জাতীয় পার্টি ‘গণতান্ত্রিক দল না’, থাকবেন না রাঙ্গাঁ

রওশনকে বাদ দিতে স্পিকারকে পাঠানো চিঠিতে ‘হুমকির মুখে’ সই করেছিলেন বলে দাবি রাঙ্গাঁর।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Sept 2022, 11:29 AM
Updated : 15 Sept 2022, 11:29 AM

দলীয় সব পদ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার একদিন পর জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ বললেন, দল যদি ‘গণতান্ত্রিকভাবে’ না চলে তো সেই দলে তিনিও থাকতে চান না।

তিনি বলেছেন, “আমি আমার অব্যাহতির আদেশে আনহ্যাপি নই। তবে আমি আমার বহিষ্কার (অব্যাহতি) আদেশ প্রত্যাহার চাই। চেয়ারম্যানের সঙ্গে যুদ্ধ করে দলে থাকা যায় না।”

বৃহস্পতিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে দল আর নিজের অবস্থান এভাবেই তুলে ধরেন বিরোদলীয় প্রধান হুইপ রাঙ্গাঁ।

আগের দিন তাকে জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীসহ সব পদ থেকে অব্যাহতি দেন দলের চেয়ারম্যান জি এম কাদের।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বুধবার রাঙ্গাঁ বলেছিলেন, “উনি (কাদের) দুষ্টু লোকের পরামর্শে করেছেন। আমরা কারও দয়ায় জাতীয় পার্টি করি না। তৃণমূল থেকে জাতীয় পার্টি করেছি। উনার সঙ্গে রংপুরে দেখা হবে।”

তবে বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে সুর পাল্টে তিনি বলেছেন, “গতকাল অব্যাহতির আদেশ পাওয়ার পর আমি একটু রাগান্বিত ছিলাম; এটা অস্বীকার করব না। আমি চেয়ারম্যানকে যে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলাম, সেটা তুলে নিয়েছি। রংপুরেও আর কোনো ঝামেলা হবে না। সেটা গতকাল রাতেই বলে দিয়েছি।”

তাহলে রাঙ্গাঁ কি সমঝোতা চাইছেন? তার ভাষ্য, তিনি কোনো ‘অন্যায় করেননি’ এবং সেটা বলার জন্যই সংবাদ সম্মেলনে ডেকেছেন।

সাবেক সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের গড়া এই দলের সাবেক এই মহাসচিব বলেন, “জাতীয় পার্টি যদি গণতান্ত্রিকভাবে না চলে, আমি দলে থাকব না; এ দল করব না এবং অন্য কোনো দলও করব না।

Also Read: জাতীয় পার্টির সব পদ হারালেন রাঙ্গাঁ

Also Read: চাপে নেই, পুরোপুরি সুস্থ- রওশনের নামে বার্তা

“আমি বুঝলাম না কেন আমার মাননীয় চেয়ারম্যান এ কাজটি করলেন। আমি তাকে শ্রদ্ধা করি। তিনি আমার আত্মীয়ও হন। কেন এটা করলেন, আমি বুঝতে পারলাম না। সেই দুঃখটা প্রকাশ করার জন্য এখানে এসেছি।”

গঠনতন্ত্রের যে ধারার ক্ষমতাবলে দলীয় প্রধান তাকে অব্যাহতি দিয়েছেন সেই ধারা ‘অগণতান্ত্রিক’ বলেও মন্তব্য করেন রাঙ্গা। দলের কাউন্সিলে ওই ধারা বাদ দেওয়ার কথা উঠেছিল জানিয়ে তিনি দাবি করেন, ‘কিছু লোকের কারণে’ সেটা করা হয়নি।

এক প্রশ্নের জবাবে রাঙ্গাঁ বলেন, রওশন এরশাদকে সরিয়ে জিএম কাদেরকে সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা করার বিষয়ে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে, তার প্রক্রিয়া ‘সঠিক ছিল না’।

“এটা আমি একটা টেলিভিশনকে বলেছিলাম, এজন্য আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে মনে করছি।”

চিঠি দেওয়ার প্রক্রিয়া সঠিক না থাকলে সেটি নিয়ে এতদিন পরে কেন কথা বলছেন, সেই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে রাঙ্গা বলেন, “রওশন এরশাদকে সরিয়ে জি এম কাদেরকে বিরোধী দলীয় নেতা করার চিঠি দেওয়া পর তিনি (রওশন) আমাকে বলছেন, তুমি তো আমার সব সর্বনাশ করছ। তুমি তো সব চিঠিতে সই করেছ।

“তখন আমি উনাকে বলেছি, এটার সঙ্গে আমি নেই। প্রক্রিয়া যে সঠিক ছিল না, এটা আমি কোনো গণমাধ্যমে বলে দেব। এরপর আমি এ নিয়ে কথা বলেছি।”

রওশনকে বাদ দিতে জাতীয় পার্টির সংসদীয় দলের বৈঠকের পর স্পিকারকে পাঠানো চিঠিতে ‘হুমকির মুখে’ সই করেছিলেন বলে দাবি রাঙ্গাঁর।

“তখন স্বাক্ষর না করলে আমাকে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ থেকে সরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। একইসঙ্গে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন না দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।”

Also Read: রওশনের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছে, তিনি চাপে পড়েছেন: জি এম কাদের

Also Read: ঘরে বিবাদ, স্পিকারের দিকে তাকিয়ে জাপা

তিনি বলেন, “আমি আজ এখানে পার্টির কোনো লোক নিয়ে আসিনি। পরিবহন সেক্টরের কিছু লোক এসেছে। আগামীতে শুধু দুটি রাজনৈতিক দল থাকবে। কোন দুটি থাকবে, সেটা আমি বলব না। তবে সেখানে আমরা (জাতীয় পার্টি) থাকব না।”

জিএম কাদেরকে কিছু লোক ‘ভুল বুঝিয়ে’ তার অব্যাহতির আদেশ দিতে ‘বাধ্য করেছে’ মন্তব্য করে রাঁঙ্গা বলেন, “চেয়ারম্যানের সঙ্গে কিছু লোক আঠার মতো লেগে থাকে সারাক্ষণ। তারা উনাকে অনেক ভুল পরামর্শ দেন।”

রাঙ্গা বলেন, “জাতীয় পার্টি গণতান্ত্রিক দল না। তবে এটা স্বৈরতান্ত্রিক দল, এটা আমি বলব না।”

পরিবহন মালিক সমিতির নেতা রাঙ্গাঁ বর্তমানে রংপুর-১ আসনে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য। তিনি ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ জীবিত থাকাকালে ২০১৮ সালে রাঙ্গাঁকে দলের মহাসচিব করেছিলেন। এরপর ২০১৯ সালে তাকে সংসদে বিরোধী দলের প্রধান হুইপ করা হয়।