১৪ দফা দাবিতে গণতন্ত্র মঞ্চ আগামী ১৯ থেকে ২১ জুলাই ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোড মার্চ করবে।
Published : 19 Jun 2023, 04:48 PM
বিদ্যুৎ সংকটের সমাধান, লোডশেডিংয়ে প্রতিবাদ এবং নিত্যপণ্যের দাম কমিয়ে আনার দাবিতে গণতন্ত্র মঞ্চের সচিবালয় অভিমুখের বিক্ষোভ মিছিলে বাধা দিয়েছে পুলিশ।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গণতন্ত্র মঞ্চের নেতাকর্মীরা সোমবার বেলা ১২টার দিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হন। সেখানে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সরকারের পদত্যাগ ও অন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচনসহ ১৪ দাবিতে ঈদের পরে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোড মার্চ কর্মসূচির ঘোষণা দেয় সংগঠনটি।
পরে দুপুর ১টার দিকে তিন শতাধিক কর্মী নিয়ে সচিবালয় অভিমুখে মিছিল নিয়ে এগিয়ে যান গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা। মিছিলটি ঢাকার তোপখানা রোড, পুরান পল্টন মোড় হয়ে জিরো পয়েন্টের কাছে গেলে পুলিশ সেখানে কাঁটাতারের ব্যারিকেড দিয়ে তাদের আটকে দেয়।
ওই ব্যারিকেডের সামনে প্রায় আধা ঘন্টা অবস্থান করে বিক্ষোভ করেন নেতা-কর্মীরা।
ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোড মার্চ
গণতন্ত্র মঞ্চের শরীক রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী হাসনাত কাইয়ুম প্রেস ক্লাবের সংক্ষিপ্ত সমাবেশ থেকে ঈদের পরের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
তিনি বলেন, “এই সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত, অন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনে নির্বাচন, সংবিধানের সংস্কারসহ ১৪ দফা দাবিতে আমরা আগামী ১৯ থেকে ২১ জুলাই ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম অভিমুখে রোড মার্চ করব।”
ওই রোড মার্চের আগে গণতন্ত্র মঞ্চ জেলায় জেলায় ও বিভাগীয় শহরগুলোতে সমাবেশ এবং ঢাকায় পদযাত্রা করবে বলেও জানান হাসনাত কাইয়ুম।
তিনি বলেন, “এসব কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জনগণ শুধু সরকার বদল নয়, শাসন ব্যবস্থা বদলের লড়াইকে জয়যুক্ত করবে, এই আশাবাদ আমরা ব্যক্ত করছি।”
সরকারের অবস্থা ‘ডায়রিয়া ও কলেরার মত’
সমাবেশে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, “দেশের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। এ সরকারের অবস্থা ডায়রিয়া ও কলেরার মত হয়েছে। দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, মানবাধিকার, সুশাসন কিছুই নাই। এদের চলে যেতে হবেই।
“আইয়ুব খানও যেতে চায়নি, কিন্তু পরে তাকে যেতে হয়েছে। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই, এই সরকারও ক্ষমতা ছাড়তে হবে…।“
সরকারের মন্ত্রীদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “সরকারি দলের মন্ত্রীরা এমন কথা বলে মাঝে মাঝে আসলে খুটার জোরে… ছাগল নাচে খুটার জোর। এদের পায়ের তলায় মাটি আছে কিনা সেটা জানে না।“
জনগণকে রাস্তায় নামিয়ে দাবি আদায় করতে হবে বলেও মন্তব্য করেন রব। সরকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, প্রশাসনের দলীয় লোকজন পদোন্নতি দেওয়া হচ্ছে। এটার পরিণতি শুভ হবে না।
প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষ থেকে জনগণের পক্ষে থাকার আহ্বান জানান রব।
ডিসেম্বর-নভেম্বর ‘কাটিং টাইম’
সরকারকে ‘স্বৈরাচারী, লুটপাটকারী, ডাকাত, অত্যাচারী’ আখ্যা দিয়ে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করছে সরকার । আগে শুধু আমরা বলতাম, তখন বিভিন্ন রকম ভয়ভীতি দেখাত, জনগণকে বিভ্রান্ত করবার জন্য বিভিন্ন রকম কাহিনী বানাত।”
“এখন জাপানি অ্যাম্বেসেডর বলে দিনের ভোট রাত্রে হয় আমরা তো দেখিনি, এখন আমেরিকা বলে তোমাদের ভোট ঠিক হয়নি, এটা এখন আমরা জানতে পেরেছি। ইউরোপ বলে, সারা দুনিয়া বলে বাংলাদেশে এখন একটা ভোট ডাকাত সরকার আছে। সেজন্য আমরা বলি তোমরা যাও, মানে মানে চলে যাও, তোমাদের চলে যেতে হবে।”
গণতন্ত্র মঞ্চের আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে মান্না বলেন, “আমরা কর্মসূচি নিয়ে ধাপে ধাপে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। আমরা জানি, নভেম্বর ইজ দি কাটিং টাইম, ডিসেম্বর ইজ দি কাটিং টাইম। এর মধ্যে সরকারের কাটাকাটি শেষ করতে হবে। নিজের থেকে করবে, নইলে আমরা করব। সেই লক্ষ্যে ঈদের পরে আরও বৃহত্তর সর্বব্যাপক ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রত্যয় ঘোষণা করছি।”
বটবৃক্ষ ‘যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে’
গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাক সাইফুল হকের ভাষ্য, বাজার এখন সরকারের ‘নিয়ন্ত্রণের বাইরে’।
তিনি বলেন, “মুনাফার উপর থেকে নিচ পর্যন্ত সব জায়গায় ভাগ-বাটোয়ারা হয়ে যাচ্ছে। সেই কারণে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এ বছরেই ৫০-৬০ লক্ষ মানুষ নতুন করে দ্রারিদ্র্য সীমার নিচে নেমে এসেছে। যদি এভাবে চলে এই বছরের শেষের দিকে আরো ৫০-৬০ লক্ষ মানুষ বাজারের অগ্নিমূল্যের কারণে মানুষ দারিদ্র্য সীমার নিচে নেমে আসবে।”
এই নেতার ভাষ্য হল, বর্তমান পরিস্থিতি বলে দেয়, সরকার ‘দেশ চালাতে পারছে না’।
“মানুষ বলে, এরা গত ১৫ বছরে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা আত্মসাত করেছে, আগামী ২০০ বছর এদের ১৪ পুরুষ খেয়েও ওই টাকা শেষ করতে পারবে না।”
সরকারকে ‘বটবৃক্ষ’র সঙ্গে তুলনা করে সাইফু হক বলেন, ”সেই বটবৃক্ষের শেকড়গুলো এখন উপড়ে গেছে, শেকড় আর নাই। জনগণের যে পুঞ্জিভূত ক্ষোভ, গণআন্দোলন-গণসংগ্রাম যেভাবে জেগে উঠছে আরেকটা ধাক্কা দিলে এই যে বটবৃক্ষ যে কোনো সময় ভেঙে পড়তে পারে। “
সরকারকে উদ্দেশ্য করে সাইফুল হক বলেন, “অনতিবিলম্বে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়ার রাস্তা এখনো খোলা আছে। আপনারা সেখানে কীভাবে পদত্যাগ করবেন, কীভাবে অন্তবর্তীকালীন সরকার হবে, কীভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে এর রাস্তা খোলা আছে। “
বিদ্যুৎ খাতে ‘সরকার ও তার ভাই-ব্রাদাররাই’ লুটপাট করেছে
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বিদ্যুতের সংকটের জন্য সরকারকে দায়ী করেন।
তিনি বলেন, “এই সরকার বলেছে ঘরে ঘরে বিদ্যুত দেবে। কিন্তু কত দামে দেবে আগে বলে নাই। আমরা সাশ্রয়ী বিদ্যুতে ছিলাম, কিন্তু এই সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুতের নামে যা করল, একদিকে বিদ্যুতে দাম কত হয়েছে তা আপনারা প্রত্যেকে জানেন। মাস শেষে বিদ্যুতে বিল দিতে গিয়ে অথবা ঘরভাড়ার সাথে যখন বিদ্যুতের বিল দেন তখন প্রত্যেকেরই টের পেতে হয় কয় টাকা বিদ্যুতের বিল বাবদ যায়।”
বিদ্যুতের দাম বাড়ার ফলে সব কিছুর দাম বেড়েছে মন্তব্য করে সাকি বলেন,”বিদ্যুত সংকটকে কাজে লাগিয়ে সরকার লুটপাটের যে ফন্দি এঁটেছিল, তার মাধ্যমে এই সরকার ও তার আত্মীয়-স্বজন, ভাই-ব্রাদাররা লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা লুট করেছে।“
সরকারকে ক্ষমতা থেকে ‘হটাতে’ তিনি জনগণকে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বার জানান।
ওই সমাবেশে নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার, ভাসানী অনুসারি পরিষদের হাবিবুর রহমান রিজু, জেএসডির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন পাটোয়ারি, গণসংহতি আন্দোলনের আবুল হাসান রুবেল, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির আকবর খানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।