এ কোন দেশ, কোথায় নিয়ে এলাম: বিস্ময়ভরা জিজ্ঞাসা ফখরুলের

আওয়ামী লীগের এই কারণেই দেশের ‘এই অবস্থা‘ হয়েছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ক্ষমতাসীন দলকে ‘জনগণের কাঠগড়ায়’ দাঁড় করাতে হবে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 March 2023, 11:44 AM
Updated : 15 March 2023, 11:44 AM

‘বর্তমান পরিস্থিতি’ দেখে বাংলাদেশকে চিনতে না পারার কথা জানিয়েছেন বিএনপি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ‘কোথায় এসে ঠেকেছে’– বিস্ময়ভরা কণ্ঠে এ প্রশ্ন রেখেছেন তিনি। 

সু্প্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ভোট কারচুপি হয়েছে- এমন অভিযোগ এনে এই প্রশ্ন রাখেন বিএনপি নেতা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে আখ্যা দেন ‘প্যাথলজিক্যাল চোর’ বলে ।

বুধবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আলোচনায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন ফখরুল।

তিনি বলেন, “তাদের (ক্ষমতাসীন) একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে চুরি। আমরা তো ভোট-চোর ভোট-চোর বলি। জাতীয় নির্বাচনে ভোট চুরি করে, ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ভোট চুরি করে। এখন সুপ্রিম কোর্টে ভোট চুরি করছে, ঢাকা বারে ভোট চুরি করছে।”

এই নির্বাচনে ‘ভুয়া ব্যালট পেপার’ ছাপিয়ে সিল মারার অভিযোগ আনেন বিএনপি নেতা। তার দাবি, সেটাকে ধরে ফেলার কারণে সেখানে গোলযোগ হয়েছে।

তিনি বলেন, “আমাদের যিনি সাত বার সুপ্রিম কোর্ট বারের নির্বাচিত সেক্রেটারি ছিলেন, তাকে তারা আঘাত করেছে এবং তার নামসহ আরও এক হাজার আইনজীবীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।“

“এ কোন দেশ আমাদের?- এমন প্রশ্ন রেখে ফখরুল বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, “এ কোথায় আমরা এ দেশকে নিয়ে আসলাম?”

আওয়ামী লীগের কারণেই দেশের ‘এ অবস্থা’ হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন ফখরুল। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীন দলকে ‘জনগণের কাঠগড়ায়’ দাঁড় করাতে হবে।

“তারা এদেশকে চরমভাবে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে। আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, সব কিছুকে তারা ভেঙে তছনছ করে দিয়েছে। আমাদের সমস্ত গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে।”

অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনের লেখা ‘আমার রাজনীতির রোজনামচা’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। ‘অনন্য প্রকাশনী; থেকে বের হওয়া ৪১৬ পৃষ্ঠার এই বইয়ের দাম ধরা হয়েছে ৮০০ টাকা।

এর আগে খন্দকার মোশাররফ লিখেছেন ‘ফখরুদ্দিন-মইন উদ্দিনের কারাগারে ৬১৬দিন’, ‘জরুরী আইন সরকারের দুই বছর’, ‘সংসদে কথা বলা যায়’, ‘সময়ের ভাবনা ও রাজনীতি’, ‘রাজনীতির হাল-চাল।

মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘‘আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ছিলাম, এখন রাজনীতিবিদ।

“আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা আসলে এত রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকেন; ক্ষমতায় থাকলে রাষ্ট্র চালানো, বিরোধী দলের থাকলে জেল-জুলুম-নির্যাতনে পালিয়া থাকা। লেখার সময় কোথায়? তবে আমি কিছু সময় পেয়েছি জেলে থাকার সময় বেশি এই লেখালেখির কাজে ব্যবহার করেছি।

“আমি শুধু চেষ্টা করেছি এটা বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য। আমার দৃঢ় বিশ্বাস এটা কাজে লাগবে।”

বইটি নিষিদ্ধ হয়ে যায় কি না, এ নিয়ে শঙ্কার কথাও বলেন ফখরুল। এর কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “ভিন্নমতের বই লেখলে… যারা প্রকাশ করেন তাদের স্টল পর্যন্ত নিতে দেওয়া হয় না বাংলা একাডেমিতে।”

আওয়ামী লীগের আমলে বেশ কিছু টেলিভিশন চ্যানেল ও পত্রিকা বন্ধের কথাও তোলেন তিনি। বলেন, “তারা আবার বড় বড় কথা বলে। তারা নাকি গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিচ্ছে, তারাই নাকি গণতন্ত্রের একমাত্র ধারক ও বাহক!”

‘চাল-ডাল কিনতে পারে না, বাসে না উঠে হেঁটে চলে মানুষ’

দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ সরকার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, “তারা (মানুষ) চাল কিনতে পারে না, ডাল কিনতে পারে না, লবণ কিনতে পারে না, বাচ্চার মুখে একটা ডিম তুলে দিতে পারে না।

“ছেলে-মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার জন্যে যে কাগজ-কলম-ব্যাগ কিনে দিতে পারে না, ফি দিতে পারে না। বাসে উঠতে পারে না, হেঁটে চলে।”

বাংলাদেশের মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণের ঘোষণাকে চ্যালেঞ্জ করেন ফখরুল। তার দাবি, বাংলাদেশে ৪২ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করছে।

“আমার দেশের শতকরা ৮০ ভাগ মানুষ এখন আমিষ খেতে পারে না, গরুর মাংস-খাসির মাংস খেতে পারে না। মাছে হাত দিতে পারে না। সেই দেশে তারা একলাফে বিদ্যুতের দাম, গ্যাসের দাম বাড়িয়ে ফেলেছে”, বলেন বিএনপি নেতা।

‘সরকারের সাফল্য কোন দিক দিয়ে?’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “তারা টাকা ছাপাচ্ছে, ব্যাংক থেকে চুরি করছে, রিজার্ভ থেকে চুরি করছে। কোনো দিকে কোনখানে বলবেন এই সরকারের সাফল্য আছে?“

সরকার ‘বন্দুক, পিস্তল দিয়ে’ ক্ষমতায় টিকে আছে দাবি করে ফখরুল বলেন, “মানুষ জেগে উঠেছে। তারা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই এদেরকে পরাজিত করবে এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার মারুফ হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, আবদুল হাই শিকদার, ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি এম আবদুল্লাহ, অবসরপ্রাপ্ত বিচারক নুর মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর, অবসরপ্রাপ্ত কর কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন ভুঁইয়া এবং অনন্যার প্রকাশক মনিরুল হক বক্তব্য দেন।