যে কোনো বিচারেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শ্রেষ্ঠ বাঙালি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম।
Published : 25 Aug 2019, 02:49 AM
শনিবার বিকেলে রাজধানীর অফিসার্স ক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশন আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন।
এইচ টি ইমাম বলেন, “যে কোনো বিচারেই হোক, যে কোনো আঙ্গিকেই হোক না কেন তিনি (বঙ্গবন্ধু) শ্রেষ্ঠ বাঙালি। বিবিসি সমীক্ষা করে কী বলল আর না বলল তাতে কিছু যায় আসে না। কারণ তিনি এমন কিছু করে গেছেন যেটি অন্য কেউ করেননি।
“তিনি একটি স্বাধীন, সার্বভৌম একটা রাষ্ট্র দিয়ে গেছেন। তিনি সত্যিকার অর্থেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের স্থপতি। একটি স্বাধীন দেশে কোথায় কী হবে বঙ্গবন্ধু সেটি ঠিক করেছেন। আজকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের যে চেহারা, যে আদল এই রাষ্ট্রের প্রত্যেকটি জিনিস আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, এমন কিছু নেই যা বঙ্গবন্ধু বলে যাননি। আমরা সেগুলো সম্প্রসারণ করছি, আরও সুন্দর করছি, আধুনিকায়ন করছি নতুন নতুন প্রযুক্তি দিয়ে।”
বাঙালি জাতির নিজস্ব কৃষ্টি, ঐতিহ্য, ভাষা, সাহিত্য সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে ধারণা পেয়েছেন দাবি করে প্রধানমন্ত্রীর এই উপদেষ্টা বলেন, “তিনি আমাদের মধ্যে একেবারে গেঁথে দিয়েছেন। সেই কারণে আমরা যখনই সচেতন হয়েছি, আমরা তো ভিন্ন ভাষাভাষী, ভিন্ন মানুষ, আলাদা জাতি। এই জাতিসত্তার যেই উন্মেষটা হল এটা বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব। সেখান থেকেই স্বাধীনতার চেতনাটা এসেছে।”
স্বাধীনতার পরাজিত শক্রুরা পরাজয় মেনে নিতে না পেরে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এইচ টি ইমাম বলেন, “আমি মনে করি, দুটো জিনিস আমাদের শক্রুরা সুপরিকল্পিতভাবে করেছে। একটি হল- পাকিস্তান থেকে ফেরত সেনা অফিসাররা, এরা এসেই এখানে এমন একটা বিভেদ সৃষ্টি করল মুক্তিবাহিনীর অফিসারদের মধ্যে। পরবর্তীকালে বেছে বেছে সমস্ত মুক্তিবাহিনীর অফিসারদের হত্যা করেছে। মুক্তিবাহিনীর সেনা কর্মকর্তারাই প্রাণ দিয়েছেন। এরা কেউ প্রাণ দেয়নি।
“পাকিস্তান থেকে যখন সবাই ফিরে আসছেন তখন সেনাবাহিনী সম্পর্কে আমাদের অনেক তথ্য ছিল। তাদের অনেকের ব্রেনওয়াশও পাকিস্তানিরা করেছিল। আমরা তখন বুদ্ধি করেছিলাম, এদের যেন না নেওয়া হয়।”
“জেনারেল জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তার ব্যাচ, কোর্সমেট যারা জেনারেল মোজাম্মেল, জেনারেল আবদুর রহমানসহ ৮-১০ জনের প্রত্যেককে ভালো ভালো জায়গায় বসিয়ে এমনভাবে সমস্ত জিনিসটাকে কুক্ষিগত করে ফেলল সেনাবাহিনীকে। এদেরই পৃষ্ঠপোষকতায় কর্নেল ফারুক, কর্নেল রশিদ এরা বেড়ে উঠেছিল। সেদিন রশিদ, ফারুকের ঢাকায় থাকার কথা না। তারা যে ঢাকায় এলো আমাদের সেনাপতিরা যারা ছিলেন কী করলেন, তারা জানতেন না? আমাদের মধ্যে তখন কীভাবে ঢুকে পড়েছিল এই ষড়যন্ত্রকারীরা? এই ষডযন্ত্র যারা করেছে তারা তো পাকিস্তানি। মুক্তিবাহিনীর হাতে চরম অপমানজনক যেই পরাজয় তারা সেটি ভালোভাবে মেনে নেয়নি।
“এই যে ষড়যন্ত্রের জাল বুনেছে সব পেছন খেকে পাকিস্তানিরা এবং তাদের সঙ্গী-সাথীরা ছিল বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তৎকালীন জামাত ইসলাম, নেজামে ইসলাম, মুসলিম লীগ এবং অতি বাম ও অথি ডানপন্থিরা সবাই মিলে ষড়যন্ত্র করেছে।”
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্টেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের মহাসচিব ও স্বাস্থ্যসচিব শেখ ইউসুফ হারুন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব ও বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সিনিয়র সহ-সভাপতি সাজ্জাদুল হাসানের সভাপতিত্বে সভায় মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।
এছাড়াও সভায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম, বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের সচিব মোহাম্মদ সাদিক আলোচনায় অংশ নেন।