“দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণও তাদের অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে”, ইউনূসের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন মঞ্চের নেতা সাইফুল হক।
Published : 05 Oct 2024, 11:26 PM
প্রধান উপদেষ্টার মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সংলাপে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়টি নিয়েও আলোচনা করেছে কয়েকটি ছোট রাজনৈতিক দলের মোর্চা গণতন্ত্র মঞ্চ। তাদের সেই উদ্বেগের পর সরকারের তরফে বলা হয়েছে, পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণও তাদের অগ্রাধিকারে আছে।
শনিবার বিকালে মুহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে সংলাপের পর সাংবাদিকদের কাছে এসব কথা তুলে ধরেন মোর্চার নেতারা।
জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দেোলন, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন নিয়ে এই গণতন্ত্র মঞ্চ গঠিত। মঞ্চের নেতা বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, “দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছি। পুরনো ‘সিন্ডিকেট’ আবার যে নতুন চেহারায় আবির্ভূত হয়েছে, সেটা নিয়ে আমরা উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছি।
“তারা (সরকার) বলেছেন, চারটা কাজকে অগ্রাধিকার মধ্যে নিয়েছেন। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণও তাদের অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে। আমরা দেখতে চাই, মানুষ যেন এর সুফল পায়। ‘সিন্ডিকেটের’ দৌরাত্ম্য যাতে বন্ধ হয়।”
এই সংলাপের মূল বিষয় ছিল নির্বাচন। বিএনপি দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন করে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে। তবে জামায়াত বলেছে, সবার আগে প্রয়োজন সংস্কার, এরপর নির্বাচন।
বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা গণতন্ত্র মঞ্চের অবস্থানও জামায়াতের মতই। তারা ‘গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার’ করেই নির্বাচনে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
আরও পড়ুন: সংলাপ: অবিলম্বে ইসি গঠন ও ‘নির্বাচনের রোডম্যাপ’ চাইল বিএনপি
সংলাপ: নির্বাচন প্রশ্নে বিএনপি-জামায়াত ‘বিপরীত মেরুতে’
মঞ্চের সমন্বয়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, “আমরা বলেছি, আমরা একটা সরকার বদলানোর আন্দোলন করছি না, নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করছি না, সামগ্রিকভাবে আন্দোলন করছি যাতে নির্বাচন ব্যবস্থা ও সংবিধান সংস্কারের প্রক্রিয়ায় একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র করা যায়।
“আবার যাতে ‘ফ্যাসিবাদ’ ফিরে না আসে, সে কারণে সংস্কার আগে প্রয়োজন।”
তিনি বলেন, “আমরা বলেছি, যতদূর পর্যন্ত জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে সংস্কার করতে পারব, ততদূর পর্যন্ত আমরা সংস্কার করব। বাকি যেসব সংস্কার দরকার, তা পরের নির্বাচিত সরকার এসে করবে।”
মান্না বলেন, “আমরা প্রশাসনের কিছু দুর্বলতা দেখছি, সীমাবদ্ধতা দেখছি। পুলিশ ও প্রশাসনে এমন কিছু দেখছি, যা উদ্বেগ প্রকাশ করার মত। এই বিষয়গুলো আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি। তিনি জানিয়েছেন বিষয়গুলো লক্ষ্য করেছেন।”
গণসংহতির প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, “নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দল, শিক্ষার্থী, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা প্রয়োজন। একটা কাঠামো তৈরি করা দরকার, জাতীয় রাজনৈতিক কাউন্সিল হতে পারে, যেখানে অংশীজনেরা বসবেন।”
সংস্কার কমিশন রোববার থেকে কাজ শুরু করবে বলে বৈঠকে জানানো হয়েছে।
সাইফুল হক বলেন, “সংস্কার কমিশনের কাজ শেষের পরে তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) কোন কোন কাজগুলো করবেন তা নিয়ে ঐক্যমতের জায়গা আছে। কোনগুলো পরবর্তী নির্বাচিত সংসদ করবে, তাও আলাপ আলোচনা করে ঠিক করব।”
গণতন্ত্র মঞ্চের ১২ সদস্যের প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহিদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার।
পরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বাম গণতান্ত্রিক জোট, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এবি (আমার বাংলাদেশ) পার্টি, গণঅধিকার পরিষদও সংলাপে অংশ নেন।
নতুন করে ৯টি কমিশন চায় ইসলামী আন্দোলন
অন্তর্বর্তী সরকার যে ছয়টি সংস্কার কমিশন করেছে, তার সঙ্গে আরও নয়টি কমিশন গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে চরমোনাইয়ের পীরের নেতৃত্বাধীন দল ইসলামী আন্দোলন।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সংলাপ শেষে দলের আমির সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করীম সাংবাদিকদের এ কথা জানান।
তিনি জানান, তারা আইন, নাগরিক সেবা, পররাষ্ট্র, শিক্ষা, বাক স্বাধীনতা, স্বাস্থ্য, শ্রমজীবী, সংখ্যালঘু ও নৃগোষ্ঠী মহিলা ও শিশু বিষয়ক সংস্কার কমিশন করার কথা বলেছেন।
চরমোনাইয়ের পীর বলেন, “সংস্কার করেই দেশে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে, যাতে আর কোনো ‘স্বৈরাচার’ দেশে প্রতিষ্ঠা না হতে পারে।”
দলের প্রতিনিধি দলে ছিলেন সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল-মাদানী, আশরাফ আলী আকন, গাজী আতাউর রহমান, আশরাফুল আলম ও ফজলে বারী মাসউদ।