‘পিয়াস সৎ শিক্ষাবিদ, শহীদ মিনারকে কলঙ্কিত করা হচ্ছে’

পিয়াস করিমের মরদেহ শহীদ মিনারে নেওয়ার বিরোধিতাকারীদের সমালোচনা করে বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেছেন, ক্ষমতাসীনরা রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারকে ‘কলঙ্কিত’ করছে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “দেশের সব প্রতিষ্ঠানকে সরকার শেষ করে দিয়েছে। সর্বশেষ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মতো পবিত্র স্থানকে তারা কলঙ্কিত করেছে। জাতির বিবেকবান শিক্ষাবিদ কেউ মারা গেলে এখানে নিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়ে থাকে।

“পিয়াস করীম একজন সৎ শিক্ষাবিদ ছিলেন। তিনি অকালে চলে গেছেন। তার লাশ শহীদ মিনারে নিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর ঘোষণা দিলে সরকারের লেজুড়বৃত্তি কিছু সংগঠন এর বিরুদ্ধে হুঙ্কার দিয়েছে। এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত।”

পিয়াস করিমের সঙ্গে আগে থেকে পরিচয় থাকার কথা তুলে ধরে বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, “আমি তাকে আগের থেকেই চিনি। তার বাবাকেও আমি চিনি। একাত্তর সালে পিয়াস করিমকে অনেক ছোট দেখেছি। ওই সময়ের ওই ছোট ছেলেটি নাকি রাজাকার ছিল বলে বলা হচ্ছে। ওইরকম বয়সে সে কীভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করবে? এভাবে তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।”

প্রয়াত এই অধ্যাপক ও টিভি আলোচকের মরদেহ শহীদ মিনারে নেওয়ার বিরোধিতাকারীদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, “কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের মতো পবিত্র অঙ্গনকে ক্ষমতাসীনরা আজ রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে অপবিত্র করার প্রচেষ্টা করছে। দেশের জনগণ ও বিবেকবান নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানাব, যারা এরকম কলঙ্কিত কাজ করছে, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সকলকে রুখে দাঁড়াতে হবে।”

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পিয়াস করিম গত সোমবার মারা যান। গণজাগরণ আন্দোলন এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিভিন্ন টেলিভিশন অনুষ্ঠানে তার বক্তব্য বিতর্কের সৃষ্টি করে।

এজন্য গণজাগরণ আন্দোলনকারীরা ‘যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষের’ ব্যক্তি হিসেবে তার মরদেহ শহীদ মিনারে নেওয়ার বিরোধিতা করে। পিয়াস করিমের লাশ বুধবার শহীদ মিনারে রাখার কথা বলা হলে সামাজিক যোগাযোগের ওয়েবসাইটগুলোতে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে; বিভিন্ন ছাত্র ও সাংস্কৃতিক সংগঠন তা প্রতিরোধের ঘোষণা দেয়।

এরইমধ্যে পিয়াসের মরদেহ শুক্রবার শহীদ মিনারে রাখতে তার পরিবারের পক্ষ থেকে আবেদন করা হয়। তবে আগেই অন্য একটি সংগঠনকে ওই দিন শহীদ মিনার ব্যবহারের অনুমতি দেয়ায় তাদের আবেদনে সাড়া দেওয়া যায়নি বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়।

এরপর বৃহস্পতিবার পিয়াস করিমের পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়,‘শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য’ পিয়াসের মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেয়ার পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছেন তারা।

ফাইল ছবি

আলোচনা সভায় সরকারের বিরুদ্ধে হামলা, মামলা দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানির অভিযোগ করেন রফিকুল ইসলাম মিয়া।

হজ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য মন্ত্রিসভা থেকে অপসারিত আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে অবিলম্বে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তার করে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করার দাবিও জানান তিনি।

জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে বিএনপির চিকিৎসক সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব)উদ্যোগে ‘দেশে মেডিকেল শিক্ষা ব্যবস্থা ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এম এ হাদী’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়। অধ্যাপক হাদীর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই সভার আয়োজন করা হয়।

ড্যাবের সহসভাপতি এম এ সালামের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমেদ, বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আবদুল মান্নান মিয়া, বিএমএ’র সাবেক মহাসচিব অধ্যাপক আবদুল হক, অধ্যাপক সিরাজউদ্দিন আহমেদ, ড্যাবের মহাসচিব এজেডএম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব রফিকুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।