আওয়ামী লীগ সাধরণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগ করেছেন রুহুল কবির রিজভী।
Published : 12 Dec 2020, 12:29 PM
অসুস্থতার কারণে দুই মাস চিকিৎসা শেষে শনিবার নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এসে সংবাদ সম্মেলন করেন বিএনপিরিএই জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব।
তিনি সরকারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপের অভিযোগ তোলার পাশাপাশি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পূর্ণ মুক্তির দাবি জানান।
রিজভী বলেন, “র্যাব-পুলিশ পরিবেষ্টিত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রতিনিয়ত একটি করে সংবাদ সম্মেলন করেন। আর এই সংবাদ সম্মেলনের একটাই বিষয় বিএনপির বিরুদ্ধে আজগুবি, কল্পিত সব মিথ্যাচার ও কুৎসা উদগীরণ করা।
“স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র অর্জনে বিএনপির যে অবদান আছে, সেটি আওয়ামী লীগের নেই। সেই অনুশোচনায় কাদের সাহেবরা ফ্যাসিবাদ কায়েম করে বিএনপি ও জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে নিশিদিন অশ্রাব্য মিথ্যাচারে লিপ্ত রয়েছে।”
“মিথ্যা বলতে বলতে সত্য ভুলে গেছেন তিনি। জনগণ তার কথা শুনলে টিভির চ্যানেল বদলে দেয়,” বলেন তিনি।
দলের চেয়ারপারসনের মুক্তি দাবি করে রিজভী বলেন, “বেগম খালেদা জিয়া্ এখন বাসায় থাকলেও প্রকৃতপক্ষে তিনি মুক্ত নন। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- উনার সাজা স্থগিত করা হয়েছে। সাজা স্থগিত হলে তো তার ওপর বিধিনিষেধ থাকার কথা নয়।
“সরকার দেশনেত্রীকে ভয় পায়। কারণ তিনি সম্পূর্ণ মুক্ত থাকলে সরকারের লাগামহীন লুটপাট-অপকর্মের বিপত্তি ঘটবে। সেজন্য তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। আমরা অবিলম্বে তার গৃহ অন্তরীণ অবস্থার অবসান চাই, সম্পূর্ণ মুক্তি চাই।”
বিএনপি নেতা বলেন, “এই সরকার নিশি রাতের একটি পার্লামেন্ট বানিয়েছে, তারা মনের মাধুরী মিশিয়ে পার্লামেন্টের বিরোধী দল বানিয়েছে। আদালত কিংবা নির্বাচন কমিশন সরকারের মাইক্রোফোন হিসেবে কাজ করছে।”
ক্ষমতাসীনদের হুঁশিয়ার করে তিনি বলেন, “জনগণের কাছে শাক দিয়ে মাছ ঢেকে লাভ হবে নেই। সরকার নিজের গর্ত নিজেই খুঁড়ছে। তারা বেশিদিন টিকে থাকবে না।
“পৃথিবীতে কোনো ফ্যাসিবাদ টিকে থাকেনি। এই নির্দয় ফ্যাসিবাদী সরকারও টিকবে না। জবরদস্তি করে জনগণের ঘাড়ে চেপে বসে থাকার দিন শেষ হবে অচিরেই।”
গত ১৩ অক্টোবর হৃদরোগে আক্রান্ত অসুস্থ হওয়ার পর রিজভীর হৃদযন্ত্রে এনজিওপ্লাস্টি করে স্টেনট পরানো হয়। সেজন্য দুই মাস পর কোনো সংবাদ সম্মেলনে এলেন তিনি।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোগমুক্তির জন্য দোয়া করায় দলের নেতা-কর্মীসহ দেশবাসীর কাছে কৃতৃজ্ঞতা প্রকাশ করেন রিজভী।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরফত আলী সপু, আবদুস সালাম আজাদ, সেলিমুজ্জামান সেলিম, এমএ খালেক, কাজী রফিক, মশিউর রহমান বিপ্লব, মহানগর বিএনপির কাজী আবুল বাশার, এবিএমএ রাজ্জাক, অঙ্গসংগঠন আবদুর রহিম, একেএম আবুল কালাম আজাদ, কাজী মনিরুজ্জামান মুনির উপস্থিত ছিলেন।
‘শেখানো বুলি আওড়াচ্ছেন কাদের’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ‘খাঁচার পাখির মতো শেখানো বুলি আওড়াচ্ছেন’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
শনিবার নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।
গয়েশ্বর বলেন, “আমরা সরকারের অনেক ফানুস দেখছি, তার দেমাগ দেখছি, তার কথার চোট দেখছি। ওবায়দুল কাদেরের খাঁচার পাখির মতো যেমন শেখানো বুলি প্রতিদিন দুপুরে বলতেই হয়।”
দেশটার অবস্থা খারাপ দাবি করে তিনি বলেন, “আমাদের দেশের মানুষ কিন্তু যতক্ষণ না এক কদম হাঁটতে পারে ততক্ষণ ডাক্তার দেখায় না। আর যখন ডাক্তার দেখায় তখন আর চিকিৎসা থাকে না। আমার মনে হয়, দেশটা সেই পর্যায়ে আছে।”
গয়েশ্বর বলেন, “প্রশাসন যন্ত্র এমন করা আছে যে ওরা টের পায় না এখনও। বিএনপির ওপর নির্যাতন করা্র ব্যাপারে ওদের শক্তির অভাব হয় না। ওদের ওপর আঘাত আসলে ওরা রক্ষা পাইবো না।”
দেশের মহামারী পরিস্থিতি বর্ণনা করে বিএনপি নেতা বলেন, “উনি (প্রধানমন্ত্রী) সব কয়টা জালানা খুলে দিয়েছেন। অর্থাৎ মানুষ এখন জীবন-জীবিকার জন্য জীবনযুদ্ধে রাস্তায় নেমেছে।
“একটি রাষ্ট্রে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার দুর্নীতি গল্প নয়, ঘটনা। প্রতিমুহূর্তে প্রত্যেকের কানে বাজায়। রিজার্ভ চুরি, ব্যাংকের টাকার চুরি, শেয়ারবাজার টাকা চুরি ২২ হাজার টাকার বালিশ আরও কত কিছু! শুনলে গা শিউরে উঠে। এসব অর্থ না লুট করলে আজকে মানুষদের যদি রাষ্ট্র খাদ্য নিরাপত্তা দিতে পারত, তাহলে এভাবে করোনায় ছুটাছুটি করত না।”
সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে গয়েশ্বর বলেন, “একবার সবাই বলেন, দেশের জন্য আমরা মরব। দেখবেন আমরা কেউ মরব না, আমরা সবাই বাঁচব। আর যদি একা একা বাঁচতে চাই, তাহলে সবাই মরব।
“১৮ কোটি মানুষকে মারার মতো এত গুলি সরকারের কাছে নাই। আমরা যদি মনে করি, দেশের জন্য মরব, সবাই বেঁচে থাকবে, দেশও থাকবে।”
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল ঢাকা মহানগর দক্ষিণের উদ্যোগে বিএনপি চেয়ারপারসন অসুস্থ খালেদা জিয়া ও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত বিএনপির স্থায়ী কমিটির মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। দোয়া পরিচালনা করেন ওলামা দলের আহ্বায়ক মাওলানা শাহ নেছারুল হক।
ঢাকা দক্ষিণ মহানগর শ্রমিক দলের সভাপতি কাজী মো. আমির খসরুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশারও বক্তব্য রাখেন।