বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নতুন যে ৬৮ জনকে আনা হয়েছে, তার মধ্যেও বিতর্কিতরা রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
Published : 03 Feb 2021, 08:33 PM
কমিটি থেকে অব্যাহতি পাওয়া নেতাদের একাংশ বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেছে, নতুন পদ পাওয়া ৬৮ জনের মধ্যে ১৮ জনের বিরুদ্ধে সংগঠন বিরোধী কাজে লিপ্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিতর্কিতদের নাম উল্লেখ করেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে অব্যাহতি পাওয়া দপ্তর সম্পাদক আহসান হাবীব ও উপদপ্তর সম্পাদক মাহমুদ আবদুল্লাহ বিন মুন্সী।
তাদের দাবি, অব্যাহতি পাওয়া অন্যান্য নেতা এবং কেন্দ্রীয় কমিটির অনেক পদধারী নেতাও তাদের সমর্থন করছেন,কিন্তু নানা কারণে তারা প্রকাশ্যে আসতে পারছেন না।
সংবাদ সম্মেলন থেকে শিগগিরই ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি ঘোষণার দাবি জানানো হয়।
২০১৮ সালে ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় সম্মেলনে সভাপতি পদে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক পদে গোলাম রাব্বানী নির্বাচিত হন। তার ১০ মাস পর ২০১৯ সালের ১৩ মে ৩০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়।
পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া বিক্ষুব্ধ নেতারা সেদিন সন্ধ্যায় মধুর ক্যান্টিনে সংবাদ সম্মেলন করতে গেলে রেজওয়ানুল ও রাব্বানীর অনুসারীরা তাদের উপর হামলা চালিয়েছিল।
কমিটিতে থাকা বিতর্কিতদের বাদ দেওয়াসহ চার দফা দাবিতে কয়েক দফায় অবস্থান কর্মসূচি ও অনশন করেছিল তারা।
অভিযোগ ওঠেছিল, কমিটিতে রাখা হয়েছে হত্যাচেষ্টা মামলার আসামি, মাদকসেবী, বিএনপি-জামায়াত ও রাজাকার পরিবারের সন্তান, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত, সন্ত্রাস-চাঁদাবাজিতে যুক্ত, বিবাহিত, সংগঠনে নিষ্ক্রিয় এবং অছাত্রদের।
দুর্নীতি, চাঁদাবাজি, স্বজনপ্রীতিসহ নানা অভিযোগে পূর্ণাঙ্গ মেয়াদে দায়িত্ব পালনের আগেই ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করতে বাধ্য হন শোভন-রাব্বানী। তাদের পর ছাত্রলীগের দায়িত্ব পান আল নাহিয়ান খান ও লেখক ভট্টাচার্য।
ওই বছরের ২১ ডিসেম্বর ৩২ নেতা-নেত্রীকে কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ দেন আল নাহিয়ান ও লেখক। ওই ৩২ জনের মধ্যে ২১ জনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার কথা জানানো হয়েছিল। আর ১১ জন পদ থেকে অব্যাহতি নিতে নিজেরাই আবেদন করেছিলেন।
এর এক বছর এক মাসের বেশি সময় পর গত রোববার কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সেই ৩২ পদসহ শূন্য হওয়া মোট ৬৮টি পদ পূরণ করা হয়। এখন তা নিয়েও অভিযোগ উঠল।
সংবাদ সম্মেলনে আহসান হাবীব বলেন, “বিতর্কিত বলে আমাদের ছাত্রলীগের কমিটি থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বিচার-বিশ্লেষণের পর যে কমিটি করা হলো, সেখানে কী করে বিতর্কিত ব্যক্তিরা পদ পেলেন, তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়। তাহলে কি কোনো মহলের চাপে এটি করা হল?”
মাহমুদ আবদুল্লাহ বিন মুন্সী বলেন, "শূন্য পদে মাই ম্যানদের পদোন্নতি দিয়েছেন আল নাহিয়ান ও লেখক৷ এখন পর্যন্ত আমরা জানি না, ঠিক কী অভিযোগ বা অপরাধে আমাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। শূন্য পদে অসংখ্য বিতর্কিত ও গঠনতন্ত্রবহির্ভূত ব্যক্তিকে পদায়ন করা হয়েছে।
“নতুন করে বিতর্কিতদের পদায়নের মাধ্যমে ছাত্রলীগের ইতিহাসে ন্যক্কারজনক ও কলঙ্কজনক অধ্যায় সৃষ্টি করা হয়েছে। শুধু বিশেষ সিন্ডিকেটের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্যই এটি করা হয়েছে।"
নতুন পদপ্রাপ্তদের মধ্যে সহসভাপতিসহ বিভিন্ন পদে চাঁদাবাজ, মাদকাসক্ত, ঠিকাদার, বিবাহিত, মামলার আসামি, চাকরিজীবী, নারী নির্যাতনকারী রয়েছে বলে তাদের দাবি।
এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, “এগুলো সব ভিত্তিহীন। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তাদের বিষয়ে তদন্ত করে প্রমাণ পাওয়ার পরই শূন্য পদ পূরণ করা হয়েছে। যাদের পদ দেওয়া হয়েছে, সবকিছু যাচাই-বাছাই করে দেওয়া হয়েছে।”
“আর তারা সম্মেলনের ব্যাপারে যে দাবি জানিয়েছে, এটা শুধু নেত্রীর সিদ্ধান্ত। নেত্রী যেদিন বলবেন, সেদিনই সম্মেলন হবে,“ বলেন তিনি।