খালেদার প্যারোলে মুক্তির প্রশ্নে ‘আন্তরিক থাকবেন’ প্রধানমন্ত্রী

খালেদা জিয়া প্যারোলে মুক্তি চেয়ে আবেদন করলে ‘বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনার জন্য’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘আন্তরিক থাকবেন’ বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম।

ময়মনসিংহ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 Feb 2020, 03:48 PM
Updated : 25 March 2020, 04:54 AM

দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে দুই বছর ধরে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদার মুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর ‘মানবিকতা’ চেয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ফোন করার পরদিন একথা বললেন সরকারের এই মন্ত্রী।

শনিবার ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলা পরিষদের সম্প্রসারিত ভবন উদ্বোধন ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রীর ‘আন্তরিকতার’ পাশাপাশি এ বিষয়ে সাংবিধানিক সুযোগ ও সীমাবদ্ধতার বিষয়টিও মাথায় রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তাজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “বেগম জিয়া জেলখানায় আছেন, উনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। সংবিধানের দৃষ্টিতে সকল নাগরিক সমান সুযোগ পাবে, বেগম জিয়া যেহেতু একটি দলের প্রধান এবং উনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী তার ব্যাপারে রাষ্ট্র অত্যন্ত আন্তরিকভাবে সব বিষয় পর্যবেক্ষণ করছেন এবং তার জন্য কাজ করার জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ। এর অংশ হিসেবে উনি প্যারোলে মুক্তি চেয়েছেন, এ রকম কোনো আবেদন আসলে রাষ্ট্রের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

“যেটুকু সুযোগ আছে, সীমাবদ্ধতা এবং সুযোগ সবগুলাই আমার মনে হয় রাখবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রত্যেক নাগরিকের জন্য যেমনি আন্তরিক বেগম জিয়ার বেলায়ও সেখানে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার জন্য আন্তরিক থাকবেন। কিন্তু সংবিধান ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনার যত সুযোগ আছে সেই সুযোগের বেশি তো আর দেওয়া যায় না।”

প্রায় বছরখানেক কারা কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও তার শারীরিক অবস্থা ‘গুরুতর’ বলে স্বজন ও বিএনপি নেতাদের ভাষ্য।

৭৪ বছর খালেদা জিয়া আর্থ্রাইটিস ও ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন। তিনি এখন একা চলাচল করতে পারেন না, এমনকি সাহায্য ছাড়া খেতেও পারেন না বলে কয়েকদিন আগে তাকে হাসপাতালে দেখে এসে বোন সেলিমা ইসলাম জানিয়েছেন।

এভাবে চলতে থাকলে আর ‘বেশি দিন পর’ খালেদাকে জীবিত বাড়ি ফিরিয়ে নিতে পারবেন না বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

গত মাসেই খালেদাকে দেখে এসে তার মুক্তির জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে ‘বিশেষ আবেদন’ করার কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছিলেন সেলিমা ইসলাম। তবে গত সপ্তাহেই খালেদার সঙ্গে সাক্ষাতের দিনে স্বজনদের থেকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের উপাচার্যের বরাবর আবেদন করা হয়েছে, খালেদার মুক্তির বিষয়টি ‘মানবিক’ দিক থেকে বিবেচনার জন্য।

এরপর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান নেত্রীর মুক্তির বিষয়ে দলের পক্ষ থেকে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে জানালেও কীভাবে সেই যোগাযোগ তা খোলসা করেননি।

সরকারের মন্ত্রীরা বলে আসছেন, আদালতের রায়ে দণ্ডিত খালেদা জিয়ার জামিনে মুক্তির বিষয়টি পুরোপুরি আদালতের এখতিয়ার। সেখানে সরকারের ‘কিছু করার নেই’।

তবে জামিন চেয়ে খালেদার সর্বশেষ আবেদন সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে খারিজ হয়ে যাওয়ার পর আইনি পথে তার ‘মুক্তির সম্ভাবনা দেখছেন না’ বিএনপি নেতারা। দলীয় প্রধানের জামিন না হওয়ার পেছনে ক্ষমতাসীনদের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।

এরমধ্যে দলীয় সভা-সমাবেশে বিএনপি নেতারা আন্দোলনের মাধ্যমে দলীয় চেয়ারপারসনকে মুক্তি দিতে সরকারকে ‘বাধ্য করার’ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে তারা ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করায় খালেদার প্যারোলে মুক্তির আবেদনের আলোচনা রয়েছে বিভিন্ন মহলে।

তবে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো আবেদন করা হয়নি।

তিনি বলেছেন, “খালেদা জিয়া যদি প্যারোলে মুক্তির আবেদন করেন, কেবল তখনই সরকারের বিবেচনা করার সুযোগ থাকে।”

প্যারোল পেতে বিএনপি চেয়ারপারসনকে আবেদন করতে হবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবরে। এর আগে ২০১৮ সালেও একবার খালেদার প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে আলোচনা উঠলে তা ‘বিবেচনা করে দেখা হবে’ বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

“প্যারোল হচ্ছে তার অপরাধ ও শাস্তি মেনে নিয়ে মুক্তির আবেদন,” বলেছেন তথ্যমন্ত্রী।

 ভালুকায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত কাজ করার জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ।

“আমি মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর আমাদের চলমান কাজ করার চেষ্টা করছি। আমি ভালুকা এসেছি, এই এলাকার কিছু সমস্যার কথা তারা বলেছেন। এখানে স্থানীয় এমপি ও প্রশাসনের সহযোগিতায় কাজগুলো করব।”

এ সময় তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, ভালুকার সংসদ সদস্য কাজীম উদ্দিন আহমেদ ধনু, সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদিন খান তুহিন, সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য মনিরা সুলতানা মনি, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের মেয়র ইকরামুল হক টিটুসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা এবং জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা।