ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আভাস দেখে আবারও মেয়র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
Published : 19 Feb 2015, 03:40 PM
“ঢাকা সিটিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যেতে দেব না। আমি আছি, আমি থাকব। জেদ থেকে নয়, জনগণের পাশে থাকতে আছি,” বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক গোলটেবিলে বলেন তিনি।
নাগরিক ঐক্য আত্মপ্রকাশের আগে ২০১২ সালে তফসিল ঘোষণা হলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন মান্না। তবে ওই নির্বাচন হয়নি।
বামপন্থি ছাত্র সংগঠনের নেতা হিসেবে ডাকসুর দুই বারের নির্বাচিত ভিপি মান্না আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে সাংগঠনিক সম্পাদক হলেও ২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর ‘সংস্কারপন্থি’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে কর্মীদের রোষের মুখে পড়েছিলেন।
পরে আওয়ামী লীগের পদ হারিয়ে নাগরিক ঐক্য নামে সংগঠন গঠন করেন মান্না। ২০১২ সালে নির্বাচনের তোড়জোড়ের সময় ‘নাগরিক কমিটির’ প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন জাসদ-বাসদের সাবেক এই নেতা।
আট বছর ধরে ঝুলে থাকা ডিসিসি নির্বাচনের জট খোলার ক্ষেত্রে সীমানা জটিলতার অবসানকে ‘আলাদিনের চেরাগের’ সঙ্গে তুলনা করেন মান্না।
মেয়াদোত্তীর্ণ ডিসিসি নির্বাচন করার উদ্যোগ এ টি এম শামসুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন নিয়েও সফল না হওয়ার জন্য সরকারকেই দায়ী করেছিল।
এরপর ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ভেঙে উত্তর ও দক্ষিণে আলাদা নগর কর্তৃপক্ষ হয়। কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনও উদ্যোগ নিয়ে ক্ষান্ত দেয়।
এর মধ্যেই গত সোমবারের মন্ত্রিসভার বৈঠকে ডিসিসি নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আগ্রহের বিষয়টি গণমাধ্যমে আসে। ওই বৈঠকে সীমানা পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত গেজেট হয়ে গেছে ও ইসিতে পাঠানো হয়েছে বলেও প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হয়।
মান্না বলেন, “এক রাতের মধ্যে ঢাকা সিটির সীমানা বিতর্কও শেষ, ভোটের কথাও শুরু। এরকম আলাদিনের জাতীয় চেরাগ এক আলাদিনের দৈত্যের কাছে ছিল, আরেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে।”
মন্ত্রিসভার বৈঠকে ডিসিসি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে ব্যবসায়ী নেতা আনিসুল হকের নাম আসা নিয়েও প্রতিক্রিয়া জানান নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক।
“আমার বন্ধু আনিসুল হক এভাবে আওয়ামী লীগে নাম লেখাল? ও আওয়ামী লীগ করত না। আজ অদ্ভুত হচ্ছে, মন্ত্রিসভায় নেতার নাম ঘোষণা হচ্ছে। আচ্ছা, ঠিক আছে, আমার কোনো অসুবিধা নেই।”
গণমাধ্যমে সংবাদ এসেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে মেয়র হিসেবে আনিসুল হককে প্রার্থী করছে।
তোড়জোড় দেখে নিজের প্রার্থিতার কথা জানালেও এবারও স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে ভোট হওয়া নিয়ে সংশয়ী মান্না।
“আন্দোলন (২০ দলের) দমানোর নামে ভোটের আলোচনা হচ্ছে। এবার ভোটটা কী হবে? যদি এরকম হয়, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যেতে দেব না। ঢাকা সিটির ভোট জোর করে নিতে দেব না। দেখব এবং সতর্ক থাকব।”
৫ জানুয়ারির ভোটের সমালোচনাকারী মান্না জানান, “এটা (দশম সংসদ নির্বাচন) নির্বাচনের নামে ফোর টুয়েন্টিগিরি হয়েছে। বড় প্রতারণা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় সঙ্কট তৈরি হয়েছে।
বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য ৫ জানুয়ারির ওই নির্বাচনকে দায়ী করে এ থেকে উত্তরণে জাতীয় সংলাপ আয়োজনের জন্য সরকারকে আহ্বান জানান তিনি।
“দেরি করলে ওরা কথা বলার সময়ও পাবে না। আমাদের ১/১১ এর কুশীলব বলেন? কুশীলব তো আপনাদের ওখানে দাবা খেলছে। সংলাপ করবেন? করলে ভালো, তাড়াতাড়ি করেন। দেরি করলে টাইম পান কি না, সন্দেহ। ”
নাগরিক ছাত্রঐক্যের এই গোলটেবিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল, জেএসডি সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতনও বক্তব্য রাখেন।
গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন ও ‘উদ্বিগ্ন নাগরিকদের’ পক্ষে বিবৃতিদাতা শাহদীন মালিকের আসার কথা থাকলেও অনুপস্থিত ছিলেন তারা।