দেশের পরিস্থিতি ‘অস্থিতিশীল করতে’ উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভাস্কর্য নিয়ে ‘বিরোধ ও বিতর্ক’ তৈরি করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
Published : 06 Dec 2020, 03:21 PM
তিনি বলেছেন, "এর পেছনে নিশ্চয় রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি আছে।"
রোববার ঢাকা থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় যুক্ত হয়ে এ বিষয়ে কথা বলেন ওবায়দুল কাদের।
বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোতে অজস্র ভাস্কর্য আছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, "এমনকি মসজিদ ও মাদ্রাসার সামনেও ভাস্কর্য আছে কোথাও কোথাও। সেখানে কোথাও কখনও প্রশ্ন ওঠেনি। সেখানকার ইসলামী চিন্তাবিদরা কখনো প্রশ্ন তোলেননি। বিশ্বের মুসলিম দেশের আলেমরা যেখানে দ্বিমত পোষণ করেননি, সেখানে বাংলাদেশে কেন এই ইস্যুতে বিভাজন সৃষ্টি করা হঠাৎ করে?
“উদ্দেশ্যমূলকভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা করা হচ্ছে।… সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর এই রাজনৈতিক দুরভিসন্ধির বিরুদ্ধে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।”
ইতিহাসের ‘মীমাংসিত বিষয়’ নিয়ে একটি উগ্র সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী দেশব্যাপী ধর্মীয় বিভেদ তৈরির অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, "এদেশ ও জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন স্বাধীনতার স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ভাস্কর্যের অবমাননা মানে আমাদের চেতনার মর্মমূলে আঘাত হানা।
"জাতির পিতার প্রতিকৃতি প্রদর্শন ও সংরক্ষণ সাংবিধানিকভাবেই বিধিবদ্ধ বিষয়। তাই বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের অবমাননা প্রকারান্তরে সংবিধানের অবমাননা।”
শুক্রবার রাতে কুষ্টিয়া পৌর শহরে জাতির পিতার একটি নির্মাণাধীন ভাস্কর্যে ভাঙচুর চালানোর প্রসঙ্গ টেনে ওবায়দুল কাদের বলেন, “কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের অবমাননা যারা করেছে, আমি বলতে চাই, স্পষ্টভাবে, যারা এই অপকর্ম করেছে, তারা ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ করেছে।
“সেখানে যারাই জড়িত থাক, তাদের ভিডিও আমাদের কাছে আছে। যারা জড়িত, তাদের শাস্তি পেতেই হবে।”
দেশের লাখ লাখ মানুষ এবং আওয়ামী লীগ কর্মীরা ওই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েছে জানিয়ে সরকারের সেতুমন্ত্রী কাদের বলেন, "তাদের হৃদয়ের আবেগ অনুধাবন করি। আওয়ামী লীগ গায়ে পড়ে আক্রমণ করে না, তবে আক্রমণের শিকার হলে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে এক বিন্দু পিছপা হয় না।”
যে ‘উগ্রবাদী গোষ্ঠী’ জাতির পিতার ভাস্কর্য ভেঙেছে, তাদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, “স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আপনারা অনেক করেছেন। এনাফ ইজ এনাফ। এবার থামুন। বঙ্গবন্ধু মানে এদেশের অস্তিত্ব, স্বাধীনতা, দেশ এবং আমাদের পবিত্র সংবিধান। বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের অবমাননা মানে এদশের মুক্তিযুদ্ধকে আক্রান্ত করা।”
কাদের বলেন, "আমরা আমাদের কর্মীদের এখনও নিয়ন্ত্রণে রেখেছি। আর বাড়াবাড়ি করলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কর্মীরা ঘরে বসে চুপ করে থাকবে না। মুসলিম, হিন্দু, খৃস্টান- সকলের মিলিত রক্তের স্রোতধারায় অর্জিত হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। এ স্বাধীনতা কোনো নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের স্বার্থের কাছে জিম্মি হতে তারা দেবে না।"
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে অর্ধ শতকের স্মৃতি বিজড়িত মধুদার ভাস্কর্য ভাংচুরের নিন্দা জানিয়ে কাদের বলেন, "ধৈর্য্যের একটা সীমা আছে, ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে দেবেন না। অহেতুক একটা মীমাংসিত বিষয় নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করতে যাবেন না।
"পবিত্র সংবিধান ও দেশের আইন পরিপন্থি কোনো ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য, মন্তব্য ও আচরণ বরদাস্ত করা হবে না।"
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ সভায় নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সকল কার্যক্রম নিয়েও কথা বলেন।
তিনি বলেন, “নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের দুই শীর্ষ নেতা দুই মেরুতে অবস্থান করায় সাময়িকভাবে তাদেরকে দলের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়, তবে তারা এখনও দলের নেতা।”
বহিরাগতদের বিষয়ে সতর্ক করে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ এখনও এতটা বিপদে পড়েনি যে যখন তখন যাকে তাকে দলে এনে দল ভারী করতে হবে।”
নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জিএম তালেব হোসেনের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ফারুক খান, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ হুমায়ুন, জেলার ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক পীরজাদা মোহাম্মদ আলী বর্ধিত সভায় উপস্থিত ছিলেন।