“বিএনপি যে কোনো মূল্যে দেশে ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনবে”, বলেন বিএনপি নেতা।
Published : 19 Nov 2024, 09:45 PM
বিএনপির নির্বাচন দেওয়ার দাবি অন্তর্বর্তী সরকার দৃশ্যত উপেক্ষা করার মধ্যে নেতাকর্মীদেরকে ‘ষড়যন্ত্রের’ বিষয়ে সতর্ক করেছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
মঙ্গলবার রাজধানীর কাকরাইলের ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বিএনপি আয়োজিত এক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এই সতর্কতা দেন।
‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্ত’ শীর্ষক এই কর্মশালায় তারেক রহমান বলেন, “দেশে কোথাও একটা ষড়যন্ত্র চলছে। এজন্য জনগণকে সচেতন করতে হবে। সঙ্গে থাকতে হবে, সঙ্গে রাখতে হবে জনগণকে।”
রাজনৈতিক ‘মুক্তির’ জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এজন্য স্বাধীন ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে হবে। বিএনপি যে কোনো মূল্যে দেশে ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনবে।”
সংবিধানে সংসদ ভেঙে দেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলা আছে। দৈব দুর্বিপাকে সেটি করা না গেলে আরও ৯০ দিন সময় নেওয়া যায়। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার বলছে, আগে ‘সংস্কার’ পরে নির্বাচন। বিএনপি বারবার তাগাদা দিলেও নির্বাচনের কোনো রূপরেখা দিচ্ছে না সরকার।
তারেক রহমান যেদিন এই প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বক্তব্য দেন, একই দিন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “এটা থেকে জাতিকে রক্ষা করার একমাত্র উপায় সকলের সাথে আলোচনা করে অতি দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।
“আমরা রাজনীতিবিদরা বলছি, আমরা বলছি যারা আমরা একটু বয়স্ক-প্রাজ্ঞ, বলছি নির্বাচন দ্রুত করুন।”
আন্দোলন করে কী লাভ হল, সাধারণ মানুষের মধ্যে এই কথা উঠতে শুরু করেছে বলেও সতর্ক করেন বিএনপি নেতা।
আরও পড়ুন: সাধারণ মানুষের কথায় 'ব্যাড সাইন', দ্রুত ভোট চান ফখরুল
তারেক রহমান বলেন, “নির্বাচনের জবাবদিহিতা, প্রতিনিধির জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাই মূল কাজ হবে। রাজনীতি রুগ্ন হলে অর্থনীতি রুগ্ন হয়। রাজনীতি ও অর্থনীতি রুগ্ন হলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা সব ব্যবস্থাই রুগ্ন হবে। তাই জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে জনপ্রতিনিধিদের মধ্যে।”
বিএনপির ৩১ দফার বাইরে ভালো কোনো সংস্কার প্রস্তাব এলে তা গ্রহণ করা হবে, এমনটা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ক্ষমতায় গেলে তা নিয়ে কাজ করা হবে। ‘উঠান বৈঠক সংস্কৃতি’ ফিরিয়ে এনে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব সর্বস্তরের মানুষের মাঝে পৌঁছে দিতে হবে। এর ফলে দেশের সংস্কার করা সম্ভব।”
৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব মাঠ পর্যায় জনগণের কাছে তুলে ধরার জন্য নেতা-কর্মীদের নির্দেশনা দেন তারেক।
২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেপ্তার হয়ে পরের বছর চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যাওয়া তারেক রহমান দেশে ফেরেননি আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরেও।
আওয়ামী লীগ সরকারের থাকার সময় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলা মামলায় বিএনপি নেতার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। বিদেশে অর্থপাচার মামলায় তার ৭ বছরের কারাদণ্ড এবং ২০ কোটি টাকা জরিমানা এবং জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ১০ বছরের কারাদণ্ড ও আর্থিক জরিমানার রায় আছে।
বঙ্গবন্ধুকে কটূক্তির মামলাতেও সাজা পেয়েছেন বিএনপি নেতা, যাবে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ৫ বছরের সাজা পেয়ে সেদিন খালেদা জিয়া কারাগারে যান।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে বিএনপি তারেক রহমানের সাজা বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে। গত তিন মাসে বেশ কিছু মামলায় তিনি খালাস পেয়েছেন, তবে বিদেশে থাকায় সাজা হওয়া মামলায় তিনি আপিল করতে পারছেন না।
আপিল করতে হলে তারেককে দেশে ফিরতে হবে। তবে তিনি কবে ফিরবেন, এটি নিশ্চিত নয়।
‘দেশনায়ক বা রাষ্ট্রনায়ক বলবেন না’
বিএনপির নেতাকর্মীরা তারেক রহমানকে যেসব উপাধি দিয়েছে, সেসব উপাধি নিয়ে আপত্তি জানান তিনি।
তারেক বলেন, “আপনাদের সহকর্মী হিসেবে এটি আমার অনুরোধ, আপনাদের নেতা হিসেবে এটি আমার নির্দেশ- আজকের পর থেকে দয়া করে আমার নাম যখন কেউ ‘দেশনায়ক’, ‘রাষ্ট্রনায়ক’, এই কথাগুলো বলবেন না।
“আমি আবারও বলছি, আমার নামের সাথে আজকের পর থেকে কেউ ‘দেশনায়ক’, ‘রাষ্ট্রনায়ক’ ব্যবহার করবেন না।”
প্রশিক্ষণ কর্মশালায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খানও বক্তব্য রাখেন।