পাবনার ঈশ্বরদীতে ২৫ বছর আগে শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে বোমা হামলা ও গুলির মামলায় রায় নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য আসছে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কাছ থেকে।
Published : 04 Jul 2019, 08:19 PM
বিএনপি মহাসচিব বলছেন, নিম্ন আদালতের এই রায় হয়েছে সরকারের হস্তক্ষেপে। অন্যদিকে তার জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলছেন, সাজা হলেই বিএনপি যে কোনো রায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।
পাবনার ঈশ্বরদীতে ১৯৯৪ সালে শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে বোমাহামলা ও গুলিবর্ষণ হয়েছিল। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় পাবনার আদালত বুধবার বিএনপির ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ২৫ জনকে যাবজ্জীবন, ১৩ জনকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেয়।
ওই রায় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে ফখরুল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে ড্যাবের এক সমাবেশে বলেন, “গতকাল পাবনার আদালতে যে রায় হয়েছে, এটাতে সমস্ত জাতি বিস্মিত হয়েছে। এটা কোন ধরনের রায়?
“দুটো গুলির শব্দ হয়েছে, গুলির শব্দটা কারা করেছেন, গুলি কে করেছে, সেটাও কনট্রোভারশিয়াল না। রেন্টু (মতিউর রহমান রেন্টু) তো ‘আমার ফাঁসি চাই’ বইয়ের মধ্যে বলেই গেছে যে, কারা গুলি করেছে।
“সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল ৯ জনকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ কী! ইটস এ ট্রায়ানি। জুডিশিয়াল এনার্কি চলছে দেশের মধ্যে।“
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা শুধু হতাশ নই, আমরা বিক্ষুব্ধ এই রায়ে। ওই রায় প্রমাণ করেছে যে, বাংলাদেশে বিচার ব্যবস্থার স্বাধীনতা নেই।”
এই রায়কে ‘ফরমায়েসি’ আখ্যায়িত করে তা বাতিলের দাবি জানিয়ে বুধবার রাতেই বিবৃতি দিয়েছিলেন ফখরুল।
তার বক্তব্যর প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, এটা বিএনপির চিরাচরিত অভ্যেস।
তিনি বলেন, “রায়টি দিয়েছে আদালত। রায় প্রত্যাহার করবেন কি না, আদালতই জানেন। এই রায়ে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ নেই।
“যখন বিএনপির লোকজন সাজাপ্রাপ্ত হয় তারা সব বিচারকে প্রহসনের বিচার বলে, বিচারের রায়ের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। তারা আদালতের রায় মানে না। এটা নতুন কোনো বিষয় নয়।”
কাদের বলেন, “রায় নিয়ে মির্জা ফখরুল যা বলেছেন, তা তাদের চিরাচরিত অভ্যাস, তারা সব সময় যে রকম বলে থাকে, সেই রকমই বলছে।”
প্রেস ক্লাবের সমাবেশে ফখরুল আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে একটা ‘ব্যর্থ রাষ্ট্রে’ পরিণত করতে চলেছে।
প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “প্রধানমন্ত্রী চীনে গেছেন- খুব ভালো কথা। কার দাওয়াতে গেছেন? একটা অর্থনৈতিক ফোরামের দাওয়াতে গেছেন, চীনের সরকারের দাওয়াতে যান নাই।
“আমরা খুব খুশি হতাম যদি দেখতাম যে, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি পুরোপুরি চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বসে ওটাকে প্রধান প্রায়োরিটি দিয়ে সেই কাজটি করছেন। অনেকগুলো চুক্তি সই হয়েছে দেখলাম। সেই চুক্তিগুলো হচ্ছে মেগা প্রজেক্ট চুক্তি, মেগা দুর্নীতি।”
বড় প্রকল্প দেশের প্রয়োজনের নেওয়া হচ্ছে না দাবি করে তিনি বলেন, “দেশের অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক কোনো প্রভাব পড়ছে না। আর কিছু পরে দেখবেন যে, এটা কলাপস করবে। ব্যাংকিং ব্যবস্থা তো একেবারে শেষ। চুরি করে, ডাকাতি করে তাদের লোকজনকে নিয়ে, ওটাকে আমাদের দেশি কথায় বলে ফোকলা করে দিয়েছে।”
বগুড়া উপ-নির্বাচনে ৪০ শতাংশ ভোটার ভোট দিতে যায়নি দাবি করে ফখরুল বলেন, “এদেশে নির্বাচন ব্যবস্থা বলতে আর কিছু নাই, কিচ্ছু নাই এবং ইসির ওপরে জনগণের আস্থাও কমে গেছে। জনগণ এখন আর ভোট দিতে যায় না।”
গণমাধ্যম ক্ষমতাসীনদের ‘পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে’ বলেও দাবি করেন তিনি।
দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “দেশনেত্রীকে এই সরকার ভয় পায়। এই নেত্রী যদি একবার বের হন, তাহলে যে গণতন্ত্রের বাঁশি তিনি বাজাতে শুরু করবেন, তাতে যে জনস্রোত বেরিয়ে আসবে, এটাকে রোধ করা সম্ভব হবে না।”