বাংলাদেশের ব্রিকসের সদস্যপদ না পাওয়ার সমালোচনা করে আমীর খসরু বলেন, “যে কাজে গিয়েছেন ওই কাজ তো হয় নাই। সুতরাং প্রত্যেক জায়গা থেকে প্রত্যাখ্যাত হবেন। সবাই প্রত্যাখ্যান করবে অবৈধকে। মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে গ্রহণযোগ্যতা পাবেন না।”
Published : 25 Aug 2023, 07:30 PM
দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া সংবর্ধনায় অংশ নিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে নৌকায় ভোট চাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
পূর্বঘোষিত ঢাকা মহানগর উত্তরের কালো পতাকা মিছিলের আগে শুক্রবার বিকালে শ্যামলী ক্লাব মাঠের সামনে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি বলেন, “ওইখানে (দক্ষিণ আফ্রিকা) প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্দেশে বক্তব্য রেখেছেন, ওই বক্তব্যে নৌকায় ভোট দিতে বলেছেন। চিন্তা করেন, আরে কোথায় যাইয়া কি কয়? ভোট হবে বাংলাদেশে, উনি দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়ে ভোট চাইছেন…অবস্থা কি বুঝেন।
“আর কি করছেন সেখানে বিএনপিকে গালিগালাজ করছেন। স্বভাবজাতভাবে যা করেন, এটা তো প্রত্যেকদিন আপনি বাংলাদেশে করতেছেন। জনগণের করের টাকা খরচ করে দলবল নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়ে বিএনপিকে গালিগালাজ করার প্রয়োজন নাই।”
১৫তম ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকায় রয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
৪০টিরও বেশি দেশ এবার ব্রিকসে যোগ দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। এর মধ্যে ২২টি দেশ এই জোটে যোগ দেওয়ার জন্য আনুষ্ঠানিক আবেদন করে, যার মধ্যে বাংলাদেশও ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ব্রিকসে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ পেয়েছে ছয় দেশ, যার মধ্যে নেই বাংলাদেশ।
এ প্রসঙ্গে আমীর খসরু বলেন, “দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়েছেন বাংলাদেশের অনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। দলবল নিয়ে, পরিবার নিয়ে, বাংলাদেশের জনগণের করের টাকা খরচ করে দক্ষিণ আফ্রিকা গিয়েছেন, কি জন্য? ব্রিকসের মেম্বার হবেন, কি হয়েছে?
“যে কাজে গিয়েছেন ওই কাজ তো হয় নাই। সুতরাং প্রত্যেক জায়গা থেকে প্রত্যাখ্যাত হবেন। সবাই প্রত্যাখ্যান করবে অবৈধকে। মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে গ্রহণযোগ্যতা পাবেন না।”
তিনি বলেন, “আজকে এই সমাবেশে আসার সময় একটা ছবি দেখলাম। দক্ষিণ আফ্রিকায় যারা গেছে ব্রিকসে, সবাই তো মেম্বার হয় নাই, বাংলাদেশও হয় নাই। তবে সবাই মিলে একটা ছবি তুলেছেন… এই ছবি হচ্ছে অফিশিয়াল ছবি। ওই ছবিতে সবাই আছে কিন্তু আমাদের অনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী নাই।
“উনার ছবি কার সাথে? উনি আর উনার মেয়ে চায়নার প্রধানমন্ত্রীর সাথে। চীনের প্রধানমন্ত্রীর সাথে বাইলেটারাল মিটিং করার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকায় যেতে হবে কেন? তৃতীয় কোনো দেশে গিয়ে কেউ বাইলেটারাল মিটিং করে না। বাইলেটারাল মিটিং হয় যেদেশে যাচ্ছেন সেই দেশের সাথে। তৃতীয় দেশে গিয়ে বাইলেটোরাল মিটিং উনাকে করতে হচ্ছে।”
আমীর খসরু বলেন, “সবার কাছে আমাদের বার্তা, দেয়ালের লিখন পড়তে শিখুন। দেয়ালে কি লেখা আছে… শেখ হাসিনা বিদায় হও। যারা এখনো দেয়ালের লিখন পড়তে পারছেন না তাদেরকে বলছি দেয়ালের লিখন পড়েন, সিদ্ধান্ত নেন, জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারবেন না। আর নিলে এই দায়-দায়িত্ব আপনাদের ওপরে বর্তাবে।”
মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আমিনুল হকের সঞ্চালনায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বক্তব্য রাখেন।
এই গণমিছিলে বিএনপির আহমেদ আজম খান, জয়নুল আবদিন ফারুক, জয়নাল আবেদীন ভিপি জয়নাল, কামরুল ইসলাম, শাহজাদা মিয়া, হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু, আতাউর রহমান ঢালী, মাহবুবউদ্দিন খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, শ্যামা ওবায়েদ, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, নাজিমউদ্দিন আলম, আজিজুল বারী হেলাল, রাকিবুল ইসলাম বকুল, শামীমুর রহমান শামীম, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, যুবদলের মামুন হাসান, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, মহিলা দলের সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, নায়েবা ইউসুফ, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, ছাত্রদলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রমুখ অংশ নেন।
‘কুশিক্ষিতরা দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে’
নয়া পল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহানগর দক্ষিণের কালো পতাকা মিছিলপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, “দেশে তিনটা শিক্ষা রয়েছে। অশিক্ষা, কুশিক্ষা আর সুশিক্ষা। আজকে জনগণের টাকায় বেতন নিয়ে কুশিক্ষিতরা বিরোধী নেতাকর্মীদের ওপর গুলি চালাচ্ছে, এই কুশিক্ষিতরা বিচারের প্রহসন করছেন, তারা জেলখানায় বিরোধী নেতাকর্মীদের পিটিয়ে হত্যা করছেন।
“এই কুশিক্ষিত লোকগুলো দেশকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। তারা দেশকে ভালোবাসে না; টাকাকে, লুটকে ভালোবাসে।
তিনি বলেন, “ব্রিটিশ শাসকরা, পাকিস্তানিরা এদেশ থেকে যা লুট করেছে, এর চেয়ে বেশি লুট করেছে এই লুটেরা সরকার, অবৈধ ফ্য্যাসিস্ট সরকার। এদের কাছে দেশপ্রেম বলে কিছু নেই।”
দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহ্বায়ক ইউনুস মৃধা ও লিটন মাহমুদের সঞ্চালনায় এই সংক্ষিপ্ত সমাবেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের রাজিব আহসান, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, ছাত্রদলের রাশেদ ইকবাল খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
দক্ষিণের কালো পতাকা গণমিছিলে অংশ নেন বিএনপির বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, মনিরুল হক চৌধুরী, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, আসাদুজ্জামান রিপন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, কামরুজ্জামান রতন, অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, মীর সরাফত আলী সপু, আবদুল খালেক, মীর নেওয়াজ আলী, রফিকুল ইসলাম, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন প্রমুখ।
সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসাবে বিএনপি রাজধানীতে এই ‘কালো পতাকা গণমিছিল’ করে।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে নয়া পল্টন থেকে রাজধানী মার্কেট এবং ঢাকা মহানগর উত্তরের উদ্যোগে শ্যামলী স্কোয়ার থেকে লিংক রোড হয়ে মোহাম্মদপুরের বছিলা চৌরাস্তা পর্যন্ত দুইটি গণমিছিল হয়।
শনিবার একই দাবিতে অন্যান্য মহানগরেও কালো পতাকা গণমিছিল করবে বিএনপিসহ সমমনা জোটগুলো।
বিএনপি ছাড়া শুক্রবার শাহবাগে গণতন্ত্র মঞ্চ, বিজয়নগরে ১২ দলীয় জোট, পুরানা পল্টনে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, আরামবাগে গণফোরাম ও পিপলস পার্টি, পান্থপথে এলডিপি, জাতীয় প্রেসক্লাবে লেবার পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ(রেজা কিবরিয়া)ও সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ, ফকিরাপুল কালভার্ট রোডে গণঅধিকার পরিষদ (নূর), মালিবাগে এনডিএম, সেগুনবাগিচায় গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, বিজয় নগর শ্রমভবনের সামনে এবি পার্টি, বিজয়নগর পানি ট্যাংকের জনতার অধিকার পার্টি কালো পতাকা মিছিল করে।
গত ১২ জুলাই এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার পর এই পর্যন্ত বিএনপিসহ সমমনা জোটগুলো ঢাকায় পদযাত্রা, ঢাকায় মহাসমাবেশ, রাজধানীর প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচি, ঢাকাসহ মহানগরে গণমিছিলের কর্মসূচি করে। কলো পতাকা মিছিল একদফা আন্দোলনের পঞ্চম কর্মসূচি।