শেখ হাসিনার ট্রেনে গুলি: ৯ জনের মৃত্যুদণ্ড, ২৫ জনের যাবজ্জীবন

পাবনার ঈশ্বরদীতে ২৫ বছর আগে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে বোমা হামলা ও গুলির ঘটনায় বিএনপির ৯ নেতাকর্মীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত।

পাবনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 July 2019, 06:26 AM
Updated : 3 July 2019, 09:53 AM

এ মামলার ৫২ আসামির মধ্যে ২৫ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ১৩ জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। বাকি পাঁচ আসামি বিচার চলার মধ্যেই বিভিন্ন সময়ে মারা গেছেন।

পাবনার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতের বিচারক রোস্তম আলী বুধবার জনাকীর্ণ আদালতে এই রায় ঘোষণা করেন। 

সর্বোচ্চ সাজার রায় পাওয়া নয় আসামি হলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ঈশ্বরদী পৌরসভার সাবেক মেয়র মোকলেছুর রহমান, পাবনা জেলা বিএনপির মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক একেএম আকতারুজ্জামান আকতার, ঈশ্বরদী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া পিন্টু, ঈশ্বরদী পৌর যুবদলের সভাপতি মোস্তফা নূরে আলম শ্যামল, স্থানীয় বিএনপি নেতা মাহবুবুল রহমান পলাশ, রেজাউল করিম ওরফে শাহিন, শামছুল আলম, আজিজুর রহমান ভিপি শাহীন ও শহীদুল ইসলাম অটল।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এই নয়জনের মধ্যে জাকারিয়া পিন্টু পলাতক; বাকিরা সবাই রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

যাবজ্জীবনপ্রাপ্তরা হলেন- ইসলাম হোসেন জুয়েল, আলাউদ্দিন বিশ্বাস, আল আমিন, শিমু, আনিস শেখন, খোকন, নুরুল ইসলাম, আক্কেল আলী, সেলিম আহমেদ, মামুনুর রহমান, রবি, মামুন, তুহিন, এনাম, কল্লোল, কালা বাবু, লিটন, আবদুল্লাহ আল মামনু রিপন, লাইজু, আব্দুল জব্বার, আবুল কালাম, আব্দুল হাকিম টেনু, আলমগীর হোসেন, পায়েল ও পলাশ ।

এছাড়া আসামি তুহিন বিন ছিদ্দিক, দুলাল সরদার, ফজলুর রহমান, আব্দুল বারিক, আনোয়ার হোসেন জনি, রস্তম, মওলা, জামরুল, রাজু, বাবলু, বরকত, মুক্তা ও মুকুলকে দেওয়া হয়েছে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড।

রাষ্ট্রপক্ষে এ মামলায় শুনানি করেন পিপি আক্তারুজ্জামান মুক্তা। আসামিদের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী নুরুল ইসলাম গ্যাদা, মাসুদ খন্দকারসহ কয়েকজন।

রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মাসুদ খন্দকার বলেন, “এই রায় একটি প্রহসনের রায়। আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব।”

মামলার নথি থেকে জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রথম সরকারের সময় ১৯৯৪ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর ট্রেন মার্চ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর অংশ হিসেবে খুলনা থেকে ট্রেনে করে সৈয়দপুর যাওয়ার পথে ঈশ্বরদী স্টেশনে তার যাত্রাবিরতি ও পথসভা করার কথা ছিল।

ট্রেনটি ঈশ্বরদী স্টেশনে পৌঁছালে শেখ হাসিনার বগি লক্ষ্য করে গুলি ও বোমা ছোড়া হয়। তবে ওই ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যান আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

হামলার ঘটনায় রেল পুলিশের ওসি নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে সাত জনের নাম উল্লখ করে এবং আরও শতাধিক ব্যক্তিকে ‘অজ্ঞাত পরিচয়’ আসামি হিসেবে দেখিয়ে মামলা দায়ের করেন।  

কিন্তু তখনকার বিএনপি সরকারের সময়ে এ মামলার তদন্ত আটকে থাকে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে পুলিশকে পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়।

তদন্ত শেষে ঈশ্বরদীর বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীসহ ৫২ জনকে আসামি করে এ মামলায় অভিযোগপত্র দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ। পরে অভিযোগ গঠন করে আসামিদের বিচার শুরু করে আদালত।  

পুলিশ এ মামলায় মোট ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করলেও তাদের সবাইকে জামিন দিয়েছিল আদালত। গত ৩০ জুন মামলার সাক্ষ্য ও জেরা শেষ হলে বিচারক জামিন বাতিল করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। 

গত শতকের ‘৮০ এর দশকে এক জনসভায় শেখ হাসিনা (ছবি সংগৃহীত)

তাদের মধ্যে ঈশ্বরদী পৌরসভার সাবেক মেয়র মোখলেছুর রহমান বাবলু এবং বিএনপি নেতা আব্দুল হাকিম টেনু মঙ্গলবার আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। সেদিন রাতে আরেক আসামিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে।

দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে আদালত বুধবার আসামিদের সবাইকে দোষী সাব্যস্ত করে রায় ঘোষণা করেন। সাজা ঘোষণা হলে আদালতে উপস্থিত আসামিদের স্বজনদের কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায়। 

এ রায়কে কেন্দ্র করে সকাল থেকেই আদালত এলাকায় বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। বিএনপি নেতাকর্মী ও আসামিদের স্বজনরা তার মধ্যেই রায়ের প্রতিবাদে আদালত চত্বরে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা রায়ের পর আনন্দ মিছিল শুরু করলে আদালত প্রাঙ্গণে উত্তেজনা ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। আদালতে উপস্থিত লোকজন এ সময় আতঙ্কে ছুটোছুটি শুরু করে। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।