বিএনপি মহাসচিবের ভাষ্য, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ‘সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক পন্থায় ত্রাস সৃষ্টি করার লক্ষ্যে’ বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির সময় পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করছে।
Published : 18 Jan 2023, 04:41 PM
বিরোধী দলের কর্মসূচির দিনে ‘পাল্টা কর্মসূচি ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি’ না করতে ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ‘সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক পন্থায় ত্রাস সৃষ্টি করার লক্ষ্যে’ বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির সময় পাল্টা কর্মসূচি ঘোষণা করছে।
“তাদের নেতৃবৃন্দের উসকানিমূলক বক্তব্য, বিশেষ করে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ্যেই বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হাত-পা ভেঙে দেওয়া, জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি ও নির্দেশ ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীদের আরো অনুপ্রাণিত করেছে। এ কারণেই সন্ত্রাসী কাজগুলো একেবারে লাগামহীনভাবে ঘটছে।”
বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকের বক্তব্য সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরে দলের মহাসচিব বলেন, “বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় আওয়ামী লীগের এই অপতৎপরতার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। বিএনপি ও বিরোধী দলের কর্মসূচির পাল্টা কর্মসূচি পালন করা, বাধা প্রদান এবং একই দিনে একই সময় কোনো কর্মসূচি প্রদান না করার আহ্বান জানানো হয়।”
বিরোধী দলের কর্মসূচির দিনে পাল্টা কর্মসূচি দিলে ‘উদ্ভূত পরিস্থির সকল দায়’ আওয়ামী লীগ ও সরকারকেই বহন করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি করেন ফখরুল।
আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ, সরকারের মন্ত্রীরা ‘মুখে গণতান্ত্রিক পরিবেশ’ সৃষ্টির কথা বললেও বাস্তবে ‘সন্ত্রাসী পরিবেশ’ তৈরি করছে বলে মন্তব্য করেন এই বিএনপি নেতা।
তিনি বলেন, “গণবিরোধী সরকার বিরোধী আন্দোলনকে নস্যাৎ করতে চাইছে। তাদের মূল লক্ষ্যটাই হচ্ছে যে উসকানি দেওয়া, বিরোধী দলকে উসকানি দিয়ে একটা ট্র্যাপের মধ্যে ফেলা এবং যাতে করে একটা সাংঘর্ষিক অবস্থার সৃষ্টি হয়।
“বিএনপি অত্যন্ত সচেতনভাবে সেই পরিস্থিতি যাতে না ঘটে তার জন্য অত্যন্ত ধৈর্য্যের সঙ্গে তারা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি প্রদান করে আসছে।“
চট্টগ্রামে বিএনপি নেতাদের ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, “চট্টগ্রামে এখন যেটা হচ্ছে, আমাদের প্রতিটি নেতার বাড়ি বাড়ি হামলা হচ্ছে, পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে, গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করছে। বাড়ি ভাঙচুর করছে।
“বোঝা যাচ্ছে সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশে একটা সংঘাতময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করে জনগণের আন্দোলনকে দমন করবার জন্য নীল নকশা করেছে।”
মঙ্গলবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির সভা হয়। এতে মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ কমিটির নয় সদস্য উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতেই বুধবার সংবাদ সম্মেলনে আসেন বিএনপি মহাসচিব।
বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর নজরদারিতে সরকার মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট যোগাযোগে ‘নজরদারি প্রযুক্তি কিনছে’ বলেও অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, “অবিলম্বে এই সব প্রযুক্তি ক্রয় করা ও আইন প্রণয়নের অপচেষ্টা থেকে বিরত থাকার জন্য বিএনপি আহ্বান জানাচ্ছে।”
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে সরকারের নিবর্তনমূলক আইন অ্যাখ্যা দিয়ে ফখরুল বলেন, “ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গত চার বছরে ১ হাজার ২০৯টি মামলা দায়ের হয়েছে। বিএনপি মনে করে এই চরম নিবর্তনমূলক আইনের মাধ্যমে ভিন্নমত পোষণকারী ব্যক্তি, সংবাদ কর্মী, বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার ও আটকের মাধ্যমে জনগণের গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকারের ওপর চরম আঘাত করা হচ্ছে ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে।”
এ আইনের মাধ্যমে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ‘হরণ করা হচ্ছে’ অভিযোগ করে তিনি বলেন, “নিরপরাধ ব্যক্তিদের ওপর এই আইনের অপপ্রয়োগের ফলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে। অবিলম্বে এই আইনের আওতায় বন্দী ব্যক্তিদের মুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি আবারো আমরা জানাচ্ছি।”
দলের নেতাকর্মীদের মামলা ও গ্রেপ্তারের পরিসংখ্যান তুলে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সারাদেশে গ্রেপ্তার চলছে, বাড়ি বাড়ি তল্লাশি, হয়রানি, নিপীড়ন-নির্যাতন চলছেই।
“এখন পর্যন্ত সারাদেশে জেলা-মহানগরে মামলার সংখ্যা ৫৪২টা। এজাহারভুক্ত আসামির সংখ্যা ১৯ হাজার ১১৩ জন, অজ্ঞাত আসামির সংখ্যা ৭৮ হাজার ৮১২ জন এবং গ্রেপ্তার হয়েছে ২ হাজার ৫৫৫ জন। এই হচ্ছে গণতন্ত্রের নুমনা বর্তমান সরকারের, তাদের পরিবেশ তৈরি করার নমুনা।”
ফখরুল বলেন, “আমরা এসব গ্রেপ্তার, মিথ্যা মামলা দায়েরের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা আশা করি যে, অবিলম্বে কারাগারে আটক সকলকে মুক্তি দেবে (সরকার)।”
সোমবার চট্টগ্রাম যুব দলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তিসহ চার নেতাকে কুমিল্লা হাইওয়ে থেকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে তাদের মুক্তির দাবিও জানান বিএনপি মহাসচিব।