বিএনপির নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি নাকচ করে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, এই দাবি পূরণ হবে না। বরং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে তারা আলোচনায় প্রস্তুত।
Published : 04 May 2013, 02:23 PM
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দ্রুত শেষ করার দাবিতে শনিবার বিকালে উত্তরায় রবীন্দ্র সরণির পূর্ব প্রান্তে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক সমাবেশে নাসিম এ কথা বলেন।
সংলাপে বসতে প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবের দুদিন পর শনিবার বিকেলে মতিঝিলে ১৮ দলীয় জোটের সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি মেনে নিতে ৪৮ ঘণ্টা সময় বেঁধে দেন।
নাসিম বলেন, “জনগণ যে রায় দেবে, আমরা তা মেনে নেব। কিন্তু কেয়ারটেকার হবে না, হবে না, হবে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা কী হবে আসেন তা ঠিক করি।”
বক্তৃতার এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “শুনলাম উনি (খালেদা জিয়া) নাকি বলেছেন, দাবি মানতে হবে। কীসের দাবি? ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমরা হতে দেব না। তিন মাসের কথা বলে এসে দুই বছর ছিল।”
বিরোধীদলকে প্রধানমন্ত্রীর আহবানে সাড়া দিয়ে আলোচনায় অংশ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগের পতন ঘটানোর মতো রাজনৈতিক ক্ষমতা বাংলাদেশের কোনো রাজনৈতিক দলের নেই। নৈরাজ্য সৃষ্টি করে, অগ্নি সংযোগ করে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে কোনো দাবি আদায় করা যাবে না।”
হেফাজতে ইসলাম তাদের কর্মসূচি স্থগিত করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
একই আহবান জানিয়ে হেফাজতের ইসলামের উদ্দেশ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাসিম বলেন, “শান্তিপূর্ণ ভাবে কর্মসূচি করুন। না হলে, এমন অবস্থা হবে- বাটি চালান দিয়েও আপনাদের খুঁজে পাওয়া যাবে না। বাংলার মানুষ সবচেয়ে বড় মুসলামান। আপনাদেরকে বাংলার মানুষকে মুসলমান করতে হবে না।”
‘সাপকে বিশ্বাস করলেও আওয়ামী লীগকে বিশ্বাস করা যায় না’- খালেদা জিয়ার এই বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগের এই নীতি নির্ধারক বলেন, “আপনার বিশ্বাস আমাদের দরকার নেই। জনগণ বিশ্বাস করলেই আমরা খুশি।”
জামায়াতে ইসলামকে গোখরা সাপের সঙ্গে তুলনা করে নাসিম বলেন, “উনি সাপের ঝাপি মাথায় নিয়ে মতিঝিলে মিটিং করছেন। উনি হয়েছেন, বেদের মেয়ে জোসনা।”
আওয়ামী লীগের সময়ে জাতীয় সংসদের উপ-নির্বাচন থেকে শুরু করে স্থানীয় সরকার পর্যায়ে হয়ে যাওয়া প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “চট্টগ্রামের তিনবারে মেয়র মহীউদ্দিন সাহেব এক লাখ ভোটে হেরেছেন। আমরা মেনে নিয়েছি।”
আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে ‘ছোট জাতীয় নির্বাচন’ বলে অভিহিত করে নাসিম এই নির্বাচনে অংশ নিতে বিরোধীদলের প্রতি আহ্বান জানান।
যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় হেফাজতে ইসলাম কাজ করছে বলে অভিযোগ করেন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের শিরীন আখতার। তিনি বলেন, তারা ইসলামের হেফাজতে কাজ করছেন না। নারী নীতির কোথাও বলা নেই যে, সম্পত্তিতে নারী-পুরুষের সমান অধিকার। আমাদের পবিত্র ধর্মে যেভাবে সম্পত্তি বণ্টনের কথা বলা হয়েছে- নারীনীতিতে ঠিক সেই কথাটিই আছে।”
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন অভিযোগ করেন, বিএনপি নির্বাচন চায় না। তারা ক্ষমতা বদলে ‘বাইরের’ হস্তক্ষেপ চায়।
হেফাজতে ইসলামের প্রতি শান্তিপূর্ণ ভাবে তাদের কর্মসূচি পালনের আহবান জানিয়ে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, “দুই নম্বরি করলে আমরা রাজপথে থাকব।”
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী সাহারা খাতুন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ প্রমুখ।