“যখনই ম্যাডাম নিজেকে ফিট মনে করবেন, সুস্থ বোধ করবেন তখন তিনি জনগণের সামনে উপস্থিত হবেন।”
Published : 06 Aug 2024, 05:14 PM
ক্ষমতার পালাবদলের পর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান হিসেবে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি সমর্থন প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে তাদের কাছে নামের প্রস্তাব চাওয়া হলে তারা নাম দেবেন।
তিনি বলেছেন, দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অন্তবর্তীকালীন সরকারপ্রধান পদে দলের পক্ষ থেকে এখনো কোনো নাম ঠিক করা হয়নি। এক্ষেত্রে সব দলের মতামতকে গুরুত্বে নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
মঙ্গলবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর বিএনপি মহাসচিব এক সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছিলেন।
সেখানে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নে তিনি বলেন, “এখানে আমাদের সমর্থন করার ব্যাপার না। এটা হচ্ছে যে, যখনই প্রেসিডেন্ট আমাদের কাছে প্রস্তাব দেবেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধানের নামের জন্য আমরা সেই সময়ে রাষ্ট্রপতির কাছে নাম দেব।
“এখানে এখন কনস্টিটিউশনাল হেড অব স্টেট প্রেসিডেন্ট। উনি হচ্ছে রাষ্ট্রের প্রধান তারই একমাত্র এখতিয়ার আছে এই ধরনের ব্যবস্থাগুলো নেয়ার জন্য। সুতরাং যখন রাষ্ট্রপতি আমাদেরকে ডাকবেন তখনই আমাদের যেটা নামের প্রস্তাব আমরা দেব। তবে একটা কথা বলে দেই, ছাত্রদের প্রতি আমাদের সম্পূর্ণ আস্থা আছ, তাদের আন্দোলনের প্রতি একাত্মবোধ করেছি, তাদের সাথে একাত্মবোধ করছি। এখানে বলব, সর্বদলীয় ব্যাপারটা গুরুত্ব দেওয়া উচিত যে জিনিসটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে অন্তর্বতীকালীন সরকার প্রধানের কোনো নাম স্থির হয়েছে কি না- সেই প্রশ্নে মির্জা ফখরুল বলেন, “না হয়নি।”
এদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিতে ছাত্রদের প্রস্তাবে ‘রাজি’ হয়েছেন ইউনূস।
সোমবার শেষ রাতের দিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসাবে ইউনূসের নাম প্রস্তাব করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। পারে ইউনূসের পক্ষ থেকে সেই প্রস্তাবে সাড়া মিলেছে।
বৈঠকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা এবং এর প্রধান নিয়ে ফখরুল দলের অবস্থান তুলে ধরেন।
সোমবার টানা ১৬ বছরের শাসনের অবসান ঘটিয়ে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার কয়েক ঘণ্টা পর রাতে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানসহ তিন বাহিনীর প্রধানদের নিয়ে বঙ্গভবনে যান ফখরুল ও বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে, মঙ্গলবারের মধ্যেই সংসদ ভেঙে দিয়ে অন্তর্বতীকালীন সরকারের গঠনের জন্য রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
এই সংবাদ সম্মেলনের ঘণ্টাখানেক পরই খবর আসে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। বঙ্গভবনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংসদ বিলুপ্ত করার কথা জানানো হয়।
সেখানে বলা হয়, সোমবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকেও ‘মুক্তি’ দেওয়া হয়েছে। ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও বিভিন্ন মামলায় আটকদের মুক্তি দেওয়াও শুরু হয়েছে।
‘শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভা নাই’
ফখরুল বলেন, “রাষ্ট্রপতি অঙ্গীকার করেছেন যে, যেহেতু শেখ হাসিনার পদত্যাগ করে পালিয়ে গেছে, সেহেতু শেখ হাসিনার কেবিনেট পুরোপুরিভাবে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই সংসদ বিনাভোটের সংসদ এর কোনো কার্যকারিতা নেই। সেজন্য এটাকে চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে ভেঙে দিতে হবে।”
“এরপর অন্তর্বতীকালীন বলেন, নিরপেক্ষ সরকার বলেন, তা গঠন করা হবে তারা তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান করবে।”
‘গণমাধ্যমের প্রতি কৃতজ্ঞতা’
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমি আজকে আপনাদের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে। শুভেচ্ছা জানাচ্ছি একটি গণতান্ত্রিক দেশের প্রত্যশায় এবং একই সঙ্গে আপানাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই, শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও আপনারা এই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাতার জন্যে আপনারা কাজ করেছেন।”
“দুঃখপ্রকাশ করছি এই বিজয়ের পরে কিছু সংখ্যক দুষ্কৃতকারী তারা কয়েকটি টেলিভিশন স্টেশনে অগ্নি সংযোগ করেছে, ভাংচুর করেছে। আমরা সবসময় ফ্রিডম অব প্রেসে বিশ্বাস করি, আমরা বিশ্বাস করি ব্যাক্তি, মানুষ, সংগঠন বিশেষ করে সাংবাদিকরা তারা তাদের মত একদম স্বাধীনভাবে প্রকাশ করবেন। সেই বিশ্বাসে আমরা মনে করি যে, যারা এই সমস্ত কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থেকেছেন তারা এসব থেকে বিরত থাকবেন এবং সংবাদপত্রের যে মুক্ত ধারা তা অব্যাহত রাখবেন।”
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে তৈরি হওয়া সরকার পতনের এই আন্দোলনে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছন ফখরুল।
“ছাত্র ও জনতা যারা দীর্ঘ ১৫/১৬ বছর যে গণতান্ত্রিক সংগ্রাম সেই সংগ্রামে যারা প্রাণ দিয়েছেন তাদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাই। আমরা অভিবাদ জানাতে চাই, স্যালুট জানাতে চাই, আমাদের ছাত্রদের আমাদের সন্তানদের যারা তাদের মেধা বৃদ্ধিমত্তা সাহস নিয়ে এই ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বুকে রক্ত দিয়ে ছাত্র-জনতা বিজয় অর্জন করেছেন আমরা তাদের স্যুালেট জানাই।
“আমরা সকল রাজনৈতিক দল, সকল ব্যক্তি, পেশাজীবী যারা এই সংগ্রামের সঙ্গে জড়িত ছিলেন আছেন তাদের সকলকে আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি এই বিজয় অর্জন করার জন্য।”
বিজয় ‘অর্জন’ হয়েছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, “কিন্তু আরও বড় দায়িত্ব রয়েছে, প্রতিটি স্বাধীনতা প্রিয় মানুষের প্রতিটি মানুষের, প্রতিটি নাগরিকের এ স্বাধীনতাকে সুসংহত করা।”
হামলা-লুটপাট বন্ধের আহ্বান
মির্জা ফখরুল বলেন, “আপনাদের কাছে অনুরোধ করব আপনাদের মাধ্যমে এই বার্তা দেশবাসীর কাছে পৌঁছে দিতে চাই, এখন অ্যারোগেন্সের কোনো স্থান নেই। স্থান নেই কোনো প্রতিহিংসা, কোনো প্রতিশোধ গ্রহণের।এখন যেটা প্রয়োজন, ধৈর্যের সঙ্গে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে এই অর্জিত স্বাধীনতাকে সুসংহত করা।
“এখনো যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রতিশোধমূলকভাবে অগ্নিসংযোগ করছেন, লুটপাট করছেন, বাড়ি-ঘরে হামলা করছেন, দয়া করে এটা এই মুহূর্ত থেকে বন্ধ করুন। যারা এটা করছেন, তারা কেউ আন্দোলনের লোক নয়, তারা আন্দোলনের বিরোধিতা করেছে তাদের লোকেরা এসব করছে।”
‘বেগম জিয়ার বার্তা’
মির্জা ফখরুল বলেন, “ম্যাডাম (বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া) সবাইকে প্রথম যে বলেছেন, সবাইকে শান্ত হতে বল। এখানে এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি যেন না হয় যাতে অর্জিত বিজয় ছিনিয়ে নিয়ে যায় কেউ। তিনি জনগণকে সর্তক থাকতে বলেছেন, এই বিজয় যেন কেউ ছিনিয়ে নিতে না পারে।”
খালেদা জিয়া কবে নাগাদ জনসম্মুখে আসবেন, সেই প্রশ্নে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আপনারা জানেন, ম্য্যাডাম খুব অসুস্থ। আমি গতকাল রাতে দেখা করেছি, সুতরাং যখনই তিনি ফিট মনে করবেন, সুস্থ বোধ করবেন তখন তিনি জনগণের সামনে উপস্থিত হবেন।”
তারেক রহমান কবে ফিরবেন?
মির্জা ফখরুল বলেন, “উনি (তারেক রহমান) যখনই মনে করবেন, হি ক্যান কাম ব্যাক। আমরা আমাদের অলরেডি অনুরোধ জানিয়েছি যে, দ্রুত চলে আসেন। সেই ব্যবস্থা হবে ইনশাল্লাহ।”
সংবাদ সম্মেলন গতকাল রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন আন্দোলনে হতাহতদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণের অঙ্গীকার করেছেন বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও সেলিমা রহমান উপস্থিত ছিলেন। আর স্থায়ী কমিটির ওই বৈঠকে লন্ডন থেকে স্কাইপে যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কার্যালয়ে আছেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান।
এছাড়া দেশের বাইরে থেকে ভার্চুয়ালি বৈঠকে যুক্ত হন স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সালাউদ্দিন আহমেদ।
পুরনো খবর
তিন সপ্তাহ পর খুলল বিএনপির অফিস, গুলশানে বৈঠকে স্থায়ী কমিটি