সাবিনা আক্তার তুহিনকে যুব মহিলা লীগের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার পর আওয়ামী লীগের এই সহযোগী সংগঠনটিতে বিভেদ প্রকাশ্যে এসেছে।
Published : 11 Jan 2022, 11:22 PM
যুব মহিলা লীগের ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার সভাপতির পদে থাকা তুহিনকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ তুলে ওই পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় গত ৩০ ডিসেম্বর।
তবে কেন্দ্রীয় সভাপতি নাজমা আক্তারের একক স্বাক্ষরে দেওয়া এই অব্যাহতির চিঠি নিয়ে প্রশ্ন তুলে সাবেক সংসদ সদস্য তুহিন বলছেন, এই সিদ্ধান্ত তিনি মানেন না।
তুহিনকে নিয়ে সিদ্ধান্তে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অপু উকিলের সমর্থন নেই বলে সংগঠনটিতে আলোচনা রয়েছে। তবে অপু এ বিষয়ে মুখ খুলছেন না।
বাংলাদেশের বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে গত ১৬ ডিসেম্বর ধানমণ্ডিতে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে ফুল দেওয়া নিয়ে যুব মহিলা লীগের নেতা-কর্মীদের ধাক্কাধাক্কি এবং পরে মারামারির ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন আওয়ামী লীগ নেতারা।
পরদিন আওয়ামী লীগের বিজয় শোভাযাত্রার প্রস্তুতি সভায় ওই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এর পরপরই তুহিনকে প্রথমে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়। সেই নোটিসের জবাব তিনি না দেওয়ার পর সংগঠনের পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেন নাজমা।
কারণ দর্শানোর নোটিসে মারামারি ছাড়াও নরসিংদীর বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার সঙ্গে তুহিনের আগেকার সম্পর্কের কথাও উল্লেখ করা হয়, যা তখন অস্বীকার করেছিলেন তুহিন।
নোটিসে প্রথম কারণ হিসেবে ১৬ ডিসেম্বর শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় কেন্দ্রীয় সভাপতি নাজমা আক্তারসহ অনেককে ‘অপমান, নাজেহাল’ করার কথা উল্লেখ করা হয়।
দ্বিতীয় কারণ হিসেবে ২০১৭ সালে দায়িত্ব নেওয়ার সাড়ে চার বছরেও ঢাকা উত্তরে থানা, ওয়ার্ডে সম্মেলন না করে কমিটি গঠনে ব্যর্থতার কথা বলা হয়।
তৃতীয় কারণ হিসেবে বলা হয়, “আপনার বিরুদ্ধে পাপিয়াকে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ আছে। এর প্রকৃত ও গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা প্রদান করুন।”
চতুর্থ ও শেষ কারণে নাজমা ওয়ান-ইলেভেনের সময় শেখ হাসিনার মুক্তি আন্দোলনে অংশ না নিয়ে ‘পালিয়ে বেড়িয়েছেন’ বলে যে বক্তব্য তুহিন দিয়েছেন, তার ব্যাখ্যা চাওয়া হয়।
লিখিত জবাব ২২ ডিসেম্বরের মধ্যে দিতে বলা হয়েছিল তুহিনকে। কিন্তু তিনি তা দেননি। এরপর গত ৩০ ডিসেম্বর নাজমা স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতির পদ থেকে তুহিনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
তাতে বলা হয়, “সাত কার্যদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে জবাব দেওয়ার জন্য কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছিল তাকে। ওই চিঠি কুরিয়ার সার্ভিস, হোয়াটসঅ্যাপ ও ম্যাসেজের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছিল। সাত কার্যদিবস অতিবাহিত হওয়ার পরও কোনো উত্তর না পাওয়ায় গঠনতন্ত্রের ১১(খ) ও ১২(খ) ধারায় ঢাকা মহানগর উত্তর যুব মহিলা লীগের সভাপতির পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হল।”
এই সিদ্ধান্ত ‘নিয়মতান্ত্রিকভাবে’ নেওয়া হয়নি বলে দাবি করছেন তুহিন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। তিনি যখন বলবেন, তখনই আমি সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে বিরত থাকব, তার আগে নয়। আমি এই অব্যাহতি মানি না। সংগঠনের সভাপতি একক সিদ্ধান্তে অব্যাহতি দিতে পারে না।”
অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমার বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ দিয়েছে, এগুলোর কোনো প্রমাণ দিতে পারবে? ৩২ এ ফুল দিতে গেলে সবার সঙ্গে সবার ধাক্কাধাক্কি হয়। এটা অপরাধ হলে এখানে যারা আসছে, সবাই তো অপরাধী।”
ঢাকার মিরপুর এলাকার বাসিন্দা তুহিন অভিযোগ করেন, তিনি আগামীতে কেন্দ্রীয় পদে প্রার্থী হবেন, তাই তাকে ‘সাইজ’ করতে একতরফা এই পদক্ষেপ নিয়েছেন নাজমা।
“সভাপতি একা আমাকে শোকজ করেছে, সভাপতি একা কেন আমাকে ডাকবে? সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক মিলে শোকজ করবে, তখন আমি শোকজ কিংবা তাদের ডাকে সাড়া দেব। উনি কিসের মিটিং করেছে, যেখানে সাধারণ সম্পাদক নাই?”
কেন্দ্রীয় সভাপতি নাজমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা গঠনতন্ত্র মেনে সকলের সম্মতিক্রমে, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্দেশ বাস্তবায়ন করেছি। এখানে আমার একার কোনো বিষয় নেই।”
একক স্বাক্ষর দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “অব্যাহতি এবং শোকজের সময় আমাদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বাড়িতে ছিলেন। আমরা সম্মতি নিয়েছি।
“আর সাধারণ সম্পাদকের সম্মতি না থাকলে সে তো এই কথা কাউকে বলত, সেটা তো কাউকে বলেনি। তাছাড়া সংগঠনের সভাপতি হিসেবে গঠনতন্ত্রে সবার সম্মতিক্রমে একক স্বাক্ষর করার বিধান আছে। এটা আমরা এতদিন করিনি, এবার করতে হয়েছে।”
বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে কয়েকদিন ধরে অনেকবার কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অপু উকিলের মোবাইলে কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেনি।
২০০২ সালে প্রতিষ্ঠিত যুব মহিলা লীগের নেতৃত্বে দুই দশক ধরে আছেন নাজমা ও অপু উকিল। কয়েকবার সম্মেলন হলেও সভাপতি-সম্পাদক পদে পরিবর্তন আসেনি।
তুহিন যে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত মানছেন না, সে বিষয়ে বলা হলে নাজমা বলেন, “সে তো একটা চরম বেয়াদব। তার মানা না মানাতে কিছু যায় আসে না।
“শুধু কয়েকজন মেয়ে নিয়ে হাঁটলেই রাজনীতি হয় না, সংগঠনের শৃঙ্খলা মানতে হয়। এখানে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সিদ্ধান্ত আমি বাস্তবায়ন করেছি।”
যে বৈঠকে কেন্দ্রীয় নেতারা এই ঘটনায় ব্যবস্থা নিতে বলেছিলেন, সেই সভায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান ও সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম ছিলেন।
তবে এই বিষয়ে কথা বলতে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা কেউ কিছু বলতে চাননি।