“যে জায়গায় দেশ দাঁড়িয়েছে, এখান থেকে উত্তরণের কী পথ, আমরা কী চিন্তা করছি আর ওরা কী করতে পারে, তা জানতে চেয়েছেন,” ব্রিফিংয়ে বলেন খসরু।
Published : 22 Aug 2024, 04:31 PM
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেটো রেঙ্গলি।
ঢাকার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার সকালে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে দেশে সরকারপতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থা, বাংলাদেশে গতিপথ এবং পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা নিয়ে তারা আলোচন করেন।
বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী আলোচনার বিস্তারিত সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।
খসরু বলেন, “আজকে সুইস অ্যাম্বেসেডর এসেছেন দেখা করতে। বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের রোডম্যাপ, বাংলাদেশ কোন দিকে যাচ্ছে, ভবিষ্যৎ কী- এসব বিষয় নিয়ে আমাদের মতামতটা জানতে চেয়েছেন। বিএনপির চিন্তা-ভাবনা কী ভবিষ্যতে জানতে চেয়েছেন।
“মূলত বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতিসহ যেসব রাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে গেছে। যে জায়গায় গিয়ে (দেশ) দাঁড়িয়েছে, এখান থেকে (উত্তরণের) কী পথ? আমরা কী চিন্তা করছি? আর ওরা কী করতে পারে, এ ব্যাপারে জানতে চেয়েছেন।”
দেশের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো ‘নাজুক অবস্থায়’ আছে মন্তব্য করে খসরু বলেন, “এগুলোকে আমরা কীভাবে রেস্টোর করতে পারি? সেখানে (বৈঠকে) আমরা আলোচনা করেছি। আর্থিক খাত বলুন, রাজনীতি বলুন, নির্বাচনি কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত যে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো আছে, সেগুলোকে রিকভারি কীভাবে করা যায়, এগুলোর ক্যাপাসিটি বিল্ডিং কীভাবে করা যায়? প্রথমে এগুলোকে রেস্টোর করতে হবে, এগুলোকে ট্র্যাকে আনতে হবে, আনার পরে কীভাবে এগুলোকে একটা কার্য্কর অবস্থানে নিয়ে আসা যায়? এগুলোর বিষয়ে তারা সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।
“বাংলাদেশে ভবিষ্যতে রাজনীতি, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে, গণতন্ত্রকে সঠিক অর্ডারে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে যে কাজগুলো করা দরকার, যে প্রতিষ্ঠানগুলো দরকার সেগুলোতে তারা সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে।”
‘পাচার হওয়া অর্থ ফেরাতে সহযোগিতা করবে’
আমীর খসরু বলেন, “বাংলাদেশ থেকে আমরা বারবার বলেছি, ১০০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে পাচার হয়েছে। বাংলাদেশে আজকে অর্থনৈতিক অবস্থা, রিজার্ভের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে সেটা আমরা জানি। একটা কঠিন অবস্থা…। তারা (আওয়ামী লীগ সরকার) এত টাকা পাচার করেছে যে, দেশের রিজার্ভ একেবারে তলানিতে। দৈনিন্দিন জীবনে প্রত্যেক নাগরিক এটার প্রভাব অনুভব করতে পারছে। এরকম অবস্থায় চলে গেছে।”
পাচার হওয়া অর্থ ফেরানোর বিষয়ে সুইজারল্যান্ড সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “যে টাকা পাচার হয়েছে, তা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সুইজারল্যান্ড তাদের আগের অবস্থানে আছে। তারা বলেছে- এই টাকা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের যেকোনো উদ্যোগতে তারা স্বাগত জানাবে এবং তারা সহযোগিতা করবে। এটা হচ্ছে একটা ভালো খবর।
“এই টাকাগুলো ফিরিয়ে আনতে হবে। বাংলাদেশের এত সম্পদ লুণ্ঠন হয়েছে, এত টাকা দেশের বাইরে গেছে যে, এগুলো যদি আমরা ফিরিয়ে আনতে না পারি এই অর্থনীতিকে রিকভার করা খুবই কঠিন হবে। সুতরাং তাদের সহযোগিতার দিকটা আমি মনে করি, তাদের আশ্বাস আমরা পেয়েছি। নিশ্চিতভাবে তারা সহযোগিতা করবে।”
ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে খসরু বলেন, “বাংলাদেশের জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে। এ কথা আমরা ১৬/১৭ বছর ধরে বলে আসছি। অর্থাৎ জনগণ সিদ্ধান্ত নেবে দেশ পরিচালনার ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিরা তাদের কাছে জবাবদিহি থাকবে। এটা হচ্ছে গণতন্ত্রের মূলমন্ত্র। এই জায়গায় কোনো দ্বিমত থাকার সুযোগ নাই।
“আমরা বলতে চাই, এটা একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যারা এই কাজগুলো করবে। আমরা কোনো সময়সীমা তাদেরকে বেঁধে দিইনি। তবে একটা যৌক্তিক সময় দিয়েছি। এই যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য একটা নির্বাচন হবে। এটা সকলে প্রত্যাশা করে এবং যারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে আছে, তারাও কিন্তু এটা বিশ্বাস করে।
“এখানে আমাদের সঙ্গে তাদের কোনো দ্বিমত নেই। আমরা এই অন্তর্বতীকালীন সরকরকে সার্বিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি এবং দিয়ে যাবো। কারণ দিনের শেষ তো আপনি জনগণের মালিকানা জনগণের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে।”