নির্বাচনের আগে বিএনপির সঙ্গে যে জোট গড়েছিলেন, সেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এখন আর নেই বলে জানালেন গণফোরাম সভাপতি কামাল হোসেন। তবে এই জোটের পুনরায় সক্রিয় হওয়ার সম্ভাবনার কথাও বলেছেন তিনি।
Published : 13 Nov 2021, 06:45 PM
দীর্ঘদিন ধরে এই নিষ্ক্রিয় এই জোট নিয়ে বিএনপি কিংবা শরিক দলগুলোর অন্য নেতাদের স্পষ্ট বক্তব্য না আসার মধ্যে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে কামালকে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অস্তিত্ব রয়েছে কি না- প্রশ্নে গণফোরাম সভাপতি প্রথমে বলেন, “এটা নিয়ে আমরা বসব, আলোচনা করব এবং সিদ্ধান্ত নেব।”
পরক্ষণেই তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে এটার কোনো অস্তিত্ব নেই। কিন্তু একটি সম্ভাবনা তো আছে। আবার পুনঃজাগরণের সম্ভাবনা আছে। নতুন করে ঐক্যবদ্ধ কিছু একটা করার অবশ্যই সম্ভাবনা আছে।”
কোন্দলে জেরবার গণফোরামের যে কাউন্সিল আগামী ৪ ডিসেম্বর হওয়ার কথা ছিল, তা পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান কামাল।
“আমাদের দলের চৌঠা ডিসেম্বর যে সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল, সেটা জানুয়ারির শেষে হবে। আমরা সম্মেলন মুলববি করছি।”
দশম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গড়ে তোলা হয়। কামাল হোসেনকে সামনে রেখে গড়া সেই জোটে বিএনপি ও গণফোরাম ছাড়াও যোগ দিয়েছিল জাসদ-জেএসডি, কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ, নাগরিক ঐক্য।
ওই জোট থেকে গণফোরামের একজন সংসদ সদস্যও নির্বাচিত হয়। ভোটের পর কিছু দিন সক্রিয় থাকলেও ক্রমে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে ওই জোট। আব্দুল কাদের সিদ্দিকীও তার দল নিয়ে জোট ছেড়ে চলে যান।
পরবর্তী নির্বাচনের দুই বছর বাকি থাকতে বিএনপি এখন বড় রাজনৈতিক ঐক্য গড়ার দিকে মনোযোগী। এক্ষেত্রে জোট না হলেও অন্য দলগুলোর সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচিতেও তাদের আপত্তি নেই।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে সক্রিয় না হলেও বিএনপির মতোই নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিই সামনে আনছেন কামাল।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন আমরা দাবি করি। কেননা আমরা দেখেছি যে দলীয় নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হয় না।”
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি প্রত্যাখ্যান করেই চলছেন।
নির্দলীয় সরকার তো এখন সংবিধানে নেই- বিষয়টি তুলে ধরা হলে দেশের সংবিধান প্রণয়ন কমিটির নেতৃত্বে থাকা কামাল বলেন, “আমরা দাবি তুললে তারপর এটা আলোচনার মধ্যে আদায় করা যায়। প্রয়োজনে সংবিধান সংশোধন করা হবে। জনগণের দাবি উঠলে এটা হবে।”
এই অবস্থায় দাবি আদায়ে পরিকল্পনা কী- সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে গণফোরাম সভাপতি বলেন, “আপাতত তো দাবিটা সামনে আনি। কিভাবে আন্দোলন করব, সেটা আমরা পরে জানাব।”
সরকার দাবি না মানলে কী করবেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “দেশে সঙ্কট সৃষ্টি হবে। তারপর আন্দোলন হবে। দেশের মানুষ যদি এটা নিয়ে বিক্ষুব্ধ হয়, তাহলে জোরদার আন্দোলন হবে।”
এই দাবি আদায়ে কবে নাগাদ কঠোর অবস্থানে যাবেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আপনাদের প্রথমেই আমরা বললাম, আমরা এটা করব। এবং দ্বিতীয় হল আমরা বসে এটা পরিকল্পনা করব। এর পরে যখন ব্রিফ করব, সেগুলো বলতে পারব।”
নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন করার পক্ষেও অবস্থান জানান এক সময়ের আইনমন্ত্রী কামাল।
তিনি বলেন, “সার্চ কমিটিতে নিরপেক্ষ লোক না থাকলে সেটা নিরপেক্ষ হয় না। আমরা আইনের পক্ষে।”
‘নিরপেক্ষ’র ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “নিরপেক্ষ বলতে নিরপেক্ষ। যারা বুঝতে চান নিরপেক্ষ কী, সেটা তাদের বোঝানো প্রয়োজন হয় না।”
আইন হলেই কি নিরপেক্ষ ব্যক্তি পাওয়া সম্ভব- প্রশ্নে কামাল বলেন, “কিছুটা সম্ভব হবে। একেবারে যে আইনকে অমান্য করবে, তা নয়। তবে এটা ঠিক বলেছেন, আইন অমান্য করলে তো সেটা করা যায় না। উদ্দেশ্যে সৎ হতে হয়।”
ঢাকার বিজয়নগরে চু ওয়াং রেস্তোরাঁয় গণফোরামের এই সংবাদ সম্মেলনে ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদও জানানো হয়।
কামাল বলেন, “ডিজেলের দাম বাড়ানোর অজুহাতে যানবাহনে ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এবং এই অজুহাতে জিনিসপত্রের দাম বাড়ানো হয়েছে। আমরা মনে করি যে, এটা অনুচিৎ হয়েছে। কারণ ডিজেলের দাম বাড়ানোর জন্য এতগুলোর দাম বাড়ার কথা না।”