দণ্ডিত হাজী মো. সেলিম হাই কোর্টের নির্দেশনা মেনে বিচারিক আদালতে যাবেন জানালেও কবে যাবেন, তা নিশ্চিত করেননি তার আইনজীবী প্রাণ নাথ।
Published : 05 May 2022, 05:56 PM
এই আইনজীবী বৃহস্পতিবার বিকালে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, আগামী ২৪ মের মধ্যে কোনো একদিন আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন হাজী সেলিম।
দুর্নীতির মামলায় ১০ বছর সাজাপ্রাপ্ত ক্ষমতাসীন দলের এই সংসদ সদস্য তার বিতর্কিত বিদেশ সফর থেকে ফেরার পর তার আত্মসমর্পণ নিয়ে নানা খবর ছড়ায়।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানতে চাইলে হাজী সেলিমের ব্যক্তিগত সচিব মহিউদ্দিন মাহমুদ বেলাল বলেন, আইনজীবী যখন বলবেন, তখনই আত্মসমর্পণ হবে।
এরপর আইনজীবী প্রাণ নাথের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “নির্ধারিত তারিখ আগামী ২৪ মের মধ্যে যে কোনো একটি দিন তিনি ঢাকার ৭ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন।
“যেহেতু গত ২৫ এপ্রিল নিম্ন আদালতে হাই কোর্টের আদেশ এসেছে। সেখানে ৩০ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। সে কারণে আমরা আত্মসমর্পণের জন্য ৩০ দিন সময় পেয়েছি। একমাস শেষ হবে আগামী ২৫ তারিখে। যে কারণে ২৪ তারিখে অথবা এর মধ্যে আমরা সারেন্ডার করব।”
“টেলিভিশনে দেখাচ্ছে ১৬ মে তারিখে নাকি আত্মসমর্পণ করা হবে। তা ঠিক নয়। তারিখ এখনও ঠিক হয়নি। তারিখ ঠিক হলে আপনি জানতে পারবেন,” বলেন এই আইনজীবী।
দুপুরে হাজী সেলিম থাইল্যান্ড থেকে ফেরার পর থেকে তার সঙ্গেই ছিলেন বলে জানান প্রাণ নাথ।
বেলাল জানান, বেলা সোয়া ১২টায় থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে দেশে ফেরেন হাজী সেলিম। এয়ারপোর্ট থেকে উনি সরাসরি ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে খাজা দেওয়ান জামে মসজিদে গিয়ে একজন কর্মীর জানাজায় অংশ নেন। নেতাকর্মীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বাসায় ফিরবেন।
হাজী সেলিম চিকিৎসার জন্য বিদেশ গিয়েছিলেন বলে জানিয়েছিলেন বেলাল। ফেরার পর তিনি বলেন, “উনার শারীরিক অবস্থা এখন ভালো।”
দুর্নীতির মামলায় হাই কোর্টের রায়ে ১০ বছর দণ্ডিত হাজী সেলিম ঈদের পর বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করবেন বলে তার আইনজীবী আগে জানিয়েছিলেন।
তার মধ্যে ঈদের আগে গত শনিবার তিনি বিদেশ গেলে তার পালানোর গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। দুর্নীতি দমন কমিশনের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, সাজাপ্রাপ্ত হাজী সেলিমের বিদেশ যাওয়ার ‘আইনি কোনো সুযোগ নেই’।
অন্যদিকে দণ্ডিত খালেদা জিয়া যেখানে চিকিৎসার জন্য বিদেশ যাওয়ার অনুমতি পাচ্ছে না, তখন হাজী সেলিমের যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিএনপি নেতারা।
এনিয়ে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, হাজী সেলিমের বিদেশ যাওয়া ও ফিরে আসায় আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি।
দুদকের করা অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের যে মামলায় হাজী সেলিমের সাজা হয়েছে, সেটি দায়ের করা হয়েছিল ২০০৭ সালের ২৪ অক্টোবর, সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে জরুরি অবস্থার মধ্যে।
পরের বছর ২৭ এপ্রিল বিশেষ আদালত তাকে দুই ধারায় মোট ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেয়।
পাশাপাশি জ্ঞাত আয় সম্পদ অর্জনে সহযোগিতার অভিযোগে হাজী সেলিমের স্ত্রী গুলশান আরা বেগমকে দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় তিন বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
হাজী সেলিম এবং তার স্ত্রী ওই রায়ের বিরুদ্ধে হাই কোর্টে আপিল করলে ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি উচ্চ আদালত তাদের সাজা বাতিল করে রায় দেয়। দুদক তখন সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করে।
ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৫ সালের ১২ জানুয়ারি হাই কোর্টের রায় বাতিল হয়ে যায়। সেই সঙ্গে হাজী সেলিমের আপিল পুনরায় হাই কোর্টে শুনানির নির্দেশ দেয় আপিল বিভাগ।
সেই শুনানি শেষে গত বছরের ৯ মার্চ হাই কোর্ট বেঞ্চ একটি ধারায় হাজী সেলিমের ১০ বছরের সাজা বহাল রাখে এবং অন্য ধারায় ৩ বছরের সাজা থেকে তাকে অব্যাহতি দেয়।
আর আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় মারা যাওয়ায় বিচারিক আদালতের রায়ে দণ্ডিত হাজী সেলিমের স্ত্রী গুলশান আরা বেগমের আপিলটি বাতিল করা হয়।