দল ছেড়ে যাওয়া সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিমল বিশ্বাস ও কংগ্রেস বর্জনের ঘোষণা দেওয়া ছয় নেতার বিষয়ে নভেম্বরের কংগ্রেসেই সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা।
Published : 30 Oct 2019, 12:54 PM
আগামী ২ নভেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠেয় দশম কংগ্রেসের বিষয়ে পার্টি কার্যালয়ে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
চীনপন্থি কয়েকটি কমিউনিস্ট পার্টি এক হয়ে ১৯৯২ সালে ওয়ার্কার্স পার্টি গঠনের পর তৃতীয় দফায় বড় ধরনের ভাঙনের মুখে রয়েছে দলটি, যার শুরু গত ২২ অক্টোবর পলিটব্যুরোর সদস্য ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিমল বিশ্বাসের পদত্যাগের মধ্যে দিয়ে।
পার্টির বর্তমান নেতৃত্বে বিরুদ্ধে আদর্শচ্যুতির অভিযোগ তুলে ওইদিন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে পদত্যাগপত্র দেন ৭৩ বছর বয়সী এই রাজনীতিক।
এর এক সপ্তাহের মাথায় নভেম্বরের কংগ্রেস বর্জনের ঘোষণা দেন কেন্দ্রীয় ছয় নেতা। এরা হলেন- পলিটব্যুরো সদস্য নুরুল হাসান ও ইকবাল কবির জাহিদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জাকির হোসেন হবি, মোফাজ্জেল হোসেন মঞ্জু, অনিল বিশ্বাস ও তুষার কান্তি দাস।
এই সাত নেতার বিষয়ে দল কি সিদ্ধান্ত নেবে তা জানতে চাইলে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, “আগামী ২ নভেম্বর পার্টির কংগ্রেস রয়েছে। এই কংগ্রেসে প্রায় আট শতাধিক প্রতিনিধি আসবেন, আমরা তাদের কথা শুনব। তারা সেই সাত নেতার বিষয়ে যে সিদ্ধান্ত দেবেন, আমরা তা শুনব।
“কংগ্রেসের পরে নির্বাচিত কেন্দ্রীয় কাউন্সিল সাত নেতার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে। প্রতিনিধিরা তাদের বহিষ্কার চাইলে করা হবে। তবে সাত নেতার সব্য পদ এখনও রয়েছে।”
বিমল বিশ্বাস দলের রাজনীতির যেসব বিষয়ে বিরূপ মনোভাব প্রকাশ করেছেন, তা ‘তার সময়েই নেওয়া হয়েছে’ বলে জানান বাদশা।
“বিমল বিশ্বাস, দুই বার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি যেসব বিষয়ের বিরোধিতা করছেন, তা তো তার সময়ে নেওয়া। এখন তিনি যা বলছেন, তা তো স্ববিরোধিতা।”
ওয়ার্কার্স পার্টি আদর্শ থেকে বিচ্যুত হযেছে, সাবেক নেতাদের এ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “আমরাই প্রকৃত আদর্শবাদী রাজনাতি করি। আমরা কখনও সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে আপস করব না, অগণতান্ত্রিক শক্তির কাছে মাথা নত করব না।”
দল থেকে বেরিয়ে গিয়ে যেসব নেতা এখন যে আদর্শের কথা বলছেন, তাকে ‘পুঁথিগত আদর্শ’ বলেন ফজলে হোসেন বাদশা।
তিনি বলেন, “তারা এখন যে আদর্শের কথা বলছেন, তা ষাটের দশকের। বাস্তবের আদর্শিক চর্চার সঙ্গে তার মিল নেই।”
কংগ্রেস বর্জনের ঘোষণা দেওয়া ৬ জন নেতার নতুন দল গঠন করার বিষয়ে তিনি বলেন, “তারা নতুন দল গঠন করতেই পারে।”
আগামী ২ নভেম্বর সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ওয়ার্কার্স পার্টির দশম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হবে। এবারের প্রতিপাদ্য “সামাজিক ন্যায্যতা-সমতা প্রতিষ্ঠাসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক জনগণতান্ত্রিক আধুনিক বাংলাদেশ গড়ে তোল’।
এবারের কংগ্রেসের আগে ওয়ার্কার্স পার্টির কার্যক্রম ৫৭টি জেলায় বিস্তৃত হয়েছে বলে জানান বাদশা।
এ কংগ্রেসে পার্টির গঠনতন্ত্রের পরিবর্তনের আভাসও দিয়েছেন সংবাদ সম্মেলনে। সম্মেলনে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করে প্রতিনিধিদের কাছ থেকে নেওয়া হবে মতামত বা রেজুলেশন।
“রেজুলেশনগুলো হবে দেশের মানুষের সংকট ও সমস্যা সম্পর্কে প্রস্তাব। আমরা চার দিনে প্রায় ৬টি প্রস্তাবনা পাব বলে আশা করছি।”
কংগ্রেস উপলক্ষে সব সদস্যদের মধ্যে থেকে আনুপাতিক হারে প্রতিনিধি নির্বাচন করা হয়েছে। কেবল তারাই এ কংগ্রেসে অংশ নিতে পারবে।
বাদশা জানান, এবার কেন্দ্রীয় কমিটি নির্বাচিত হবে দলের প্রতিনিধিদের গোপন ভোটের মাধ্যমে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি বলে পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের মন্তব্যের বিষয়েও কথা বলেন ফজলে হোসেন বাদশা।
তিনি বলেন, “অতিরঞ্জিত কিছু শব্দের ব্যবহার হয়েছে, এটা তো রাজনীতিবিদদের হতেই পারে। তাই বলে তো তার মতো নেতাকে বাতিল করে দেওয়া যায় না। এটা রাজনৈতিক সংস্কৃতি হতে পারে না।”
মেননের বক্তব্যের পর ১৪ দল যে সভা ডেকেছিল, তাতে মেনন না গেলেও গিয়েছিলেন ফজলে হোসেন বাদশা ও পলিটব্যুরোর সদস্যরা।
তবে আগামীতে ১৪ দলের সব সভাতেই মেনন উপস্থিত থাকবেন বলে নিশ্চিৎ করেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পলিটব্যুরো সদস্য কামরুল আহসান, আনিসুর রহমান মল্লিক, ওয়ার্কার্স পার্টির অর্থ বিভাগের সদস্য সচিব তপন দত্ত।