রাজনৈতিক মতভেদ না কাটলেও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজেদের কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচনে ইভিএমের ব্যবহার, সিসি ক্যামেরা স্থাপনের বিষয় বিবেচনায় রেখে সীমানা নির্ধারণ, ফলাফল সংগ্রহে প্রযুক্তির ব্যবহার, প্রশিক্ষণ ও দক্ষ জনবল তৈরি, আইন সংস্কার, নতুন দল নিবন্ধন, চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নসহ সব কাজের প্রস্তুতিমূলক সময়সুচি থাকছে এ কর্মপরিকল্পনায়।
সেই সঙ্গে সংসদ নির্বাচনের ক্ষণ গণনা শুরুর পর তফসিল ঘোষণা ও তফসিল ঘোষণা পরবর্তী কাজগুলোর তালিকাও তুলে ধরা হবে।
বিষয়ভিত্তিক কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়নসূচি ‘শিগগিরই’ গণমাধ্যমে তুলে ধরা হবে বলে রোববার জানিয়েছেন ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
আগামী বছরের শেষ অথবা পরবর্তী বছরের শুরুতে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। তবে সেই নির্বাচনে বিএনপি ও তাদের মিত্র দলগুলোসহ আরও কয়েকটি দলের অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনও কাটেনি।
বিএনপি নির্বাচনকালীন নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। সেই সঙ্গে রোববার এক সমাবেশে বক্তৃতায় নির্বাচন কমিশন পরিবর্তনের দাবিও তুলেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের বর্তমান ইসি গত ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেয়। এর পরপরই তারা রাজনৈতিক দল, গণমাধ্যম, পর্যবেক্ষক সংস্থা, নির্বাচন পরিচালনা বিশেষজ্ঞ, ইভিএম কারিগরি বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদদের নিয়ে সংলাপ শুরু করে।
বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দলের বর্জনের মধ্যে অনুষ্ঠিত সংলাপে পাওয়া মতামত নিয়ে আইন সংস্কার, ইভিএমে ভোটগ্রহণের মতো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। নতুন দলের নিবন্ধনের আবেদনও নিচ্ছে। হালনাগাদ ভোটার তালিকায় তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে। জনশুমারির প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশের পর চূড়ান্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষা চলছে।
ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক বলেন, “কর্ম পরিকল্পনা ফাইনাল হয়েছে, চূড়ান্ত অনুমোদনও দিয়েছেন কমিশন। এ নিয়ে ব্রিফিং করবেন সিইসি মহোদয়য়, কবে নাগাদ করবেন সোমবার জানা যাবে।”
সিইসি ইতোমধ্যে জানিয়েছেন, এবার সংসদ নির্বাচনে সর্বোচ্চ দেড়শ’ আসনে ইভিএম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে ইভিএম নিয়ে অধিকাংশ দলেরই রয়েছে আপত্তি।
একজন নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন, সম্ভব হলে সব কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের ইচ্ছে রয়েছে ইসির; বাজেটে সঙ্কট হলে অন্তত ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোয় সিসি ক্যামেরা রাখা হবে।
এবিষয়ে ইসি কর্মকর্তা অশোক বলেন, “ইভিএম ও সিসি ক্যামেরা ব্যবহারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু রোডম্যাপে থাকবে না। তবে প্রযুক্তির আরও ব্যবহার বাড়ানো, প্রশিক্ষণ, দক্ষ জনবল বাড়ানো, সচেতনতা বৃদ্ধির বিষয়টি তুলে ধরা হবে।”
এক যুগ আগে এ টি এম শামসুল হুদা নেতৃত্বাধীন ইসির সময় সুনির্দিষ্ট কর্ম পরিকল্পনা ধরে এগোনোর চল শুরু হয়। পরের কমিশনগুলোও একই ভাবে চলছে।
অতিরিক্ত সচিব অশোক বলেন, “অনেকটা আগের মতোই সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ রোডম্যাপে সব কাজের সম্ভাব্য সময় ধরে বাস্তবায়নসূচি থাকবে। আগের চেয়ে কয়েকটি কাজের তালিকা অগ্রাধিকারভিত্তিতে বাড়ানো হয়েছে।”
এক দফা সংস্কার প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অংশীজনের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। যখনই কমিশন মনে করবে তখনই ফের এ ধরনের উদ্যোগ নিতে পারে।
কর্মপরিকল্পনায় এক ডজন কাজ
আইন সংস্কার
নির্বাচন প্রক্রিয়া সময়োপযোগী করতে সবার পরামর্শ
সংসদীয় আসনের সীমানা পুনঃনির্ধারণ
নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সরবরাহ
বিধি মেনে ভোটকেন্দ্রস্থাপন
নতুন দল নিবন্ধন ও নিবন্ধিতদের নিরীক্ষা
সুষ্ঠু নির্বাচনে সক্ষমতা বৃদ্ধি সংশ্লিষ্টদের
ভোটে প্রযুক্তির ব্যবহার
দক্ষ নির্বাচনী কর্মকরআর প্যানেল তৈরি ও প্রশিক্ষণ
ভোটার শিক্ষণ, সচেতনতা
পর্যবেক্ষণ সংস্থা নিবন্ধন ও নবায়ন
গণমাধ্যমকে আইনি কাঠামোয় সম্পৃক্তকরণ
যে সব কাজে অগ্রাধিকার
আইন সংস্কার
সীমানা নির্ধারণ
প্রশিক্ষণ
দল নিবন্ধন
ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ
ভোটার তালিকা