Published : 15 Dec 2023, 02:56 PM
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবি যা বলছে, তাতে ‘বিএনপির সুর’ পাচ্ছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
শুক্রবার আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি প্রশ্ন রেখেছেন, তবে কি টিআইবি ‘বিএনপির শাখা সংগঠনে’ পরিণত হয়েছে?
ওবায়দুল কাদের বলেন, “নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে, একদিকে সন্ত্রাস সহিংসতা বিএনপি ও তার দোসরদের, অন্যদিকে গুজব ভয়ঙ্করভাবে বিস্তৃত হচ্ছে। এক একটা বিষয় নিয়ে হঠাৎ করে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে। আমাদের দেশে এখন যারা মুক্তবুদ্ধির চর্চা করেন বলে দাবি করেন, যারা মানবাধিকারের প্রবক্তা, যেমন টিআইবি…।
“এখনো ২৮টি দল নির্বাচন অংশ নিচ্ছে, তারপরও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন কেন হবে না, এ প্রশ্নের উত্তর টিআইবির কাছে পাওয়া যাবে না। তারা জেনেশুনেই এটা করছে। বিএনপির ভাবার্দশ, মতাদর্শের প্রবক্তা হয়ে তারা ‘চোখ থাকতে অন্ধ’। এরকম একটা ভূমিকাতেই তারা অবতীর্ণ হয়েছে।”
বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে টিআইবির পক্ষ থেকে বলা হয়, “তফসিল ঘোষণার আগে ও পরের পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলতে যা বোঝায় তা এবারও হবে না, যা চরম হতাশাজনক।”
এর প্রতিক্রিয়ায় সরকারের সেতুমন্ত্রী কাদের বলেন, “আমরা টিআইবির কাছে জানতে চাই, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলতে কী বোঝায়? ২৮টি নিবন্ধিত দল অংশ নিচ্ছে, বিএনপিসহ কয়েকটি দল নির্বাচন থেকে দূরে রয়েছে। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে না, এর অর্থটা কী? টিআইবি বিএনপির শাখা সংগঠন। তারা একই সুরে কথা বলে।”
আগামী নির্বাচন কেমন হবে, সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেওয়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বৃহস্পতিবার বানরের পিঠা ভাগের গল্প মনে করিয়ে দেন। তার ভাষায়, “যা হতে চলেছে, সেটি নির্বাচন নয়, হবে ভোট ভাগাভাগি।”
এর প্রতিক্রিয়ায় ওবায়দুল কাদের বলেন, “কিসের ভাগাভাগি? বানরের পিঠা ভাগ নাকি হচ্ছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে কোনো মূল্যে এই নির্বাচনকে সুষ্ঠু, অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন হিসেবে, একটা রেকর্ড আমরা দেখাতে চাই। নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের প্রাণ, কাজেই নির্বাচন ব্যবস্থাকে গণতান্ত্রিক করায় আমাদেরও দায়িত্ব আছে।”
ভোটের মাঠে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের যেসব অভিযোগ আসছে, সে বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “আমরা সরকারি দল হলেও আমাদেরকে নির্বাচনের আচরণবিধি মেনে চলতে হয়। আচরণবিধি লঙ্ঘন হলে নির্বাচন কমিশনের যে ব্যবস্থা দেখছি, তাদের যুক্তিযুক্ত সকল ব্যবস্থায় আমরা সহায়তা করে যাব। নির্বাচন কমিশন নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু করার জন্য কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, সেগুলোকে আমরা সমর্থন দিয়েছি।
“আমাদের যেসব প্রার্থী বিধি অনুযায়ী প্রার্থিতা হারিয়েছে, আমরা কারো ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে প্রভাবিত করার কোনো চেষ্টা করিনি এবং করব না।”
ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমরা ১৮ ডিসেম্বর থেকে দেখব কারা ভোটারদের নিরুৎসাহিত করে, নির্বাচনি কাজে কারা বাধা দিচ্ছে। নাশকতার ব্যাপারে তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সক্রিয় রয়েছে। তারপরও দেশের গুপ্ত যে কর্মকাণ্ড, নাশকতা, এগুলো বিছিন্নভাবে করার সুযোগ আছে। এগুলো করতে হাজার হাজার লোকের দরকার হয় না। চোরাগোপ্তা হামলা কিছু লোক করতে পারে। অনেক সময় ধরা পড়ছে, ধরা পড়ছে না। এসব কাজ একটা মহল করছে।”
নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে এসব ‘অপতৎপরতা, নির্বাচন বিরোধী অপকর্ম, নাশকতা, সহিংসতা’ আরো বাড়াবে বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা।
তিনি বলেন, “তারা প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা খবর পেয়েছি, তারা নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য অস্ত্রের মহড়া দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমরা খবর পেয়েছি, তারা অস্ত্র জোগাড় করছে। নির্বাচনে হামলা করার জন্য তারা অস্ত্র ব্যবহার করবে, এরকম খবর আমরা পেয়েছি।”
ওবায়দুল কাদের বলেন, “বিএনপির অস্ত্র সংগ্রহের খবর গোয়েন্দাদের কাছেও আছে। অস্ত্র সংগ্রহ করা এখন কোনো কঠিন ব্যাপার না। আজকে অস্ত্রের ব্যবসা সারা দুনিয়াতে আছে।”
তিনি জানান, বিজয় দিবস উপলক্ষে শনিবার আওয়ামী লীগের কর্মসূচি শুরু হবে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে। ১৭ ডিসেম্বর হবে আলোচনা সভা। ১৮ ডিসেম্বর সারাদেশে একযোগে বিজয় শোভাযাত্রা করা হবে।