রাঙামাটির বিলাইছড়ি এবং বান্দরবানের রোয়াংছড়ি থেকে ত্রিপুরা ও তঞ্চঙ্গ্যা জুমচাষিদের উচ্ছেদের প্রতিবাদ জানিয়ে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) সম্পর্কে মুখ খুলেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (পিসিজেএসএস)।
Published : 03 Jul 2022, 07:02 PM
পাহাড়িদের কাছে ‘বম পার্টি’ নামে পরিচিত কেএনএফ এই বছরের এপ্রিলের দিকে একটি হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দেয়।
এর আগে গত বছর ডিসেম্বরে ফেইসবুকে একটি পাতা খুলে সশস্ত্র এই দলটি জেএসএসের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতে শুরু করে।
তবে এসব নিয়ে নীরব ছিল জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা (সন্তু লারমা) নেতৃত্বাধীন জেএসএস।
সর্বশেষ গত ২১ জুন রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়নের সাইজাম পাড়ায় তিন ত্রিপুরা নিহতের ঘটনায় কেএনএফের জেএসএস বিরোধিতা তীব্রতা পায়।
কেএনএফের পক্ষ থেকে বলা হয়, সেটা ছিল জেএসএসের ‘সশস্ত্র’ দলের বিরুদ্ধে অভিযান।
সেখানে নিহত তিনজন নিরীহ ত্রিপুরা বলে প্রকাশ পাওয়ার পর কেএনএফ দাবি করে, জেএসএস দলের পলায়নপর সদস্যদের গুলিতে ওই তিনজন নিহত হন।
তার ১১ দিন পর রোববার জেএসএসের সহ তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমার নামে দেওয়া বিবৃতিতে ওই তিন খুনের জন্য কেএনএফকে দায়ী করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, “কেএনএফের হুমকি-ধমকিতে ভীতসন্ত্রস্ত তঞ্চঙ্গ্যা ও ত্রিপুরা পাড়াবাসীরা গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র গিয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিগত কয়েক মাস পূর্ব থেকে কেএনএফের সন্ত্রাসীরা গ্রামবাসীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী লুণ্ঠন করে আসছিল।”
বিলাইছড়ির বড়থলি ইউনিয়ন ছাড়াও বান্দরবানের রোয়াংছড়ি উপজেলার আলেক্ষ্যং ইউনিয়নের অন্তর্গত তঞ্চঙ্গ্যা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর ডজনখানেক গ্রামের শতাধিক জুমচাষি পরিবারকে কেএনএফ উচ্ছেদ করেছে বলে জেএসের দাবি।
“এখনও যারা ওই পাড়াগুলোতে রয়ে গেছে, তারা দ্রুত সরে না গেলে সাইজাম পাড়ার মতো গুলি করে হত্যা এবং ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে কেএনএফ।”
দলটির এই তৎপরতার বিরুদ্ধে সরকারের কোনো পদক্ষেপ না দেখে ক্ষোভ জানিয়েছে জেএসএস।
বিবৃতিতে বলা হয়, “অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, কেএনএফ সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক সাইজাম পাড়ার হত্যাকাণ্ডের দায় প্রকাশ্য স্বীকার এবং এরপর আবার ঘোষণা দিয়ে তঞ্চঙ্গ্যা ও ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর একের পর এক গ্রাম উচ্ছেদ করার পরও সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি, যা অত্যন্ত রহস্যজনকও বটে।”
বিবৃতিতে ভীতসন্ত্রস্ত তঞ্চঙ্গ্যা ও ত্রিপুরা গ্রামবাসীদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা দেওয়া এবং তাদেরকে নিজ নিজ গ্রামে পুনর্বাসন করা, সাইজাম পাড়ায় নিহত ও আহত পরিবারগুলোকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেওয়া এবং কেএনএফের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করা হয়।
জেএসএসের এই বিবৃতি সম্পর্কে কেএনএফের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
তাদের ফেইসবুক পাতায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে বার্তা পাঠিয়ে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। বক্তব্য জানতে চাওয়া হয়েছিল কেএনএফ প্রধান বলে প্রচারিত নাথান লনচেও বমের ফেইসবুক পাতায়ও। তিনিও কোনো সাড়া দেননি।