সিটি নির্বাচনের প্রচারে নেমে সরকার সমর্থকদের কালো পতাকা ও লাঠি প্রদর্শনের প্রতিক্রিয়ায় খালেদা জিয়া ব্যালটেই এর জবাব দেওয়ার কথা বলেছেন।
Published : 19 Apr 2015, 05:28 PM
প্রচারের দ্বিতীয় দিন রোববার রাজধানীর উত্তরার বিভিন্ন স্থানে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের পক্ষে ভোট চেয়ে ফেরার পথে আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন সংগঠনের বাধার মুখে পড়েন বিএনপি চেয়ারপারসন।
এরপর বাড্ডার শাহজাদপুরে দিনের প্রচার শেষে খালেদা জিয়া বলেন, “বিভিন্ন জায়গায় বাধা দেওয়া হচ্ছে। কোনো বাধায় কাজ হবে না। গণজোয়ারে সব বাধা উড়ে যাবে।”
লাগাতার অবরোধে নাশকতার জন্য দায়ী করে খালেদা জিয়া যেখানে যাবেন, সেখানেই তাকে এ নিয়ে প্রশ্ন করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছেন।
রোববার সন্ধ্যায় উত্তরা হাউজ বিল্ডিংয়ের সামনে বাধার মুখে পড়ার আগে উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরে এবং পরে খিলক্ষেতে খালেদাকে কালো পতাকা দেখায় সরকার সমর্থকরা।
শাহজাদপুরে একজন দোকানিকে প্রচারপত্র দেওয়ার সময় তিনি বিষয়টি তুললে খালেদা হাসতে হাসতে বলেন, “এগুলো জনগণের জোয়ারে ভেসে গেছে।
“আমি যেখানেই যাচ্ছি, ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি, যা অতীতে কখনও আমি দেখিনি। আগামী ২৮ এপ্রিল তিন সিটিতেই ভোট বিপ্লব ঘটবে।”
সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, “সবাই সেনাবাহিনী মোতায়েন চায়। ক্ষমতাসীনরা ভোট চুরি করবে বলে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে চায় না।”
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী তাবিথের পক্ষে শনিবার গুলশান, বনানী, মহাখালী, বাড্ডা এলাকায় প্রচার চালিয়েছিলেন তিনি।
২৮ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রথম দিনে প্রচারে জনগণের ‘ব্যাপক সাড়া’ পাওয়ার পর রোববার বিকালে গুলশানের বাসা থেকে বেরিয়ে উত্তরায় নির্বাচনী প্রচারে বের হন খালেদা।
খালেদার গাড়িবহর যাওয়ার পথে উত্তরা তিন নম্বর সেক্টরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জড়ো হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনকে কালো পতাকা দেখান। তাদের মুখে স্লোগান ছিল- ‘ছি ছি খুনি খালেদা, লজ্জায় বাঁচি না’।
কালো পতাকা এড়িয়ে কয়েকশ’ গজ সামনে গিয়ে বিপণি বিতান সিবি প্লাজায় খালেদার গাড়িবহর পৌঁছলে সেখানে জড়ো থাকা বিএনপি নেতা-কর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে দলীয় প্রধানকে অভ্যর্থনা জানান।
বিধি-নিষেধের বেড়াজালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে প্রচার চালানোর সুযোগ না থাকলেও খালেদা তা পাচ্ছেন।
সিবি প্লাজায় বিভিন্ন দোকানে ঢুকে ক্রেতা-বিক্রেতাদের হাতে তাবিথের প্রচারপত্র তুলে দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, “আপনারা তাবিথকে ভোট দেবেন। আমরা নতুন প্রজন্মের প্রার্থী দিয়েছি।”
একজন নারী এসে তখন বলেন, “ম্যাডাম আমরা ভোট দেব, আমরাও পরিবর্তন চাই।”
সেখান থেকে বেরিয়ে খালেদা গাড়ি উঠে যান আমির কমপ্লেক্সে। সেখানে বিভিন্ন দোকানে ঘুরে তাবিথের পক্ষে ভোট চান তিনি। এরপর রাজউক কমার্শিয়াল কমপ্লেক্সের বিভিন্ন দোকানে গিয়ে ভোট চান খালেদা।
এ সময় কয়েকশ’ নেতা-কর্মী গাড়িবহরের সামনে মিছিল নিয়ে স্লোগান দিচ্ছিল- ‘খালেদা জিয়া এগিয়ে চল, আমরা আছি তোমার সাথে’।
প্রচারে খালেদার সঙ্গে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান। বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ও মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরীন সুলতানাও ছিলেন দলীয় প্রধানের সঙ্গে।
উত্তরায় প্রচার শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের গাড়িবহর হাউজ বিল্ডিংয়ে মোড় ঘোরার সময় সেখানে আগে থেকে জড়ো হওয়া আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ৬০/৭০ জন নেতা-কর্মী কালো পতাকা হাতে নিয়ে স্লোগান দিতে থাকে।
এক পর্যায়ে তারা খালেদার বহরের সামনে থাকা পুলিশের গাড়ির ওপর কালো পতাকাসহ লাঠি ছুড়ে মারেন। পুলিশ তৎপর হয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালালেও তারা সড়কে অবস্থান নিয়ে শ্লোগান দিতে খাকে।
ওই সময়ে বিএনপির কয়েকশ’ নেতা-কর্মী খালেদার গাড়ি ঘিরে রাখে। তার গাড়ির সামনে বেশ কয়েকটি মোটর সাইকেলও ছিল। তারা তারা দলীয় প্রধানের গাড়িটি সরকার সমর্থকদের রোষ থেকে বাঁচিয়ে মোড় ঘুরিয়ে বিমানবন্দরের দিকে নিয়ে আসে।
এরপর খিলক্ষেতেও কালো পতাকা প্রদর্শনের মুখে পড়েন বিএনপি চেয়ারপারসন। খিলক্ষেত হয়ে যমুনা ফিউচার পার্কে যান তিনি। সেখানে তাবিথের প্রচারপত্র বিলি করে আবার গাড়িতে উঠে যান শাহজাদপুরে সুবাস্তু নজরভ্যালি শপিং মলে।
রাত ৮টার দিকে সুবাস্তু নজরভ্যালিতে নেমে হেঁটে দোকানে গিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেন খালেদা।
এক দোকানে বিক্রেতা প্রশ্ন করেন- “ম্যাডাম, কেমন সাড়া পাচ্ছেন?” উত্তরে তিনি গণজোয়ারের কথা বলেন।
একজন নারীর হাতে তাবিথের প্রচারপত্র তুলে খালেদা বলেন, “২৮ এপ্রিল ভোটকেন্দ্রে যাবেন অবশ্যই। তাবিথকে ভোট দেবেন। তার মার্কা হচ্ছে বাস। সে ভালো ছেলে ও নতুন প্রজন্মের প্রার্থী।”
ঢাকা উত্তরে মেয়র প্রার্থী তাবিথ বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে।
লাগাতার অবরোধে কয়েক হাজার বাস পোড়ানোর দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদিনই এক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে বলেন, বাস পুড়িয়ে এখন বাস মার্কায় ভোট চাইছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
দ্বিতীয় দিনের প্রচার শেষে রাত পৌনে ৯টার গুলশানে নিজের বাসা ‘ফিরোজা’য় ফেরেন খালেদা জিয়া।