বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে ‘আজীবন বন্ধু’ স্বীকৃতি দিয়ে তার গায়েবানা জানাজা হয়েছে পাকিস্তানেও।
Published : 25 Oct 2014, 09:40 PM
যুদ্ধাপরাধীদের ‘গুরু’ গোলাম আযমের মৃত্যু
স্বাধীন বাংলায় কবর নিলেন স্বাধীনতাবিরোধীদের নেতা
স্বাধীনতার পর যে দেশের অস্তিত্ব মাটিতে মিশিয়ে দিতে সচেষ্ট ছিলেন এই যুদ্ধাপরাধী, শুক্রবার সে বাংলাদেশের মাটিতেই তাকে দেহ রাখতে হয়েছে।
একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের সাজাপ্রাপ্ত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযম ৯২ বছর বয়সে বৃহস্পতিবার মারা যান।শনিবার জানাজার পর ঢাকার মগবাজারে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।
বিকালে দাফনের আগে দুপুরে বায়তুল মোকাররম মসজিদে হয় জামায়াতের সাবেক আমিরের জানাজা। এতে দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের বাইরে রাজনৈতিক মিত্র বিএনপিসহ অন্য দলগুলোর গুটিকয়েক নেতাকেই দেখা গেছে।
প্রায় একই সময়ে পাকিস্তানের বিভিন্ন প্রদেশে গোলাম আযমের গায়েবানা জানাজা পড়েন সে দেশের জামায়াতের নেতা-কর্মীরা।
লাহোরে গোলাম আযমের গায়েবানা জানাজা পড়ান পাকিস্তান জামায়াতের আমির সিরাজুল হক।
জানাজার সময় সিরাজুল হক বলেন, “অধ্যাপক গোলাম আযমের শাহাদতে আমরা গর্ববোধ করি। ঢাকার কারাগারে নির্যাতনমূলক পরিবেশে গোলাম আযমের শাহাদত বরণের মাধ্যমে বাংলাদেশে ফেরাউন শেখ হাসিনা ওয়াজেদের সরকারের স্থায়ী পতনের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে গেছে।”
করাচিতে গায়েবানা জানাজায় ইমামতি করেন পাকিস্তান জামায়াতের সাবেক আমির সৈয়দ মোনাওয়ার হোসেন।
পাকিস্তান জামায়াতের অফিসিয়াল ফেইসবুক পাতায় এই সব জানাজার ছবি তোলা হয়েছে। তাদের ফেইসবুক পাতায় গোলাম আযম এবং যুদ্ধাপরাধে ফাঁসিতে ঝোলা আব্দুল কাদের মোল্লার পরিচিতিমূলক একাধিক পোস্টারও তোলা হয়, স্বাধীনতা আগে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা ও পরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাদের ‘ষড়যন্ত্রের’ স্বীকৃতিও দেওয়া হয়।
* গোলাম আযম ওআইসির বৈঠকে আলাদা দেশ (বাংলাদেশ) গঠনের বিরোধিতা করেন।
* পাকিস্তানকে সমর্থনের কারণে সাত বছর নির্বাসনে কাটান তিনি।
* গোলাম আযম ৭১ সালে ভারতীয় বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর বিরুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনীকে সর্বাত্মক দেন।
* হাসিনা ওয়াজেদের সরকার তাকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দেয়।
* ১৯৫৪ সালে জামায়াতে ইসলামিতে যোগ দেন গোলাম আযম।
* পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল হন তিনি।
* ১৯৬৯ সালে পূর্ব পাকিস্তান জামায়াতের আমির হন তিনি।
* তারা দেশের পূর্বাঞ্চলকে (পূর্ব পাকিস্তান) বিচ্ছিন্ন করার ভারতীয় ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেছেন।
* ৭১ সালের যুদ্ধে নিজ দেশ পাকিস্তানের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের ও পাকিস্তানি বাহিনীকে সমর্থন দেওয়ার অপরাধে শেখ হাসিনা ওয়াজেদের সরকার গত বছর ১২ ডিসেম্বর ৬৫ বছর বয়সে তাকে ফাঁসিতে ঝুলায়।
পাকিস্তানের রেলমন্ত্রী সাঈদ রফিকের একটি উদ্ধৃতি তুলে ধরে একটি পোস্টারে বলা হয়, “অধ্যাপক গোলাম আযমের অপরাধ ছিল পাকিস্তানের প্রতি ভালোবাসা।”
একাত্তরে গণহত্যা, ধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের পরিকল্পনাকারী হিসেবে গোলাম আযমকে ৯০ বছর কারাদণ্ড দিয়েছিল যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সেই সাজার এক বছর গড়াতেই বন্দি অবস্থায় মৃত্যু হয় ৯২ বছর বয়সী এই ব্যক্তির।
অপরাধ মৃত্যুদণ্ডসম উল্লেখ করেই বয়স ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে একাত্তরে জামায়াতের আমির গোলাম আযমকে কারাদণ্ড দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল।
তিনি দণ্ড ভোগ করছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে প্রিজন সেলে। ২০১২ সালে গ্রেপ্তারের পর বিচারের পুরোটা সময়ই বাংলাদেশের সবচেয়ে আধুনিক এই হাসপাতালে ছিলেন তিনি, সেখানেই বৃহস্পতিবার তার মৃত্যু হয়।