স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, কোনো ধরনের ‘অরাজকতা করবে না’ প্রতিশ্রুতি দিলে বিএনপিকে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশ করার অনুমতি দিতে পারে পুলিশ।
মঙ্গলবার ঢাকার মগবাজারে বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান কামাল কমপ্লেক্স পাঠাগার ও মধুবাগ মাঠ উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "তারা কমিশনারের কাছে পারমিশন চাইলে কমিশনার যদি মনে করেন.... কমিশনারকে সন্তুষ্ট করতে পারেন, যে তারা অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করবেন না, কোনো ধরনের জনদুর্ভোগ তৈরি করবেন না, আমার মনে হয় কমিশনার পারমিশন দেবেন।"
সরকারের পদত্যাগের এক দফা আন্দোলনে থাকা বিএনপি ২৮ অক্টোবর ঢাকার নয়াপল্টনে নিজেদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করতে চায়। সেজন্য ২১ অক্টোবর তারা ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছে আবেদনও করেছে।
এদিকে একই দিনে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেইটে শান্তি সমাবেশের ডাক দিয়েছে আওয়ামী লীগ। সেদিন রাজধানী দখলে রাখার ঘোষণা দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলটি।
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে না থাকলেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ২৮ অক্টোবর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জামায়াতে ইসলামীও।
সমাবেশের অনুমতির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (মিডিয়া) ফারুক হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হলে এমনিতেই কিছু শর্ত থাকে। অরাজকতা না করার বিষয়টিও তার মধ্যে থাকে। তবে বিএনপিকে অনুমতির বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।”
২৮ অক্টোবরের কর্মসূচির বিষয়ে করা প্রশ্নের উত্তরে আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, “দিনটি নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলেছেন। আওয়ামী লীগ কখনও কোনো আন্দোলনকে বাধাগ্রস্ত করে না।
“বিএনপিকে জনগণ আবারও ভোট দিলে তারা ক্ষমতায় যাবে, দেশের শাসনভার নিবে তাতে আওয়ামী লীগের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, “আপনারা যদি জনগণের কাছে মাফ চেয়ে আবার ভোট পেয়ে ক্ষমতায় আসতে পারেন, আসবেন। সেখানে আমাদের কিছু বলার নাই। কিন্তু আপনার অবস্থান করবেন, অচল করে দেবেন, আপনারা ভাঙচুর করবেন কিংবা ঢাকা অচল করে দেবেন। সেখানে আমাদেরও কিছু কর্তব্য থাকে। “আমাদের নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা আছেন তাদের কর্তব্য তারা পালন করবেন। আর আমাদের আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, বিএনপি অরাজকতা করলে তারাও তা রাজনৈতিকভাবে দেখবেন।”
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবশ্য আগেই বলেছেন, তাদের কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ। তবে একই দিনে পাল্টাপাল্টি রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণায় জনমনে তৈরি হয়েছে উদ্বেগ।
২৮ অক্টোবর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব ‘প্রবারণা পূর্ণিমা’ থাকায় রাজনৈতিক দলগুলোকে কর্মসূচি প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন বৌদ্ধ ধর্মীয় নেতারা।
গত বছরের ১০ ডিসেম্বরও বিএনপির গণসমাবেশের ঘোষণা নিয়ে এরকম উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল। বিএনপি নয়া পল্টনের অনুমতি চাইলেও পুলিশ তাতে সাড়া দেয়নি। ওই পরিস্থিতিতে ৮ ডিসেম্বর নয়া পল্টনে বিএনপি কর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। বিএনপি অফিস বন্ধ করে দিয়ে প্রায় পাঁচশ নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
বিষয়টি নিয়ে পরে ডিএমপির সঙ্গে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কয়েক দফা আলোচনা হয়। পরে ১০ ডিসেম্বর গোলাপবাগ মাঠে বিএনপিকে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়।