দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, এই সরকারকে পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।

“সংসদ বাতিল করতে হবে এবং নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে সেই কমিশনের পরিচালনায় নির্বাচন করে সত্যিকার অর্থেই জনগণের একটা সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হচ্ছে আমাদের লক্ষ্য। আসুন সেই লক্ষ্যে আমরা এগিয়ে যাই।”

‘সমাবেশের অনুমতি, ওদের প্রতারণা’

বৃহস্পতিবার নয় পল্টনে বিএনপির সমাবেশে ক্ষমতাসীনরা ‘খুব বেশি ঝামেলা করে নাই’ মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “তারা (সরকার) আজকে বলতে কি, খুব ভদ্রলোক হয়ে গেছে। নির্বাচনের আগে বিভিন্ন দেশের চাপ, বিভিন্ন চাপ যে- বিরোধী দলকে সভা-সমিতি করতে দাও না। পরে দেখাচ্ছে যে, ‘আমরা বিরোধী দলকে সভা-সমিতি করতে দিচ্ছি’।

“আজকে আমরা এখানে বসে আছি, চারদিকে আমাদের কর্মী ভাইয়েরা আছে। খুব ঝামেলা করছে না। কারণ একটাই, তারা দেখাচ্ছে যে, তারা খুব গণতান্ত্রিক দল। তারা খুব ঝামেলা করে না। এটা প্রতারণা। প্রতারণা তাদের চরিত্রের সাথে জড়িয়ে আছে।”

সমবেতদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, “আপনারা দেখেছেন যে, গত ১৫ বছরে তারা আমাদের ছয়শর অধিক রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে গুম করেছে; ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলমসহ তাদের তারা গুম করেছে। সহস্রাধিক কর্মীকে তারা হত্যা করেছে। সেইদিন ভোলায় বিনা কারণে দুইজন তরুণ নেতাকে গুলি করে হত্যা করেছে।”

সরকার ‘অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করছে’ বলেও অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব।

“আপনারা দেখেছেন, কীভাবে ব্যাংকগুলো খালি হয়ে যাচ্ছে, এত লুটপাট সব নিয়ে চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও লুট হয়ে যায়। কিছুদিন আগে আমাদেরকে সিঙ্গাপুর দেখাচ্ছিল, এই যে মেট্রোরেল হচ্ছে, বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর হয়ে যাচ্ছে, মালয়েশিয়া হয়ে যাচ্ছে, টানেল হচ্ছে।

“আর এখন রিজার্ভ নামতে নামতে একেবারে নিচের দিকে নামা শুরু হয়েছে। শ্রীলঙ্কাকে বাহাদুরি দেখিয়ে আড়াইশ মিলিয়ন ডলার লোন দিল; এখন আপনার আইএমএফের কাছে, বিশ্ব ব্যাংকের কাছে, এডিবির কাছে আবার সেই লোন চাচ্ছে। এরা চুরি করে ডাকাতি করে আমাদের দেশের সমস্ত সম্পদকে পাচার করেছে। আন্তর্জাতিক একটা প্রতিষ্ঠান বলছে যে, বাংলাদেশে প্রতিবছর ৮২৭ কোটি ডলার পাচার হয়।”

ফখরুল বলেন, “আপনারা দেখেছেন যে, বিদ্যুতের পাওয়ার প্ল্যান্ট ও অন্যান্য চুরি-চামারিতে ৭৮ হাজার কোটি টাকা ক্যাপাসিটি চার্জ তারা বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই দিয়ে দিয়েছে।

“কাদেরকে দিয়েছে? তাদের যারা ব্যবসায়ী, তাদেরকে যারা টাকা-পয়সা দেয়, তাদেরকে যারা কমিশন দেয়, ঘুষ দেয়- তাদেরকেই তারা এই ৭৮ হাজার কোটি দিয়েছে।”

জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রসঙ্গ ধরে ফখরুল বলেন, “এখন আবার বলছে সমন্বয় করব। আরে আন্তর্জাতিক বাজারে তো তেলের দাম কমতে শুরু করেছে। আমেরিকাতে আমার ছোট বোন থাকে, তাকে জিজ্ঞাসা করলাম তোমাদের ওখানে তেলের দাম কত? সে বললো, আগে ১৪ ডলার ছিল, কমে ৩ ডলারে এসেছে।

“আর আমাদের আগে যে দাম ছিল ৭৮ টাকা, তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ১২৫ টাকা। তাহলে সমন্বয় কোথায় করছেন? এখন বিশ্ব বাজারে দাম কমছে, আপনারা কমাচ্ছেন না কেন? ওই যে তারা আবার চুরি করবে। এই সরকার ডাকাতি করছে, পুরো টাকা চুরি করছে। বর্গীদের মত তারা অবস্থান নিয়েছে, তারা পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর মতো অবস্থান নিয়েছে, এদের সাথে কোনো পার্থক্য নাই।”

সভাপতির বক্তব্যের ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি রুহুল আমিন গাজী বলেন, “এই সরকারের বিরুদ্ধে রাজপথেই আন্দোলন করতে হবে। এর অন্য কোনো বিকল্প নেই। নব্বইতে আমরা পেশাজীবীরা রাজপথে নেমে স্বৈরাচার এরশাদের পতন ঘটিয়ে ছিলাম। এবারও জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে এই ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটাতে হবে। এটাই হোক আজকে আমাদের শপথ।”

সংগঠনের সদস্য সচিব অধ্যাপক এ জেড এম জাহিদ হোসেনের পরিচালনায় এই পেশাজীবী সমাবেশে অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার উল্লাহ চৌধুরী, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, অধ্যাপক তাজমেরী এস ইসলাম, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান, জিয়া পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মামুন আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল আলম, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি এম আবদুল্লাহ, মহাসচিব নুরুল আমিন রোকন, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ বক্তৃতা করেন।

পেশাজীবী সংগঠনের মধ্যে অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্সের রিয়াজুল ইসলাম রিজু, আশরাফউদ্দিন বকুল, এগ্রিকালচারিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের অধ্যাপক গোলাম হাফিজ কেনেডি, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের শহীদ হাসান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা, ঢাকা আইনজীবী সমিতির অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন মেজবাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের শহীদুল ইসলাম, ইউনানী আয়ুর্বেদী গ্রাজুয়েট ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের মির্জা লিটন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের কাজী সাখাওয়াত হোসেন, টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের ফখরুল আলম, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের বিপ্লব উজ জামান বিপ্লব, নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের জাহানারা খাতুন, ফিজিওথেরাপি অ্যাসোসিয়েশনের তানভীর উল ইসলাম, জাতীয়তাবাদী সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের রফিকুল ইসলাম ও জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।