রওশন এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে সরাতে জি এম কাদেরের পক্ষ হয়ে স্পিকারকে চিঠি দিয়েছিলেন সংসদে বিরোধী দলের প্রধান হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ; তবে এরপর তিনি নিজেই দলে পদচ্যুত হলে এখন সেই চিঠি প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন।
মঙ্গলবার বিকালে স্পিকারের সঙ্গে সংসদ ভবনে দেখা করেন আগের আবেদন প্রত্যাহারের আবেদন করেন রাঙ্গাঁ। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বিরোদলীয় নেতা রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ।
জাতীয় পার্টির গৃহবিবাদে তাহলে কি এখন রওশনের সঙ্গে আছেন- বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এই প্রশ্নে রাঙ্গাঁ বলেন, “আমি দলের সঙ্গে আছি। দল একটাই থাকবে। এখনও চাই উনারা বসে ঠিক করুন। দলে আমাদের একসঙ্গে থাকতে হবে।”
সংসদে প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিতে এখন অভ্যন্তরীণ বিবাদ চলছে। দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন গত ৩০ অগাস্ট কাউন্সিল ডাকলে তার প্রতিক্রিয়ায় তাকে বিরোধীদলীয় নেতার পদ থেকে সরাতে উদ্যোগী হন দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের।
পরদিনই দলটির সংসদীয় দলের বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়, রওশনকে সরিয়ে কাদের হবেন সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা। জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু গত ১ সেপ্টেম্বর তাদের সিদ্ধান্ত জানান স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীকে। পরে দলের প্রধান হুইপ রাঙ্গাঁ আনুষ্ঠানিক চিঠি দেন স্পিকারকে।
তবে এরপর সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রাঙ্গাঁকে ১৪ সেপ্টেম্বর দলের সব পদ থেকে অব্যাহতি দেন জি এম কাদের। পরে সংবাদ সম্মেলনে রাঙ্গাঁ দাবি করেন, রওশনকে সরাতে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে, তার প্রক্রিয়া ‘সঠিক ছিল না’।
মঙ্গলবার স্পিকারের কার্যালয় থেকে বেরিয়ে রাঙ্গাঁ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সংসদীয় দলের সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমি যে চিঠি দিয়েছিলাম, সেটা আমি প্রত্যাহার করতে চাই বলে স্পিকার মহোদয়কে জানিয়েছি।
“প্রক্রিয়াটা যে ঠিক হয়নি, সেটা আমি সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলাম। যেহেতু প্রক্রিয়া ঠিক হয়নি, সেহেতু আমি আমার সই করা চিঠিটা প্রত্যাহার করার জন্য বলেছি।”
স্পিকার কী বলেছেন- জানতে চাইলে রাঙ্গাঁ বলেন, “স্পিকারকে বলেছি, এজেন্ডা ছাড়া মিটিং দিয়ে বিরোধী দলের নেতাকে বাদ দিয়ে উপনেতা যদি নেতা হয়ে যান, তবে এটা দুঃখজনক। বৈঠকের তো এজেন্ডা থাকতে হবে।
“স্পিকার বলেছেন, আমি চিঠি দিতেই পারি। উনি দেখবেন। আমি দলের গঠনতন্ত্র স্পিকারকে দিয়েছি। তিনি দেখে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন।”
রওশনকে বাদ দিতে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের বৈঠকের পর স্পিকারকে পাঠানো চিঠিতে ‘হুমকির মুখে’ সই করেছিলেন বলে এর আগে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছিলেন রাঙ্গাঁ।
তিনি বলেছিলেন, “তখন স্বাক্ষর না করলে আমাকে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ থেকে সরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। একইসঙ্গে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন না দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।”
স্পিকারের সঙ্গে দেখা করে বেরোনোর পর তিনি বলেন, “একই সময় জাতীয় পার্টির দুটি গঠনতন্ত্র। এক জায়গায় বলা আছে, প্রধান পৃষ্ঠপোষক সব কাজ করতে পারবেন। চেয়ারম্যান ও মহাসচিব তার সঙ্গে পরামর্শ করবেন। আর একটায় প্রধান পৃষ্ঠপোষকের কোনো খবরই নেই। গঠনতন্ত্র নকল করে আরেকটা করা হয়েছে।”
এক প্রশ্নের জবাবে রাঙ্গাঁ বলেন, “একটা দলের যখন মিটিংয় হয়, তখন সভাপতিত্ব যে করেন তিনি চিঠি দেবেন। উনি (জি এম কাদের) সেটা না করে আমাকে দিয়ে করিয়েছেন। চিফ হুইপের এটা দেওয়ার কথা না। আমি যে মিটিং করেছি সেটা ৩১ অগাস্টের মিটিং। এমপিরা করেছেন ১ সেপ্টেম্বর। এ তারিখের মিটিংয়ে আমার কাছ থেকে সই করিয়ে নেওয়া হয়েছে।”
জাতীয় পার্টির কর্তৃত্ব নিয়ে ভাবি রওশন এরশাদের সঙ্গে দেবর জি এম কাদেরের দ্বন্দ্ব অনেক দিনের। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দলের নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের নানা বৈঠকে দু’জন বিরোধে জড়িয়ে পড়েছিলেন। নানা কৌশলে তাদের মানাতেন দলের প্রতিষ্ঠাতা ও তৎকালীন চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ।
এরশাদের মৃত্যুর পর জি এম কাদের দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিলে রওশন তাতে আপত্তি তোলেন। এরশাদের আসনে উপ-নির্বাচনের মনোনয়ন নিয়ে সেই দ্বন্দ্ব আরও প্রকট হয়।
এরপর জি এম কাদের বিরোধীদলীয় নেতার পদ পাওয়ার জন্য স্পিকারকে চিঠি দিলে বিভেদ আরও বাড়ে। এক পর্যায়ে দলের একটি অংশ রওশনকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করলে জাতীয় পার্টি ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়।
ওই সময় দুই পক্ষের নেতাদের সমঝোতা বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, জি এম কাদেরই পার্টির চেয়ারম্যান থাকবেন। আর রওশন হবেন বিরোধীদলীয় নেতা।