শুধু নির্বাচন কমিশনই নয়, সরকার পরিবর্তনে বৃহত্তর গণঐক্য তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
Published : 11 Jan 2021, 03:20 PM
সোমবার দুপুরে এক মানববন্ধন কর্মসূচিতে বিএনপি মহাসচিব এই আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “আজকে সকলকে আহ্বান জানাতে চাই যে, শুধু নির্বাচন কমিশন নয়। এই সরকার যারা জনগণকে হত্যা করেছেন, যারা মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছে, তাদেরকে সরে যাওয়ার জন্য আমরা বৃহত্তর গণঐক্য গঠন করি।
“বৃহত্তর গণঐক্যের ব্যাপারে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে, আসুন আমাদের নিজেদের অধিকার রক্ষা করার জন্য, আমার ভোটের অধিকার রক্ষা করার জন্য, আমার বেঁচে থাকার অধিকারকে রক্ষা করবার জন্য আমরা যেন অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সরকারকে সারানোর জন্য আন্দোলন শুরু করি।”
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আমরা এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে পরিষ্কারভাবে জানাতে চাই যে, প্রধান নির্বাচন কমিশনসহ কমিশনারগণ আপনাদের যদি ন্যূনতম কোনো লাজ-লজ্জ্বা থাক যেটা আপনাদের নাই, আজ পর্যন্ত দেখিনি। আপনাদের এখনই পদত্যাগ করা উচিত, এই মুহূর্তে পদত্যাগ করা উচিত। অন্যথায় এদেশের মানুষ তারা আপনাদেরকে সরে যেতে বাধ্য করবে।”
তিনি বলেন, এই নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে অযোগ্যতার কারণে। তাদের সেই অভিজ্ঞতা নেই যে, একটি সুষ্ঠু নির্বাচন তারা করবে। জাতীয় নির্বাচন গেছে। এখন স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো একইভাবে তারা লুট করে নিয়ে যাচ্ছে।
“আপনারা দেখেছেন গতকাল গাজীপুরের শ্রীপুরে কীভাবে আমাদের যারা নির্বাচন করছিলেন তাদেরকে নির্যাতন করা হয়েছে, নিপীড়ন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন কোনো কিছুই করতে পারে নাই। যখন সম্পূর্ণভাবে ভোট চুরি করে নিয়ে যায় তারপরে প্রধান নির্বাচন কমিশনার নুরুল হুদা (কেএম নুরুল হুদা) সাহেবকে জিজ্ঞাসা করলে উনি বলেন, ভোট সুষ্ঠু হয়েছে। এমন সুষ্ঠু হয়েছে যে তারপরে দেখা যায়, শতকরা ১০০ ভাগের বেশিও ভোট কোনো কোনো কেন্দ্রে পড়ে গেছে।”
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে মহানগর বিএনপির উদ্যোগে ‘পৌরসভা নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের ব্যর্থতার’ দায়ে কমিশনারদের সবার পদত্যাগের দাবিতে এই মানববন্ধন হয়। সারাদেশে জেলা ও মহানগরেও এই কর্মসূচি হচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এই সরকার অনির্বাচিত সরকার, ভোট ডাকাতির সরকার। খুব পরিস্কারভাবে বলতে চাই, এখনো সময় আছে পদত্যাগ করুন। মানে মানে চলে যান।
“তাহলে এদেশের মানুষের যে ইতিহাস, সেই ইতিহাসে এদেশের মানুষ অবশ্যই একদিন জাতীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হবে, সংঘবদ্ধ হবে এবং আপনাদের চলে যেতে বাধ্য করবে।”
দেশের পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মানুষ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ঘোষণার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করে তারা দেশকে স্বাধীন করেছিলেন এবং লক্ষ্য ছিল, আকাঙ্ক্ষা ছিল- দেশে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা। মানুষের আকাঙ্ক্ষা ছিল এদেশের মানুষ একটা মুক্ত সমাজে বাস করবে, যার যেটা মত আছে সেটা প্রকাশ করবে এবং তার মধ্য দিয়ে সত্যিকার অর্থে একটা বাংলাদেশ গড়ে উঠবে যেখানে মানুষ তাদের সমস্ত কথা বলতে পারবে, তাদেরকে বিকশিত করতে পারবে।
“দুর্ভাগ্য আমাদের আজকে আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সেই আকাঙ্ক্ষাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়ে দেশে একটা রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চলেছে। আপনাদের দেখেছেন, তাদের লোকেরা কীভাবে দুর্নীতি করছে, কীভাবে চুরি করছে। সমস্ত দেশটাতে তারা একটা লুটপাটের রাজত্ব তৈরি করে দিয়েছে।”
মহানগর বিএনপি দক্ষিনের সভাপতি হাবিব উন নবী খান সোহেলের সভাপতিত্বে ও দক্ষিনের কাজী আবুল বাশার ও উত্তরের আবদুল আলিম নকির পরিচালনায় মানববন্ধনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, নাজিম উদ্দিন আলম, মীর সরফত আলী সপু, আজিজুল বারী হেলাল, আবদুস সালাম আজাদ, মহানগর উত্তরের মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, যুব দলের সাইফুল ইসলাম নিরব, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, ছাত্র দলের ফজলুর রহমান খোকন বক্তব্য রাখেন।