‘সরকারের দড়ি ধরে’ টান মারার সময় এসেছে: ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব বলেছেন, “এরা সহজে যায় না, এদেরকে ধাক্কা মারতে হয়।”

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 March 2023, 03:30 PM
Updated : 8 March 2023, 03:30 PM

বিএনপির ১০ দফা দাবি মেনে সংসদ বিলুপ্ত না করলে ‘সরকারের ফয়সালা’ রাজপথে করা হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বুধবার বিকালে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেছেন, “আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, কোনো কথা বলে লাভ হবে না। এখনও সময় আছে, আমরা যে ১০ দফা দিয়েছি সেই ১০ দফা মেনে নিন। পদত্যাগ করুন, সংসদ বিলুপ্ত করুন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন…।

বারবার একই কথা বললে সরকারের ‘গায়ে লাগে’ মন্তব্য করে একটি সিনেমার সংলাপের প্রসঙ্গ টানেন ফখরুল। তিনি বলেন, “আমি খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমাদের সামনে কোনো বিকল্প নাই। এরা সহজে যায় না, এদেরকে ধাক্কা মারতে হয়।

“আপনাদের অনেকে ‘হীরক রাজার দেশে’ ছবিটা দেখেছেন না? ছবিতে কী বলছে- দড়ি ধরে মারো টান, রাজা হবে খান খান। সুতরাং দড়ি ধরে টান মারার সময় এসেছে।”

ফখরুল বলেন, “আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব তিনি আমাদেরকে খুব স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন যে, ফয়সালা হবে রাজপথে। রাজপথেই আমরা আছি, রাজপথেই এর মীমাংসা আমরা করব ইনশাল্লাহ।

সরকারের উদ্দেশ্যে বিএনপির মহাসচিব বলেন, “এটাই শেষ সময়, এটা মেনে নেন। তা না হলে বার বার একই কথা বলেছি, আবারও বলছি, পালাবার পথ খুঁজে পাবেন না। এই কথা বললে আপনাদের গায়ে লাগে। বলেন, ‘কোথায় পালাব?’ পালিয়েছেন তো অতীতে। সব পালিয়েছেন।

“কেউ পাকিস্তানে পালিয়েছেন, কেউ ভারতে পালিয়েছেন ১৯৭১ সালে। এবার কিন্তু সেই পথও খুঁজে পাবেন না। আবারও বলছি, দয়া করে পরিবর্তন নিয়ে আসুন। এই সঙ্কট উত্তরণ করুন। নইলে কোথাও পালাবার পথ পাবেন না।”

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ‘১৭তম কারাবন্দি দিবস’ উপলক্ষে বিএনপি এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।

ফখরুল বলেন, “এই কারাবন্দি দিবস তখনই আমাদের সফল হবে যখন আমরা ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এদেরকে পরাজিত করে জনগণের সরকার, জনগণের একটা দেশ, মুক্ত একটা সমাজ, গণতান্ত্রিক সমাজ, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন করতে পারব, আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে পারব, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পারব- তাহলেই হবে সফলতা।”

এদিকে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিউশন মিলনায়তনে বক্তব্য দিয়ে ফেরার পথে যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোনায়েম মুন্নাকে পুলিশ আটক করেছে বলে বিএনপির কয়েকজন নেতা-কর্মী জানান। পরে যুবদল উত্তরের সাবেক সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীরকেও আটক করার অভিযোগ করেছে দলটি।

গ্রেপ্তারের আগে মুন্না আলোচনাসভায় অংশ নিয়ে বক্তব্যও দেন। বক্তব্য শেষ করে বাসায় যাওয়ার জন্য বের হলে পুলিশ তাকে আটক করে। আর অনুষ্ঠান শেষে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে গাড়িতে তুলে দেওয়ার পর আটক হন জাহাঙ্গীর।

মুন্নার আটক হওয়ার কথা মির্জা ফখরুল বক্তব্য দেওয়ার আগেই জানতে পারেন। পরে বক্তব্যে দেওয়ার সময় এর নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি অবিলম্বে মোনায়েম মুন্নাকে মুক্তির দাবি জানাচ্ছি। রুহুল কবির রিজভীসহ আটক নেতাদের মুক্তি দাবি করছি।

“এভাবে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার করা, আটক করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় জনগণ এর প্রতিরোধে গড়ে তুলবে, এর জবাব আপনাদেরকে দেওয়া হবে।”

‘পঞ্চগড়ের ঘটনা আওয়ামী লীগের সৃষ্টি’

পঞ্চগড়ে আহমদীয়া সম্প্রদায়ের ওপর হামলার প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, “ওই হামলার ঘটনায় আমাদের জড়ানোর জন্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বক্তব্য দিয়েছেন যে, বিএনপিও জড়িত আছে। আমাদের প্রায় দেড়শ মানুষকে সেখানে গ্রেপ্তার করেছে। এখন পঞ্চগড় থেকে মানুষ বাইরে চলে যাচ্ছে।

“এর উদ্দেশ্যটা কী? উদ্দেশ্য একটাই, আবার সেই ষড়যন্ত্র করে বিএনপিকে আবার সাম্প্রদায়িক ঘটনার জন্য দায়ী করে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপাতে চায়। কিন্তু এখন আর জনগণ তাদের সেই কথা শুনবে না, তাদের সেই মিথ্যা মন্তব্য শুনবে না।”

আওয়ামী লীগই এই ঘটনাগুলো ঘটিয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “ইতোমধ্যে তাদের (সরকার) রেলমন্ত্রী সেখানে গিয়েছিলেন। রেলমন্ত্রী যখন সেখানে গেছেন তখন আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকেদের জিজ্ঞাসা করেছেন এর জন্য দায়ী কে, কারা করেছে? তখন তারা বলেছেন, আপনার (মন্ত্রী) পাশে যারা যারা আছে তারাই এজন্য দায়ী, আওয়ামী লীগের লোকেরা করেছে।

“কীভাবে দেশ চালায়? পর পর তিন দিন বিস্ফোরণ হল। সায়েন্স ল্যাবরেটরির কাছে হলে, চট্টগ্রামে হল, ঢাকায় গতকালের বিস্ফোরণে ১৯ জন প্রাণ দিয়েছেন। কারও কোনো দায় নেই। সরকার চালাচ্ছ তোমরা? তোমাদের সব প্রতিষ্ঠান আছে- যাদের দায়িত্ব হচ্ছে এগুলো দেখা যে, কোথায় ঠিক মত আছে কি না, সেগুলোর দিকে তোমাদের কোনো নজর নেই। নজর একটাই চুরি করা, দুর্নীতি করা।”

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দিন চৌধুরীর সঞ্চালনায় সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজমদ খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লা্হ আমান, আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, আবদুস সালাম আজাদ, রাকিবুল ইসলাম বকুল, মহিলা দলের হেলেন জরিন খান, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, যুব দলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, আবদুল মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের এস এম জিলানি, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, মৎস্যজীবী দলের রফিকুল ইসলাম মাহতাব, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ ও ছাত্র দলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল বক্তব্য দেন।