ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়েই বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের বীজ অংকুরিত হয়ে মহীরুহে পরিণত হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান নূর।
Published : 24 Jan 2021, 09:56 PM
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান স্মরণে পূর্বে ধারণকৃত ফেইসবুকে সম্প্রচারিত অনুষ্ঠান ‘উত্তাল ঊনসত্তরে’ স্বাগত বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
সাবেক সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, “ঊনসত্তরের ২৪ জানুয়ারি গণঅভ্যুত্থান দিবস জাতীয় জীবনে অনেক বড় ঘটনা বলে আমরা মনে করি। সেদিন কিশোর মতিউর, আরও অনেকের… এর আগে ২০ জানুয়ারি আসাদের আত্মদানের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ক্রমাগত শক্তিশালী হয়েছে- তার বীজটি মহীরুহে পরিণত হয়েছে।”
ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে শহীদের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তাদের ইতিহাস সঠিকভাবে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
১৯৬৯ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক শাসক আইয়ুব খানের পতনের দাবিতে তুঙ্গে উঠেছিল আন্দোলন। ১১ দফা দাবিতে ছাত্র সংগঠনগুলো ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে আন্দোলনে নামার পর তাদের ডাকে সাড়া দিয়েছিল সাধারণ মানুষ।
২০ জানুয়ারি ছাত্রনেতা আমানুল্লাহ মো. আসাদুজ্জামান (আসাদ) শহীদ হওয়ার পর আন্দোলন তীব্র হয়, রাজনৈতিক দলগুলোও জোট বাঁধে, আন্দোলনের চাপেই আইয়ুব খানের পতন ঘটে; শেখ মুজিবুর রহমানসহ রাজবন্দিরা মুক্তি পান।
মুক্তির পর পল্টনে জনসভায় ছাত্রসমাজের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধু উপাধি পান শেখ মুজিব, এরপর তার নেতৃত্বে স্বাধীনতার পথে এগিয়ে যায় বাংলাদেশ।
১৯৬৯ সালের ৪ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মেনন গ্রুপ), পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ ও পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (মতিয়া গ্রুপ)-এর নেতারা ‘সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম কমিটি’ গঠন করে এবং তাদের ১১ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করে।
১১ দফার মধ্যে ১৯৬৬ সালে শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন সম্পর্কিত ৬ দফার সাথে ছাত্র সমস্যাকেন্দ্রিক দাবি দাওয়ার পাশাপাশি কৃষক ও শ্রমিকদের স্বার্থ সংক্রান্ত দাবিগুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এসময় থেকেই শেখ মুজিবের মুক্তি ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহারের বিষয়টি প্রাধান্য পেতে শুরু করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসুসহ ছাত্র সংগ্রাম কমিটির পূর্ব বাংলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
গণআন্দোলনের উত্তাল সে সময়ে নিহত হন ছাত্র ইউনিয়নের অন্যতম নেতা আসাদউজ্জামান, নাখালপাড়ার গৃহবধূ আনোয়ারা বেগম, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত সার্জেন্ট জহুরুল হক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শামসুজ্জোহা।
সেদিনের স্মৃতিচারণ করেন সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক ও ডাকসুর তৎকালীন ভিপি তোফায়েল আহমেদ।
তিনি বলেন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান যদি না হত, তাহলে আমরা বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করতে পারতাম না। আর বঙ্গবন্ধু যদি মুক্ত না হতেন, তাহলে সত্তরের নির্বাচনে আমরা বিজয়ী হতাম না। আর সত্তরের নির্বাচনে যদি বিজয়ী না হতাম, তাহলে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে আমরা এ দেশকে স্বাধীন করতে পারতাম না।
“৯ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে পল্টনে স্লোগান দিয়েছিলাম, ‘শপথ নিলাম, শপথ নিলাম, মুজিব তোমায় মুক্ত করবই, ‘মা তোমাকে মুক্ত করবই’। দুটি আমরা বাস্তব করেছিলাম। একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর দেশকে আমরা হানাদার মুক্ত করেছিলাম।”
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অনুষ্ঠান সমন্বয়ক রফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানটি গান, কবিতা দিয়ে সাজানো হয়। অনুষ্ঠানে অধ্যাপক শামসুজ্জোহাকে একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়।