হরতালে বোমাবাজি ও গাড়ি পোড়ানো নিয়ে সংসদে বিরোধী দলের তীব্র সমালোচনা করেছেন সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরা।
Published : 05 Nov 2013, 11:41 PM
এদের মধ্যে জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু দীর্ঘকাল থেকে চলে আসা এই রাজনৈতিক কর্মসূচিকে বর্তমান প্রেক্ষাপটে নিষিদ্ধের দাবি তুলেছেন।
নির্দলীয় সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের ৬০ ঘণ্টার হরতালে বোমাবাজি ও গাড়িতে দেয়া আগুনে মানুষ অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পর মঙ্গলবার সংসদে সরব হন মহাজোট সংসদ সদস্যরা।
হরতাল নিষিদ্ধে বেরসরকারি বিল আনার উদ্যোক্তা মুজিবুল হক বলেন, “হরতাল দেশের ১৬ কোটি মানুষ চায় না। তারা একে ত্যাজ্য করেছে।”
প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে তিনি বলেন, “হরতালের বিষয়ে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেই সময় এসেছে।
“হরতালকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এই সংসদে যে বিল আমি উত্থাপন করেছিলাম, তা জনস্বার্থে পাস করার দাবি জানাব।”
তার আগে বক্তব্যে হরতালের সমালোচনাকারী নেতাদের উদ্দেশে জাতীয় পার্টির এই সংসদ সদস্য বলেন, “আইন না করা হলে হরতালের বিরুদ্ধে কথা বলে কোনো লাভ হবে না।”
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন হরতালে বোমা হামলা এবং অগ্নিসংযোগের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন,“আমরা পাকিস্তান আমল থেকে শুরু করে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে হরতাল পালন করেছি। কিন্তু এই হরতাল যখন ডরতাল হয়ে যায়, তখন তা ফ্যাসিস্ট আচরণের প্রকাশ করে।”
এই ধরনের হরতালের মধ্য দিয়ে দেশকে অস্থিতিশীল করে প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিকে ক্ষমতায় আনার পাঁয়তারা চলছে দাবি করে এর বিরুদ্ধে স্বাধীনতার পক্ষের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমদ বিভিন্ন দৈনিকে হরতালের সময়ে অগ্নিসংযোগের প্রতিবেদন ও স্থিরচিত্র দেখিয়ে বলেন, “মাননীয় স্পিকার, দেশে কী চলছে?
“আমি মনে করেছিলাম, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব একজন দায়িত্ববান মানুষ। এখন (তিনি) একদিকে বোমা মারেন; আরেক দিকে সরকারের ওপর দোষ চাপান।”
“হরতাল দেয়ার যেমন অধিকার আছে, তা পালন না করার অধিকারও আছে,” বলেন প্রবীণ এই রাজনীতিক।
জাসদের মঈনুদ্দিন খান বাদল বিরোধী দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের বিস্তৃত ঘটানোর অভিযোগ তুলে তা প্রতিরোধের আহ্বান জানান।
‘সরকারের মেয়াদ সীমাবদ্ধ নয়’
বিরোধীদলীয় নেতার বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সংসদে বলেছেন, সংসদের মেয়াদ শেষ হলেও উত্তরসূরিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করা পর্যন্ত সরকারের মেয়াদ থাকে।
“সংসদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়। সরকারের মেয়াদ উত্তীর্ণ নেই। সরকার চিরন্তন। এক মুহূর্ত পর্যন্ত সরকারবিহীন থাকতে পারে না রাষ্ট্র।”
সাংবিধানিকভাবে আরেকটি নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর না করার পর্যন্ত মহাজোটের বর্তমান সরকারের বৈধতা থাকবে, বলেন সংবিধান প্রণয়ন কমিটির এই সদস্য।
বিএনপি চেয়ারপার্সন বর্তমান সরকারকে ‘অবৈধ’ বলে সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন বলেও দাবি করেন সুরঞ্জিত।
সংবিধানের ৫৬, ৫৭, ৭৭ ও ১২৩ অনুচ্ছেদ পর্যালোচনা করে বিরোধীদলীয় নেতার বক্তব্যের বিষয়ে স্পিকারের রুলিং দাবি করে তিনি বলেন, “এই সরকারকে অবৈধ ঘোষণার পর জাতিকে উদ্ধারের দায়িত্ব আপনার।”
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে এজন্য বিরোধী দলকে দায়ী করেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত।
“সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ করায় বিরোধী দলের রাজনীতি করার কোনো অধিকার নেই। আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান হিন্দুদের ওপর আক্রমণ করে টিকে থাকতে পারেনি। আপনিও (খালেদা জিয়া) পারবেন না।”