“একটি চক্র ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করতে জাতীয় পার্টিকে ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষের দল হিসেবে চিহ্নিত করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে,” বলেন জাতীয় পার্টির নেতা মীর আবদুস সবুর।
Published : 08 Oct 2024, 09:01 PM
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে হত্যার অভিযোগে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জিএম কাদের ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেরীফা কাদেরসহ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ঢাকায় বিক্ষোভ-সমাবেশ হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় চত্বরে বিক্ষোভ করেন পার্টির নেতাকর্মীরা; মিছিল নিয়ে তারা প্রেস ক্লাবের সামনেও যান।
বিক্ষোভ-সমাবেশে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা বিভাগীয় অতিরিক্ত মহাসচিব মীর আবদুস সবুর আসুদ বলেন, “জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই জাতীয় পার্টি সক্রিয়ভাবে আন্দোলনরত ছাত্রদের পক্ষে ছিল। আন্দোলনে অংশ নেওয়ার কারণে আমাদের দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রংপুরে মামলা হয়েছে পার্টির পদ-পদবী উল্লেখ করে। আমাদের নেতাকর্মীরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেওয়ার কারণে গ্রেপ্তার করে হাজতবাস করেছে।”
ছাত্র আন্দোলনে জাতীয় পার্টির ভূমিকা তুলে ধরে আবদুস সবুর বলেন, “ছয় সমন্বয়ককে আটক করা হলে জাপা তাদের মুক্তি দাবি করে। যখন গুলি চালানো হল, জাতীয় পার্টি এর প্রতিবাদ করেছে। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেছিলাম আমরা।
“রাজনীতিবিদদের মধ্যে সবার আগে রংপুরে গিয়ে শহীদ আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করেছেন আমাদের নেতা। তার শোকার্ত বাবা-মাকে সান্তনা দিয়েছিলেন তিনি। দুঃখের বিষয় হচ্ছে, একটি চক্র ঘোলাপানিতে মাছ শিকার করতে জাতীয় পার্টিকে ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষের দল হিসেবে চিহ্নিত করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে।”
ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর থেকে আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে সারা দেশে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নামে মামলা হয়েছে। এসব মামলায় সাবেক মন্ত্রী-এমপি ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের অনেকে গ্রেপ্তার হয়ে রিমান্ডে কিংবা কারাগারে রয়েছেন।
গণআন্দোলনে শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার দিন গত ৫ অগাস্ট যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া এলাকায় বিক্ষোভ-মিছিলে গুলিবিদ্ধ হন ১৪ বছরের মাহমুদুল হাসান জয়। পরদিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনায় ১০ সেপ্টেম্বর মো. রবিউল আউয়াল নামের এক ব্যক্তি ঢাকার মহানগর হাকিম সাদ্দাম হোসেনের আদালতে মামলার আবেদন করেন। বিচারক মামলা আমলে নিয়ে যাত্রাবাড়ী থানাকে এজাহার হিসেবে গ্রহণ করে তদন্তের নির্দেশ দেয়।
মামলায় আসামির তালিকায় শেখ হাসিনার সঙ্গে তার বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের, তার স্ত্রী শেরিফা কাদের, হামীম গ্রুপের উপদেষ্টা এ কে আজাদসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাসহ ৩৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
জি এম কাদের ও শেরিফা কাদেরকে আসামি করায় ওই মামলার পরই নিন্দা জানান জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। সোমবার বনানীর কার্যালয়ে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান জিএম কাদেরও দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন।
জি এম কাদের বলেন, “আন্দোলনে আমরা সমর্থন দিয়েছি, আমাদের নেতাকর্মীরা অংশ নিয়ে হামলা-মামলার শিকার হয়ে জেল খেটেছে। সেই আন্দোলনের হত্যা মামলায় জাতীয় পার্টি নেতাকর্মীদের আসামি করা হচ্ছে।”
মঙ্গলবার ঢাকায় বিক্ষোভ-সমাবেশ থেকেও জি এম কাদেরের বক্তব্য পুনরাবৃত্তি করে মীর আবদুস সবুর মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।
তিনি বলেন, “জাতীয় পার্টির সকল নেতাকর্মীদের নামে দায়ের হওয়া মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা ঘরে ফিরে যাবে না।”
সমাবেশে জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান আহাদ ইউ চৌধুরী শাহিন, যুগ্ম মহাসচিব আব্দুল হামিদ ভাসানী, সাংগঠনিক সম্পাদক হেলাল উদ্দিন হেলাল, প্রচার সম্পাদক মাসুদুর রহমান মাসুমও বক্তব্য দেন।