পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে ফেরেন গোলাম আযম

মুক্তিযুদ্ধের সাত বছর পর পাকিস্তানি নাগরিক হিসেবে পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশে ফেরেন গোলাম আযম, স্বাধীন বাংলাদেশের বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্রের অভিযোগ রয়েছে যার বিরুদ্ধে।

আশিক হোসেনবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 July 2013, 08:13 PM
Updated : 14 July 2013, 08:13 PM

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ১৯৭৮ সালের ১১ অগাস্ট দেশে ফেরেন গোলাম আযম। ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর গোলাম আযম পাকিস্তানে চলে যান।

স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের ১৮ এপ্রিল বাংলাদেশ সরকার গোলাম আযমের নাগরিকত্ব বাতিল করেছিল বলে জানান যুদ্ধাপরাধের বিচারের দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় শাহরিয়ার কবির।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আনা আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রে বলা হয়, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ১৯৭২ সালের প্রথমার্ধ্বে ‘পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি’ নামে একটি কমিটি গঠন করে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন জামায়াতে ইসলামীর এই নেতা।

এই কমিটির নেতা হিসেবে গোলাম আযম ১৯৭৩ সালের মার্চ মাসের আগ পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যসহ আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশ বিরোধী অবস্থান সৃষ্টির প্রয়াস চালান বলে অভিযোগ রয়েছে।

তখনকার বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭৩ সালে গোলাম আযম পাকিস্তান থেকে লন্ডন যান এবং সেখানে ‘পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার কমিটি’র মূল কার্যালয় স্থাপন করেন।  

সেখানে তিনি ‘সোনার বাংলাদেশ’ নামে একটি পত্রিকাও প্রকাশ করা শুরু করেন। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রচার (প্রপাগন্ডা) চালানোই এর মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

১৯৭৫ সালের মার্চ মাসে গোলাম আযম সৌদি আরবের বাদশাহ ফয়সালের সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশবিরোধী প্রচার চালানোর পাশাপাশি তহবিল সংগ্রহ করেন বলেও বিভিন্ন সংবাদপত্রের খবর।

সাপ্তাহিক বিচিত্রার ১৯৮৮ সালের এপ্রিল সংখ্যায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, গোলাম আযম অসুস্থ মাকে দেখার অজুহাতে বাংলাদেশে আসেন। পাকিস্তানি নাগরিক হিসেবে পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে তিনি আসেন।

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি শাহরিয়ার কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তিন মাসের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও তিনি ফিরে যাননি। এ নিয়ে সে সময় প্রচুর লেখালিখিও হয়েছিল।”

গোলাম আযমকে দেশে থাকতে দেয়ার বিরোধিতা তখন বিভিন্ন মহল থেকে উঠলেও তৎকালীন জিয়াউর রহমানের সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি বলে জানান তিনি।

“পরবর্তী সময়ে ১৯৯১ এ বিএনপি সংসদ নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরে সরকার গঠনের জন্য জামায়াতের সঙ্গে জোট বাঁধে। জামায়াত গোলাম আযমকে দলের প্রধান হিসেবে রাজনীতি করতে দেয়ার শর্তে বিএনপিকে সরকার গঠনের জন্য সমর্থন দেয়। এরপর ১৯৯১ সালের ১৯ ডিসেম্বর গোলাম আযমকে জামায়াতে ইসলামের আমির ঘোষণা করা হয়।”

একজন চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধী ও পাকিস্তানের নাগরিককে বাংলাদেশে রাজনীতিতে নিতে দেখে প্রচণ্ড প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিলম, তারই বহিপ্রকাশ ঘটে শহীদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি গঠনের মাধ্যমে। 

ওই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় দেশে এখন একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার চলছে।