দলটি মনে করে, আওয়ামী লীগ আমলে গঠিত স্থানীয় সরকারের এই প্রতিষ্ঠানগুলো বহাল রেখে সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন সম্ভব হবে না।
Published : 26 Sep 2024, 11:34 PM
শেখ হাসিনা সরকারের আমলে গঠিত ইউনিয়ন পরিষদ ভেঙে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বিএনপি।
দলটি মনে করে, ‘প্রহসনের মাধ্যমে’ গঠিত ইউনিয়ন পরিষদ পতিত সরকারের ‘হাতিয়ার’ হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এই ইউনিয়ন পরিষদ বহাল রেখে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।
বৃহস্পতিবার দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের তিন দিন পর শপথ গ্রহণ করা অন্তর্বর্তী সরকার সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ ও উপজেলা পরিষদ ভেঙে দিয়ে প্রশাসক নিয়োগ দেয়। বরখাস্ত করা হয়েছে পৌর মেয়রদেরও। তবে কেবল যেসব ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যানরা লাপাত্তা, সেগুলোতে প্রশাসক দেওয়া হয়েছে।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ইউনিয়ন পরিষদ নিয়ে আলোচনা হয়।
`পাবর্ত্য চট্টগ্রাম পরিস্থিতিকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই’
খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে পাহাড়ি-বাঙালি সংঘাতকে চক্রান্ত বলেও মনে করে বিএনপি।
দলটির ধারণা, অন্তর্বর্তী সরকারকে অস্থিতিশীল করার ‘সুদূর প্রসারী চক্রান্তের অংশ’ হিসাবে পার্বত্য চট্টগ্রামে এই ধরনের সংঘাতের সৃষ্টি করা হচ্ছে যা সম্পূর্ণ রূপে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
এই ঘটনা দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্তের প্রতি হুমকি স্বরূপ উল্লেখ করে বিএনপির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এসব ঘটনাকে হালকা করে দেখার কোনো সুযোগ নেই।”
পার্বত্য জেলাগুলোতে শান্তি স্থাপনের জন্য দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দল, পার্বত্য জেলায় সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ এবং অংশীজনদের একটি জাতীয় কনভেনশন আহ্বান করা জরুরি বলেও মনে করে বিএনপির স্থায়ী কমিটি।
এই লক্ষ্যে পদক্ষেপ গ্রহণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তারা।
মাজারে হামলা, শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা ‘ক্ষমতায় ফেরার চক্রান্ত’
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সারাদেশে মাজারে মাজারে যে হামলা ও শিল্পাঞ্চলে যে অস্থিরতা ঘটছে, তাকেও ক্ষমতায় ফেরার পথ খুঁজতে চক্রান্ত বলে মনে করে বিএনপি।
দলের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় মনে করে, পতিত ‘ফ্যাসিবাদ’ ক্ষমতায় ফিরে আসার জন্য পরিকল্পিতভাবে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মাজারে হামলা, ভাঙচুর ও ‘মব লিনচিং’ এর মত ঘটনা ঘটিয়ে শিল্পাঞ্চল, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। দেশকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা করছে।”
এসব বিষয়ে সরকারের উদ্যোগে সকল গণমাধ্যমে জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং রাজনৈতিক দলগুলোর প্রচার প্রচারণা বাড়ানো প্রয়োজন বলেও মনে করে বিএনপি।
সভায় এসব সমাজবিরোধী এবং ঐক্য বিনাশী কর্মকাণ্ডের তীব্র নিন্দা এবং অবিলম্বে দায়ী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা জরুরি বলে মত দেওয়া হয়।
ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর বক্তব্যের নিন্দা
‘বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের উল্টো করে ঝুলিয়ে সোজা করা হবে’ বলে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ যে বক্তব্য দিয়েছেন, তারও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটি।
এসব বক্তব্য দুই দেশের জনগণের মধ্যে সুসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য ‘অন্তরায়’ হিসাবে কাজ করবে বলেও মনে করেন নেতারা। ভারতীয় কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও নেতাদেরকে এই ধরনের মন্তব্য থেকে বিরত থাকার আহ্বানও জানান তারা।
এই ধরনের মন্তব্যের কঠোর সমালোচনা করায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটি সন্তোষ জানিয়েছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে স্থায়ী কমিটির এই বৈঠকে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আব্দুল মঈন খান, সালাহ উদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ এবং এ জেড এম জাহিদ হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বিদেশে থাকায় আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু অনলাইনে যুক্ত ছিলেন।