একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলায় খালেদা জিয়ারও জড়িত থাকার যে কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাকে ‘নির্জলা মিথ্যাচার’ বলেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
Published : 22 Aug 2019, 09:52 PM
তিনি বলেছেন, “প্রধানমন্ত্রী ও তার কতিপয় নেতা-মন্ত্রী নির্জলা মিথ্যাচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার নিস্ফল চেষ্টা করছেন।
“আমরা বলতে চাই, এভাবে মিথ্যাচার আর অপপ্রচারের মাধ্যমে জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্য করা যাবে না। জাতীয়তাবাদী নেতাদের বিরুদ্ধে এহেন অলীক অপপ্রচার অতীতেও হয়েছে, কোনো কাজ হয়নি।”
বুধবার ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার বার্ষিকীতে এক আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন রিজভী।
বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় ২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট ঢাকায় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা হয়েছিল। তাতে ২৪ জন নিহত এবং অসংখ্য আহত হন।
ওই হামলার দায়ে আদালতের রায়ে দণ্ডিতদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী সালামপিন্টু, বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদও রয়েছেন।
বিএনপি অভিযোগ করে আসছে, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে তাদের নেতাদের ওই মামলায় জড়িয়েছে।
রিজভী বলেন, “২১ অগাস্টের বিচারাধীন মামলা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও নেতারা নির্বিঘ্নে ক্রমাগত এমন সব বক্তব্য রেখে যাচ্ছেন, এটা শুরু হওয়া থেকেই তারা করছেন। এই মামলার রায় এবং এই ঘটনায় কারা প্রকৃত দোষী- এটা বের না হওয়ার আগেই তারা বলে যাচ্ছিলেন বিএনপি এবং বিএনপির নেতারা জড়িত।
“তার অর্থ হচ্ছে যে, তারা আগে থেকেই রায় ঠিক করে রেখেছিল। এটা তাদের কথা-বার্তাতেই বোঝা যায়।”
এই মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত তারেক রহমানের সাজা বাড়ানোর আবেদন করা হবে বলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে রিজভী বলেন, “উনারা (সরকার) জোর করে ক্ষমতা ধরে রেখে সব কিছু করছেন, সব কিছুই উনাদের নিয়ন্ত্রণে। আইন, প্রশাসন, বিচার সব কিছুই ….”
আওয়ামী লীগ গ্রেনেড হামলার সুষ্ঠু বিচার না করে একে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করেছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপি নেতা।
“তার বড় প্রমাণ হলো- কথিত সম্পূরক চার্জশিটের নামে এই মামলায় তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতাদের জড়িয়ে ফরমায়েসী রায়ে সাজা দেওয়া, যা ছিল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, গভীর ষড়যন্ত্রমূলক ও দীর্ঘদিনের মাস্টারপ্ল্যানের ফসল।”
ওই হামলার নিন্দা জানিয়ে রিজভী বলেন, “২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড হামলায় হতাহতের ঘটনা মর্মস্পর্শী ও হৃদয়বিদারক। মিসেস আইভি রহমানসহ অনেক নারী-পুরুষের জীবননাশ ও আহত হওয়ার নৃশংস ঘটনায় আমরা তখনও নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছি, এখনও জানাই।”
ঘটনা ঘটলেই ওই সময়কার সরকারকে দায়ী করা করা যায় না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “নাইন ইলেভেনের জন্য কি রিপাবলিকান সরকার দায়ী ছিল, তখন তো বুশ প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ইউরোপের ফ্রান্স, জামার্নিতে জঙ্গি হামলা হয়েছে, সেখানে তো বিরোধী দল বলেনি যে, সরকারি দল জড়িত।
“২১ অগাস্টের জন্য যদি বিএনপি সরকার দায়ী হয়, তাহলে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের জন্য কেনো আওয়ামী লীগ সরকার দায়ী হবে না? কেন মুক্ত চিন্তার ব্লগার, যাজক-পুরোহিত-ইমাম-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-লালন-সাধকদের হত্যাকাণ্ডের জন্য আওয়ামী লীগ সরকার দায়ী হবে না? শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকাকালীনই তো যশোরের উদীচীর অনুষ্ঠানে, খুলনার কাদিয়ানী মসজিদে, ঢাকায় সিপিবির সমাবেশে, রমনায় ছায়ানটের অনুষ্ঠানে, গোপালগঞ্জের ক্যাথলিক গির্জায় বোমা হামলা হয়েছে। তাহলে এর দায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সরকারের উপর বর্তায় না?”
নয়া পল্টনে এই সংবাদ সম্মেলনে রিজভীর সঙ্গে ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নাজমুল হক নান্নু, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, আবদুল আউয়াল খান, আমিরুজ্জামান শিমুল।