বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবগুলো বাঁকে ছাত্র সমাজের অগ্রণী ভূমিকার কেন্দ্রে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের নির্বাচন হচ্ছে দীর্ঘ ২৮ বছর পর।
Published : 10 Mar 2019, 10:05 PM
সোমবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলের কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ইতোমধ্যে ভোটগ্রহণের সব আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদের সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালে। এরপর কয়েক দফায় নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা আলোর মুখ দেখেনি।
এরপর নির্বাচন চেয়ে আদালতে রিট আবেদন হলে তার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে এই নির্বাচন আয়োজনের নির্দেশ আসে। তারপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ নেয়।
ভোটকেন্দ্র হলে স্থাপন নিয়ে ছাত্রদলসহ অধিকাংশ সংগঠন আপত্তি তুললেও তা উপেক্ষা করেই গত ২ ফেব্রুয়ারি তফসিল ঘোষণা করেন এই নির্বাচনের প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. এস এম মাহফুজুর রহমান।
ডাকসুতে ২৫ পদের বিপরীতে মোট প্রার্থী হয়েছেন ২২৯ জন এবং ১৮টি হল সংসদে ১৩টি করে ২৩৪টি পদে বিরপরীতে প্রার্থী আছেন ৫০৯ জন।
নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা ৪৩ হাজার ২৫৫ জন। তার মধ্যে ৫টি ছাত্রী হলের ভোট ১৬ হাজার ৩১২। ১৮টি হলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোটার ছাত্রীদের রোকেয়া হলে, মোট ৪ হাজার ৬০৮ জন।
চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকায় সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২১জন; তাদের সঙ্গে এই নির্বাচনে ১৪ জন লড়বেন সাধারণ সম্পাদক (জিএস) এবং ১৩ জন সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে।
১২টি প্যানেলের বাইরে ভিপি পদে ৯ জন এবং জিএস পদে ২ জন স্বতন্ত্র হিসাবে নির্বাচনে লড়বেন।
কেন্দ্রীয় ডাকসুতে পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিয়েছে ছাত্রলীগ, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাম সংগঠনগুলোর জোট, কোটা আন্দোলনকারীদের বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ, স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদ, স্বতন্ত্র জোট, জাসদ ছাত্রলীগ, ছাত্রলীগ-বিসিএল, ছাত্র মৈত্রী, ইশা ছাত্র আন্দোলন, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট ও ছাত্র সমাজ।
ক্ষমতাসীন ১৪ দলের ছাত্র সংগঠনগুলোর জোট ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ একই সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত তারা সে অবস্থানে থাকেনি। ছাত্রলীগ, জাসদ ছাত্রলীগ এবং বাংলাদেশ ছাত্র মৈত্রী আলাদা প্যানেল দিয়েছে।
ছাত্রলীগ থেকে ডাকসুর সহ-সভাপতি (ভিপি) পদে সংগঠনের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
অন্যদিকে ভিপি পদে সংগঠনের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক মোস্তাফিজুর রহমান, জিএস পদে জহুরুল হক হল শাখার যুগ্ম-আহবায়ক আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক এবং এজিএস পদে বঙ্গবন্ধু হল শাখার যুগ্ম-আহ্বায়ক খোরশেদ আলম সোহেলকে মনোনয়ন দিয়েছে ছাত্রদল।
বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর দুই মোর্চা প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ছাত্রঐক্যের ১১টি সংগঠন মিলে একটি প্যানেল দিয়েছে।
তাদের প্যানেলে ভিপি প্রার্থী হচ্ছেন ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী। জিএস প্রার্থী হচ্ছেন ছাত্র ফেডারেশনের একাংশের ফয়সাল মাহমুদ সুমন এবং এজিএস প্রার্থী হচ্ছেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের একাংশের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি সাদেকুল ইসলাম সাদিক।
শুরুতে ছাত্র ফেডারেশনের ঢাবি শাখার সভাপতি উম্মে হাবিবা বেনজীরকে জিএস প্রার্থী করা হলেও তার ছাত্রত্ব নিয়ে জটিলতায় ছাত্র ফেডারেশন (বদরুদ্দিন ওমর) ফয়সাল মাহমুদ সুমনকে বেছে নেয় বাম সংগঠনগুলো।
তবে শেষ পর্যন্ত ছাত্রত্ব টিকে যাওয়ায় ছাত্র ফেডারেশন থেকেই জিএস পদে প্রার্থিতায় আছেন বেনজীর।
কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বামদের জোটবদ্ধ প্যানেলের একটি গুঞ্জন শোনা গেলেও তা ফলেনি।
বাংলাদেশ সাধারণ শিক্ষার্থী অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের প্যানেলে ভিপি প্রার্থী হচ্ছেন এই প্ল্যাটফর্মের যুগ্ম-আহ্বায়ক নুরুল হক নূর। আরেক যুগ্ম-আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্সুরেন্স বিভাগের শিক্ষার্থী মুহাম্মদ রাশেদ খান জিএস এবং আরেক যুগ্ম-আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী ফারুক হাসান এজিএস পদে লড়বেন।
ছাত্র মৈত্রীর প্যানেলে সংগঠনের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রাসেল শেখকে ভিপি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সভাপতি সনম সিদ্দিকী শিতি জিএস এবং আরেক সহ-সভাপতি সানজীদা বারী এজিএস প্রার্থী হচ্ছেন।
জাসদ ছাত্রলীগের প্যানেলে রাকিবুল ইসলাম তুষারকে ভিপি, শাফিকা রহমান শৈলীকে জিএস, জহুরুল ইসলাম এজিএস প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ জাসদ সমর্থিত বাংলাদেশে ছাত্রলীগ-বিসিএলের প্যানেলে নাঈম হাসানকে ভিপি, শাহরিয়ার রহমান বিজয়কে জিএস এবং আশরাফুল আলম ফাহিমকে এজিএস প্রার্থী করা হয়েছে।
ভোট ঘিরে উৎসবমুখর প্রচারের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ উত্থাপন করে ছাত্রলীগ বাদে অন্য সব ছাত্র সংগঠন।
নির্বাচনের আগের দিন রোববারও ভোটের সময় বাড়ানো, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে ভোট নেওয়া এবং পোলিং এজেন্ট রাখাসহ সাত দফা দাবিতে উপাচার্য বরাবর একযোগে স্মারকলিপি দেন ছাত্রলীগ বাদে প্রায় সবগুলো প্যানেলের প্রার্থীরা।
তবে সেসব দাবির অভিযোগের দিকে দৃষ্টি না দিয়ে ভোটের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ভোটগ্রহণকে ঘিরে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ক্যাম্পাসে।
রোববার সন্ধ্যা সাতটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশ পথগুলোতে ব্যারিকেড দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবংনির্বাচনের দায়িত্ব পালনকারী সাংবাদিক ছাড়া অন্যদের প্রবেশাধিকার বন্ধ করে দেয় পুলিশ।
ভোটের দিন সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বহিরাগতদের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে বলে এর আগে জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।
রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রাব্বানী সাংবাদিকদের বলেন, “সব ধরনের প্রস্তুতি আমরা সম্পন্ন করেছি। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সহায়তা দিয়ে চারটি স্থানে মোতায়েন থাকবে পুলিশ।”
অধিকাংশ ছাত্র সংগঠনের দাবি উপেক্ষা করে রোববার স্টিলের তৈরি ব্যালট বাক্স হলে হলে পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ; যদি সংগঠনগুলো ভোটের দিন সকালে ব্যালট বাক্স পাঠানোর দাবি জানিয়েছিল।
আগে দিনে নানা দাবি, মানল না প্রশাসন
ভোটের আগের দিন প্রচার-প্রচারণা না থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করে বেশিরভাগ ছাত্র সংগঠন।
ছাত্রলীগের পক্ষে প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে ভোট গ্রহণের সময় ৪ ঘণ্টা বাড়ানো, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স স্থাপন এবং গণমাধ্যমের অবাধ প্রবেশাধিকাসহ ৭টি দাবিতে এক যোগে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেন অন্য প্রার্থীরা।
এ সময় ১১টি বাম সংগঠনের জোট ‘প্রগতিশীল ছাত্রঐক্য’, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’, স্বাধিকার স্বতন্ত্র জোট, ছাত্র ফেডারেশন ও স্বতন্ত্র জোটের প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
স্বাধিকার স্বতন্ত্র পরিষদের ভিপি প্রার্থী এ আর এম আসিফুর রহমান বলেন, “আমরা বলেছি, ভোটের সময় না বাড়ালে নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের মতামত প্রতিফলিত হবে না। স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স স্থাপন করতে হবে। নির্বাচন নিয়ে যাতে কোনো গুজব না ছড়িয়ে পড়ে সেজন্য গণমাধ্যমের অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।”
কিন্তু উপাচার্যের কথায় দাবি মানার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
নিয়ন্ত্রিত’ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের ‘প্রার্থী ও প্যানেলকে জেতাতে’ ভোট গ্রহণের দায়িত্বে থাকা প্রশাসন বিভিন্ন কৌশল নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী।
তিনি বলেন, “ছাত্রলীগের কোনো ব্যাপারেই নির্বাচন কমিশনের কোনো আপত্তি নেই। তারা একে অপরের সহায়ক শক্তি হিসাবে কাজ করছে বলেই আমাদের কাছে স্পষ্টভাবে ধরা দিচ্ছে।”
এই বক্তব্যের পক্ষে যুক্তি দিয়ে ভিপি প্রার্থী লিটন বলেন, “রোববার সকাল ৮টায় প্রচারণার সময় শেষ হয়েছে। কিন্তু আমরা এখনও দেখতে পাচ্ছি, ক্ষমতাসীনরা এখনও বিভিন্ন ক্লাস রুমে গিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছে।
“সুফিয়া কামাল হলের প্রভোস্ট নিজে দাঁড়িয়ে থেকে আমাদের প্যানেলের প্রার্থীদের পোস্টার সরিয়ে সেখানে ছাত্রলীগের পোস্টার টাঙিয়েছে। গতকাল (সোমবার) রাতে ১০টির বেশি ব্যানার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। স্টিলের ব্যালট বাক্স নিয়ে আরেকটি সংশয় তৈরি হয়েছে।”
সংবাদিকদের ওপর কড়াকড়ি উঠিয়ে সব ভোটকেন্দ্র থেকে সরাসরি প্রচারের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
লিটন বলেন, “প্রতিটি কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট রাখতে দিতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য সকাল ৭টা থেকে প্রতিটি রুটে ন্যূনতম ১০টি করে বাস দিতে হবে।”
নির্বাচন নিয়ে লিটনের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে ছাত্রলীগের এজিএস প্রার্থী সাদ্দাম হোসেন বলেন, “প্রশাসন যেভাবে ভালো মনে করবে সেভাবেই ভোট গ্রহণ করবে। এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কিছুই বলার নেই।”
ছাত্রদলের ’বহিরাগতদের উপস্থিতি’ নির্বাচনে বিশৃঙ্খলার একটা কারণ হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করে ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম বলেন, “আচরণবিধি লংঘন করে ছাত্রদল মহানগর থেকে সশস্ত্র ক্যাডাররা ক্যাম্পাসে এনে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তারা ডাকসু নিয়ে কথা বলার পরিবর্তে দণ্ডিত খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং পলাতক আসামি তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি উপজীব্য করেছে।”
ছাত্রদলের প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণায় শেষ মুহূর্তেও বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ডাকসুতে সংগঠনের ভিপি প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন পর্যন্ত একটা নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ বিরাজ করছে। শিক্ষার্থীরা তাদের মতামত প্রকাশ করার পরও ভোট গণনার সময় ইঞ্জিনিয়ারিং করে ফলাফল বদলে দেওয়া হতে পারে। এমন খবর আমরা শুনতে পাচ্ছি।
“ছাত্রলীগ ক্যাডাররা কেন্দ্রের ভেতরে জটলা সৃষ্টি করে রাখতে পরে। আর সাধারণ শিক্ষার্থীরা যাতে ভোট দিতে না পারে সেই পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে। আরেকটি পরিকল্পনা হচ্ছে- বাইরে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ দেখিয়েও গণনার সময় ফল পাল্টে দেবে।”
তবে ছাত্র সংগঠনের দাবির বিষয়ে কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান।
বিভিন্ন সংগঠনের প্রার্থীরা সংশয়ের কথা জানালেও এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন না হতে প্রার্থী ও ভোটারদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক আবদুল বাছির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ওএমআর ফর্মে ভোট নেওয়া, ব্যালট ভাঁজ না করা এবং স্টিলের বাক্সে ভোট নেওয়া আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতি। সকালে প্রার্থীদের সামনে ব্যালট বাক্স খুলে দেখানো হবে এবং তারপর সিলগালা করা হবে।”
ভোট গণনার সময়েও প্রার্থীরা থাকতে পারবেন জানিয়ে তিনি বলেন, “ডাকসুতে ২২৯ জন প্রার্থীর জন্য যদি একজন করেও এজেন্ট দেওয়া হয়, তাহলে ভোটকেন্দ্রের অবস্থা ঠিক রাখা সম্ভব হবে না। সে কারণে প্রার্থীরা ভোটিং শুরু ও গণনার সময় থাকার সুযোগ পাবে।”
অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের পরিবহনের ব্যবস্থা যথাযথ থাকবে বলে আশ্বাস দিয়ে এই রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, “শিক্ষার্থীদের আনার জন্য সকালে সবগুলো বাসই নির্ধারিত স্থানে পৌঁছে যাবে, অন্যান্য দিন যেসব জায়গায় যায়। এভাবে ট্রিপ চলতে থাকবে।”
ভোটগ্রহণ শেষে আবাসিক হলগুলোতেই ভোট গণনা করা হবে বলে জানান অধ্যাপক বাছির।
ভোট দিতে হবে যেভাবে
প্রার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় ডাকসু ও হল সংসদের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে অপটিক্যাল মার্ক রিকগনিশন (ওএমআর) ফর্মে।
মাস্টার দ্যা সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা ওএমআর ফর্মে ভোট নিচ্ছি। ডাকসু এবং হল সংসদের জন্য দুটি ব্যালটে প্রত্যেককে ভোট দিতে হবে।”
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “শিক্ষার্থীদের আইডি কার্ড দেখিয়ে নিজ নিজ ভোট কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। দুপুর ২টার মধ্যে যারা কেন্দ্রে প্রবেশ করবে তাদের সকলেরই ভোট গ্রহণ করা হবে।
“ভোটার নিজের আইডি কার্ড দেখিয়ে ব্যালট পেপার সংগ্রহ করে প্রার্থীর নামের ডানপাশে নির্ধারিত ঘরে ক্রস চিহ্ন দিয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবে।”
>> পরিচয়পত্র নিয়ে ভোট প্রদানের নির্ধারিত লাইনে দাঁড়াতে হবে। >> মোবাইল ফোনের সুইচ অফ রাখতে হবে। >> নিরাপত্তা আর্চওয়ে বা মেটাল ডিটেক্টরে যথাযথভাবে পরিচয় পত্র প্রদর্শন করতে হবে।
>> ভোটকেন্দ্রের ভেতরে নির্ধারিত টেবিলের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকের কাছে পরিচয়পত্র হস্তান্তর করতে হবে।
>> ভোটার তালিকার নামের পাশে স্বাক্ষর করে ব্যালট পেপার সংগ্রহ করতে হবে।
>> পাঞ্চ করা পরিচয়পত্র দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকের কাছ থেকে ফেরত নিতে হবে।
>> সুশৃঙ্খলভাবে ফাঁকা থাকা সাপেক্ষে বুথে ঢুকে ভোট দিতে হবে।
>> বুথে সরবরাহকৃত বলপেন দিয়ে নির্ধারিত স্থানে ক্রস চিহ্ন দিয়ে ভোট দিতে হবে। >> ব্যালট পেপার ভাঁজ করা যাবে না।
>> ভোট দেওয়ার পর ভোট পেপার ডাকসু ও হল সংসদ এর জন্য নির্ধারিত আলাদা ব্যালট বাক্সে ফেলতে হবে।
>> সবশেষে নির্ধারিত গেট দিয়ে ভোটকেন্দ্র থেকে বের হতে হবে। |
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ বুথ ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতার ব্যবস্থা রাখা হবে বলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
ভোট কেন্দ্রে মোবাইল ফোনসহ সব ধরনের ইলেট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “নির্বাচনের দিন গণমাধ্যম কর্মীরা চিফ রিটার্নিং অফিসার কর্তৃক ইস্যুকৃত পরিচয়পত্র দেখিয়ে সংশ্লিষ্ট হলের রিটার্নিং অফিসারের অনুমতি নিয়ে ভোট কেন্দ্রের গেস্টরুম বা নির্ধারিত স্থান পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারবেন।
“ভোট কেন্দ্র থেকে সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না। ভোটগ্রহণ কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হতে পারে এমন কোনো কাজ করা যাবে না।”