শেখ হাসিনার ৭৫ বছর পূর্ণ

“জাতির পিতার কন্যা হওয়া সত্ত্বেও তার চলার পথ কখনও কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না।”

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Sept 2022, 07:36 PM
Updated : 27 Sept 2022, 07:36 PM

জীবনের পঁচাত্তর বছর অতিক্রম করলেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা, যিনি নেতৃত্বগুণে নিজেকে ‘সেরা রাষ্ট্রনায়কের’ কাতারে স্থাপন করেছেন বলে রাষ্ট্রপ্রধানের ভাষ্য।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুননেছা মুজিবের প্রথম সন্তান শেখ হাসিনার জন্ম ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায়।

ছাত্রজীবনেই রাজনীতিতে হাতেখড়ি নেওয়া শেখ হাসিনা পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর বিপদসঙ্কুল পথ পাড়ি দিয়ে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন, এখনও দলের সভাপতির আসনে রয়েছেন তিনি।

জাতির পিতার মেয়ে হয়েও তার জীবন যে কঠিন ছিল, তা ফুটে উঠেছে তাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের দেওয়া বাণীতে।

তিনি বলেছেন, “জাতির পিতার কন্যা হওয়া সত্ত্বেও তার চলার পথ কখনও কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না।”

স্বাধীন দেশে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট পরিবারের সবাইকে হারিয়ে নির্বাসিত জীবন কাটাতে হয়েছে শেখ হাসিনাকে। দেশে ফেরার পরও ষড়যন্ত্র আর মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়েই চলতে হয়েছে তাকে।

রাষ্ট্রপতি বাণীতে বলেন, “২০০৪ সালের একুশে অগাস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলাসহ বহুবার তার উপর হামলা হয়েছে। মহান আল্লাহর অশেষ রহমতই প্রতিবার তাকে এসব বিপদ থেকে রক্ষা করেছে।”

২০০৯ সাল থেকে টানা এক যুগ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থেকে বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশের কাতারে নেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। এর মধ্যে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে, নানা ক্ষেত্রে দৃশ্যমান উন্নতি প্রশংসা কুড়াচ্ছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও।

সেই দিকটির উপর আলোকপাত করে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, “রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, গতিশীল নেতৃত্ব, মানবিক মূল্যবোধ দিয়ে শুধু দেশেই নন, বহির্বিশ্বেও তিনি অন্যতম সেরা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।”

রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনের কারণেই বেশ কয়েক বছর ধরে (মহামারীর মধ্যে গত বছর বাদ দিয়ে) জন্মদিনটি বিদেশেই কাটাতে হচ্ছে শেখ হাসিনাকে। এবারও তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে যোগ দিতে রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র সফরে। 

প্রিয় নেত্রীকে কাছে না পেলেও মঙ্গলবার তার জন্মের ৭৫তম বার্ষিকী নানা কর্মসূচিতে উদযাপনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা।

কেন্দ্রীয়ভাবে আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।

বাদ জোহর বায়তুল মোকাররমসহ সারা দেশের সকল মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, মন্দির গির্জা, প্যাগোডায় বিশেষ প্রার্থনার আয়োজনও রয়েছে।

এদিন আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ উপকমিটি শেখ হাসিনার জন্মস্থান টুঙ্গিপাড়ায় শতাধিক তালগাছ লাগানোর কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

সারা দেশে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের দিনটি উৎসবমুখরভাবে উদযাপনের আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

ছাত্রলীগ আনন্দ শোভাযাত্রার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুব মহিলা লীগসহ অন্য সহযোগী সংগঠনগুলোও একই ধরনের কর্মসূচি পালন করবে।

রাজনীতিবিদের ঘরে জন্ম নেওয়া শেখ হাসিনার বেড়ে ওঠা পুরোপুরি রাজনৈতিক আবহে। ষাটের দশকে ইডেন কলেজে ছাত্রলীগের কর্মী হিসাবে তার রাজনৈতিক অঙ্গনে পথচলার শুরু। ১৯৬৬-৬৭ সালে ইডেন কলেজের ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন তিনি। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় ছাত্রলীগের রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি নেওয়ার আগেই শেখ হাসিনার বিয়ে হয় পরমাণু বিজ্ঞানী এম ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে। তাদের দুই সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা হোসেন পুতুল।

১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট সেনাবাহিনীর একদল সদস্য যখন সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যা করে, তখন স্বামীর কর্মসূত্রে ইউরোপে ছিলেন শেখ হাসিনা। তার সঙ্গে থাকা ছোট বোন শেখ রেহানাও প্রাণে বেঁচে যান। ওয়াজেদ মিয়া তখন থাকতেন জার্মানিতে, ১৫ অগাস্ট তারা বেলজিয়ামে গিয়েছিলেন বেড়াতে।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ সময় দেশে ফিরতে পারেননি শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার অনুপস্থিতিতেই আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তাকে দলীয় সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। তারপর এখনও সেই পদে রয়েছেন তিনি।

আওয়ামী লীগ সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে দলের দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা।

সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নিজেকে পুরোপুরি নিয়োজিত করেন শেখ হাসিনা; যার ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালে পতন ঘটে এরশাদের, জয়ী হয় গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রাম।

১৯৯১ সালের নির্বাচনে গঠিত সংসদে প্রধান বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালনের পর ১৯৯৬ সালে প্রথম দেশের প্রধানমন্ত্রী হন শেখ হাসিনা। ২১ বছর পর ক্ষমতায় ফেরে আওয়ামী লীগ।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তিন-চতুর্থাংশ আসনে বিজয় অর্জনের মাধ্যমে ২০০৯ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন শেখ হাসিনা।

এরপর তার নেতৃত্বে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের ভোটে জেতে আওয়ামী লীগ। এখন টানা তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে তিনি।

নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার পথরেখা তৈরির কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, “আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছে। তার সাহসিকতা, বলিষ্ঠ পদক্ষেপ এবং যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ফলেই বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত পদ্মা সেতু আজ উত্তাল পদ্মার বুকে জাতির গৌরবের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তিনিই আমাদেরকে বিশ্ব দরবারে আত্মবিশ্বাসের সাথে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সাহস এনে দিয়েছেন।”

আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে ভূমিকা তুলে ধরে আবদুল হামিদ বলেন, “আন্তর্জাতিক রাজনীতিতেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদর্প বিচরণ দেশের সম্মান ও মর্যাদাকে অনন্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছে। মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত ও নির্যাতিত লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে দেশে আশ্রয় দিয়ে তিনি বিশ্বমানবতার ইতিহাসে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এজন্য তিনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ অভিধায় ভূষিত হয়েছেন।”

বৈশ্বিক সঙ্কটের প্রভাবের মধ্যেও বাংলাদেশের সচল থাকার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর গতিশীল নেতৃত্ব ও সঠিক সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশ এ বৈশ্বিক সঙ্কটও সাফল্যের সাথে মোকাবেলা করে যাচ্ছে।

“জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য তার অব্যাহত সংগ্রাম, নির্ভীক ও দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং গভীর দেশপ্রেম জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে স্বীকৃত। শেখ হাসিনা তার পিতার মতোই গণমানুষের নেতা। শেখ হাসিনার সুদক্ষ নেতৃত্বে আজ বাঙালি জাতি এগিয়ে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর আজীবন লালিত স্বপ্ন সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার পথে।”